শিক্ষা

গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ার সমন্বয়হীনতা,দীর্ঘসূত্রতা শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়াকে আরো জটিল করছে

  প্রতিনিধি ১৯ মার্চ ২০২৩ , ১:০৫:৫২ প্রিন্ট সংস্করণ

ইবি প্রতিনিধি।।ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি কমাতে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা চালু করা হয়।এতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) দীর্ঘদিনের চিরায়ত ভর্তি প্রক্রিয়ার পরিবর্তে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়।তবে গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ার সমন্বয়হীনতা,দীর্ঘসূত্রতা শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়াকে আরো জটিল করেছে। এতে ভোগান্তির কামনোর থেকে আরও বেড়েছে।২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা এমনটাই জানিয়েছেন।তারা আগে যেভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে,সেভাবে পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলেছেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাইহান উদ্দিন বলেন,আমি বিজ্ঞান ইউনিটের শিক্ষার্থী হয়েও আমাকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়তে হচ্ছে।আমার প্রথম চয়েস ছিলো ফার্মেসি বিভাগ।আমার ইচ্ছাও ছিল এ বিভাগে অধ্যায়ন করার।কিন্তু সিরিয়ালে আমার পজিশন পেছনে থাকায় বাধ্য হয়ে আমাকে সাংবাদিকতা বিভাগে পড়তে হচ্ছে।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তামান্না তাসনিম তারিন বলেন,আমার ভর্তি হয়েছিলাম আগস্টের মাঝামাঝিতে।কিন্তু ভর্তি কার্যক্রম শেষ হতে প্রায় ছয় মাস লেগে গেছে।এতে দীর্ঘদিন মানসিকভাবে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।যেখানে বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পাঁচ থেকে ছয় মাস আমাদের থেকে এগিয়ে গেছে,সেখানে আমরা অনেক পিছিয়ে পড়েছি।এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি স্বতন্ত্রভাবে ভর্তি পরীক্ষা হয় শিক্ষার্থীদের একটু ভোগান্তি কম হবে,সঙ্গে ক্যারিয়ারের জন্যও ভালো হবে।

একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইমরান বলেন,২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা হয়েছিল।কিন্তু এখানে প্রচুর সমন্বয়হীনতা ছিল।আমি নিজে এখানে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি স্বতন্ত্রভাবে পরীক্ষা নেয় তাহলে সময় সাশ্রয়ের পাশাপাশি ভালো মানের ছাত্র খুঁজে পাবে।ফলে প্রত্যেক শিক্ষার্থী তার পছন্দের বিদ্যাপীঠ খুজে পাবে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সুমা পারভীন বলেন,সবচেয়ে ভোগান্তি যাওয়া আসা।এ ছাড়া একই সময়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়েছে।এদিকে মূল সনদপত্র এক প্রথমিক নির্বাচিত বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দিতে হয়েছে।পরে আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইগ্রেশনের পর সেখান পুনরায় আবেদন করে নিয়ে আসতে হয়েছে।সর্বোপরি চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।একদিকে অর্থের ক্ষতি,অন্যদিকে মানসিক চাপে থাকতে হয়েছে।এর থেকে আগের পদ্ধতি পরীক্ষায় ভালো ছিল।

এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পর্যাপ্ত ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। আসন ফাঁকা রেখেই বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়কে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হয়েছে।ফলে একদিকে ভর্তি আগেই সেশনজটে পড়ছে এবং মেধা এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সুনাম ও নিজস্বতা হারিয়েছে।ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষরাও গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হতে চেয়েছেন।

২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়েছিল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।তবে পরীক্ষার জটিলতা নিরসনের আশ্বাস দিয়ে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে আবারও নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে মতামত দেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।কিন্তু দেখা যায় এতে ভর্তি প্রক্রিয়ার জটিলতা,ভোগান্তি ও দীর্ঘসূত্রিতা আরো বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।এমনকি গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েও ফাঁকা আসন পুরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে কর্তৃপক্ষ।

ফলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইবি শিক্ষকরা।যার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আজ রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় নেবেন বলে একাডেমিক সূত্রে জানা গেছে।

ইবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার বলেন,আমরা ভার্চুয়ালি মিটিং করে নিজস্ব পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং হবে।সেখানে ভর্তি প্রক্রিয়াসহ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

ইবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড.জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন,একজন শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি হবে এটা কখনো চাই না।গুচ্ছের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভর্তি হচ্ছে কিনা সেটার বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে।এখনও পর্যন্ত আামাদের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছি।উপচার্য স্যারও শিক্ষকদের পক্ষে আছেন বলে জানিয়েছেন।

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান প্রফেসর ড. আহসান-উল-আম্বিয়া বলেন,গুচ্ছের সমন্বয়হীনতার কারণে জটিলতাগুলো তৈরি হয়েছে।যদি পরিকল্পনা করে সমানে আগাতো তাহলে এতো দীর্ঘ সময় লাগতো না।এ কারণেই শেষের দিকে এসে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের মতো করে করেছে।পরে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আসন ফাঁকা রেখে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন,যেহেতু শিক্ষকরা ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করবে।তাদের উপেক্ষা করে আমার একার সিদ্ধান্ত নিয়ে তো কোন কাজ হবে না।

আরও খবর

Sponsered content