অপরাধ-আইন-আদালত

খোলা চিনি ১২০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি ১২৫ টাকা বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ

  প্রতিনিধি ১২ মে ২০২৩ , ৬:০৭:০৩ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।বেশ কিছুদিন ধরেই চিনির বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।লাগামহীন চিনির বাজারের লাগাম ধরতে সরকার চিনির দাম বেঁধে দিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বাড়ায় দেশের বাজারে কেজি প্রতি চিনির দাম ১৬ টাকা বাড়িয়ে খোলা চিনি ১২০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি ১২৫ টাকা বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
তবে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে কোথাও চিনি বিক্রি হচ্ছে না।

খুচরা বাজারে খোলা চিনি ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হলেও প্যাকেট চিনি উধাও হয়ে গেছে।চিনি কিনতে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভোক্তা সাধারণ।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন,সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও এর প্রভাব পড়তে সময় লাগবে।পাইকারি বাজারে আজও বেশি দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে।বেশি দামে কিনে এনে কম দামে চিনি বিক্রি করার সুযোগ নেই বলেও জানিয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

পাইকারি বাজার থেকে বাড়তি দামে চিনি কিনতে হচ্ছে বলে জানালেন মিরপুরের খুচরা ব্যবসায়ী পাবনা জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী রেজাউল করিম বলেন,কচুক্ষেত বাজার থেকে আজও ৫০ কেজি চিনির বস্তা ছয় হাজার ৪০০ টাকা দিয়ে কিনে এনেছি।৫০ কেজি চিনি বিক্রি করলে এক কেজি চিনি ঘাটতি হয়।এর সঙ্গে গাড়ি ভাড়া তো রয়েছে। আমরা চিনি ১৪০ টাকা দরে বিক্রি করছে,আগের মতো বিক্রি নেই। তারপরও ক্রেতা ধরে রাখতে চিনি তুলেছি দোকানে।

দামের কারণে প্যাকেটজাত চিনি বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে,শুধু তাই নয় অস্থির বাজারে অনেক দোকানদার চিনি বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে করে চিনি কিনতে ক্রেতাদের অনেকটা বেগ পোহাতে হচ্ছে।

মিরপুরের শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা আকরাম হোসেন লেন, তিন দোকান ঘুরে চিনি কিনতে হলো।বাড়তি দামের কারণে চিনি বিক্রিতে ভাটা পড়েছে,অনেক দোকানদার চিনি বিক্রি করছেন না।বাজারে দাম কমার কোনো লক্ষণ দেখছি না। এভাবে চললে মানুষ বাঁচবে না বলেও তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

অস্বাভাবিক দর বাড়ার কারণে রমজান মাস থেকে চিনি বিক্রি করছেন না বলে জানালেন শেওড়াপাড়া আদ্রিতা জেনারেল স্টোরের মালিক মো. মিলন। তিনি বলেন,রমজান মাসের শেষ দিকে চিনি বিক্রি শেষ হয়ে গেলে নতুন করে আর দোকানে চিনি উঠাইনি।আমার বাসার জন্য বাজার থেকে ১৪০ টাকা দরে চিনি কিনে এনেছি। চিনির বাজারে স্থিতিশীল না হলে দোকানে চিনি তুলবো না।

সিন্ডিকেটের কারণে চিনির বাজারে অস্থিরতা চলছে।বাজারে নিয়মিতই বেড়ে চলেছে চিনি দাম,যা নিয়ন্ত্রণে সরকারের কঠোর তদারকি প্রয়োজন বলে জানালেন মিরপুর সেনপাড়ার বাসিন্দা হারুনুর রশীদ। তিনি বলেন,চিনির অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে আগে দুবেলা বাসার সদস্যদের নিয়ে চা পান করতাম। এখন সেটার ওপরেও নিয়ন্ত্রণ এনেছি।

এদিকে গত ১১ মে বাজারে চিনির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ বজায় রাখা,সাধারণ ভোক্তার কেনার ক্ষমতা ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ বিবেচনায় প্রতি কেজি পরিশোধিত চিনি (খোলা) মিলগেট মূল্য ১১৫ টাকা,পরিবেশক মূল্য ১১৭ টাকা ও খুচরা মূল্য ১২০ টাকা এবং প্রতি কেজি পরিশোধিত চিনি (প্যাকেট) মিলগেট ১১৯ টাকা,পরিবেশক মূল্য ১২১ টাকা ও খুচরা মূল্য ১২৫ টাকা নির্ধারণ করে বিক্রয় নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

অন্যদিকে,গত বৃহস্পতিবার (১১ মে) চিনির নির্ধারিত দামের অতিরিক্ত দামে বিক্রি হলেই আগামী সপ্তাহ থেকে সরকার অ্যাকশনে যাবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন,অনেক হিসাব-নিকাশ করে চিনির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ট্যারিফ কমিশন।বৈশ্বিক বাজার বিবেচনায় নিয়ে আমরা তো একটি মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছি।তবে সমস্যা হচ্ছে, আমরা খুব বেশি চাপ দিলে বাজার থেকে পণ্য সরে যায়। তখন একটা উভয় সংকটের মধ্যে পড়ে যাই।

গত ১৫-২০ দিনে বৈশ্বিক বাজারে চিনির দাম টনপ্রতি ৪৫-৫০ ডলার করে বেড়ে গেছে জানিয়ে টিপু মুনশি বলেন, আমাদের ৯৯ শতাংশ চিনি আমদানি করতে হয়।এসব কারণে বিদেশের ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা বেশি।বৈশ্বিক দাম বাড়লে আমাদের ওপর প্রভাব পড়বেই।আবার কিছু অসৎ ব্যবসায়ী সুবিধাও নেয়।সবকিছু বিবেচনা করেই আমরা চিনির একটি দাম নির্ধারণ করে দিয়েছি।এরপর বাজারে অতিরিক্ত দামে পণ্যটি বিক্রি হলে আগামী সপ্তাহ থেকেই অ্যাকশনে যাব।

চিনির দাম ঠিক করে দেওয়া হলেও বাজারে তার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমরা দেখি।দুদিন হলো দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। যদি সেভাবে বিক্রি না হয়,তবে আমাদের ভোক্তা অধিকার তো আছেই।

বাজার থেকে প্যাকেটজাত চিনি হাওয়া হয়ে গেছে, প্যাকেটজাত চিনি অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে।বেশ কিছুদিন ধরেই এমনটি দেখা হচ্ছে।এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন,বাজারে কি চলছে,সেটা বড় কথা না। ট্যারিফ কমিশন দেখে, কত দামে আমদানি করা হয়েছে, তার একটি গড় মূল্য নিয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়।তবে এতে ব্যবসায়ীরা সুযোগ নেয়। যেমন আজকে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।কিন্তু নতুন দামের চিনি আসার আগেই তারা সুযোগ নিয়ে ফেলে।

আরও খবর

Sponsered content