রাজনীতি

ক্ষমা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর মুরাদ হাসানের আবেদন

  প্রতিনিধি ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ , ৯:৫৫:৪০ প্রিন্ট সংস্করণ

জামালপুর প্রতিনিধি।।জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য মুরাদ হাসান প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমা চেয়ে আবেদনপত্র দিয়েছেন। আবেদনপত্রে তিনি দলীয় সব কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ চেয়েছেন।

বৃহস্পতিবার মুরাদ হাসান এই আবেদনপত্র আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডি কার্যালয়ে জমা দেন। আবেদনপত্রটি কার্যালয় থেকে গ্রহণ করা হয়েছে।

আবেদনপত্রে বিষয় হিসেবে লেখা হয়েছে ‘সাধারণ ক্ষমার জন্য আবেদন।

মুরাদ হাসান তাতে উল্লেখ করেছেন, আমি ডা. মুরাদ হাসান সংসদীয় আসন ১৪১, জামালপুর-৪ থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত সংসদ সদস্য। আমার বাবা মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত আইনজীবী মতিয়র রহমান তালুকদার। আমি জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর ওই পদ থেকে আমাকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।
আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে দৃঢ় প্রত্যয়ে অঙ্গীকার করছি,ভবিষ্যতে এমন কোনো কর্মকাণ্ড করব না, যার ফলে আপনার বিন্দুমাত্র সম্মানহানি হয়।

মুরাদ হাসান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আমন্ত্রণপত্র পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

আবেদনপত্রের শেষাংশে বলা হয়, অতএব বিনীত নিবেদন এই আমাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান করে বাধিত করবেন।

আবেদনপত্রের অনুলিপি কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি এবং বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরীকে দেওয়া হয়েছে।

মুরাদ হাসান এই আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পত্রের মাধ্যমে ক্ষমা চেয়েছি।আমার পত্র গ্রহণ করা হয়েছে।কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যেতে পত্র পেয়েছি।

এদিকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সংসদ সদস্য মুরাদ হাসানকে আমন্ত্রণপত্র দেওয়ায় সরিষাবাড়ীতে নেতা-কর্মীদের মধ্যে আনন্দ-উল্লাস বইছে।স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী ও শিক্ষক আবদুল জলিল বলেন,এমপিকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দাওয়াতপত্র দেওয়ায় আমরা খুশি হয়েছি।মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এমপি মুরাদ হাসানকে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের পদ ফিরিয়ে দিতে আমরা আরজি জানাচ্ছি।

২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মুরাদ হাসান তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। একই দিন জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা সম্পাদক দায়িত্ব থেকে তাঁকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।

প্রসঙ্গত, গত বছর (২০২১) এক চিত্রনায়িকার সঙ্গে ডা. মুরাদের অশালীন ফোনালাপ রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।এরপর জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনের এই সংসদ সদস্যকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।গত ৭ ডিসেম্বর তিনি পদত্যাগ করলে ওইদিন রাতেই তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

একইদিনে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের এক জরুরি সভায় মুরাদ হাসানকে জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।পরে মুরাদ হাসানকে তার নিজ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এরমধ্যে গত ৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে কানাডার উদ্দেশে দেশত্যাগ করেছিলেন তিনি। এরপর কানাডার টরন্টো পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছলেও তাকে সে দেশে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।সেখান থেকে তাকে দুবাইগামী একটি ফ্লাইটে তুলে দেওয়া হয়।কিন্তু দুবাইও তাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।উপায় না পেয়ে আবারো দেশে ফিরতে হয় তাকে।তিনি দেশে ফিরেছিলেন গত ১২ ডিসেম্বর। সেদিন (১২ ডিসেম্বর) বিকাল ৪টা ৫৫ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি।মুরাদ এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ইকে ৫৮৬ ফ্লাইটে দেশে ফিরেন।

বিমানবন্দরে নামার পর সাংবাদিকদের এড়াতে মুরাদ হাসান আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ব্যবহার না করে অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল দিয়ে বের হন। তিনি সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।

আরও খবর

Sponsered content