সারাদেশ

কুলাউড়ায় জঙ্গি সন্দেহে ১৭ জনকে আটক করেছেন এলাকাবাসী

  প্রতিনিধি ১৪ আগস্ট ২০২৩ , ৩:১৮:২১ প্রিন্ট সংস্করণ

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি।।মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় নতুন জঙ্গি সংগঠন ইমাম মাহমুদে কাফেলার সদস্য সন্দেহে ১৭ জনকে আটক করে পুলিশে খবর দিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

কুলাউড়ার কর্মদা ইউনিয়নের আছকরাবাদ সিএনজি স্ট্যান্ড এলাকা থেকে সোমবার সকাল ১০টার পর তাদের আটক করে স্থানীয় বাসিন্দারা।

তাদের ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে পুলিশ পাহারায় আটক রাখা হয়েছে বলে ইউপির চেয়ারম্যান মুহিবুল ইসলাম আজাদ জানিয়েছেন।

তিনি বলেন,১৭ জনের ওই দলটি আছকরাবাদ সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে কুলাউড়ার দিকে যেতে চাইছিল।অটোরিকশা চালকদের সন্দেহ হলে এলাকাবাসীকে নিয়ে তারা সন্দেহভাজন ওই দলটিকে আটক করে।

“পরে টহল পুলিশও সেখানে পৌঁছায়।তখন কয়েকটি অটোরিকশায় করে তাদের ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যাওয়া হয়।”

চেয়ারম্যান মুহিবুল বলছেন,নতুন ওই জঙ্গি দলের নেতা কথিত ইমাম মাহমুদও আটকদের মধ্যে আছেন বলে তাদের ধারণা।

কুলাউড়া থানার ওসি আব্দুস ছালেক বলেন,“আটকদের ইউনিয়ন পরিষদের একটি বড় কক্ষে তালাবন্ধ করে রাখা হয়েছে।পুলিশের একটি দল সেখানে আছে।পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।”

খবর পেয়ে ঢাকা থেকে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ইউনিটের (সিটিটিসি) একটি দল কুলাউড়ার উদ্দেশে রওনা হয়।সন্ধ্যার দিকে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌছান।তারপর তাদের জিজ্ঞসিাবাদ করা শুরু করেন বলে স্থানীয়রা জানান।

কুলাউড়ায় জঙ্গি সন্দেহে ১৭ জনকে আটকেছে এলাকাবাসী
পুলিশের এই বিশেষায়িত ইউনিট শুক্রবার রাত থেকে কর্মদা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিওয়ালি গ্রামের বাইশালী বাড়ি এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন ১০ জনকে আটক করে।তাদের সঙ্গে তিনি শিশুও ছিল।

‘অপারেশন হিলসাইট’ নামের ওই অভিযান শেষে সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান জানান,আটকরা ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামের নতুন এক জঙ্গি সংগঠনের সদস্য।

সেখান থেকে আড়াই কেজি বিস্ফোরক,৫০ কেজি ডেটোনেটর,প্রশিক্ষণ ম্যুানুয়াল,কমান্ডো বুট,জিহাদি বই, নগদ তিন লাখ ৬১ হাজার টাকা,স্বর্ণাংকার,ছুরি-রাম দাসহ অন্যান্য ধারালো অস্ত্র উদ্ধারের কথা জানায় সিটিটিসি।

কর্মদা ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য রাহেনা আক্তার জানান,শনিবারের ওই অভিযানের পর থেকেই পুরো এলাকায় নজর রাখছিলেন তারা।পুলিশও টহল জোরদার করেছিল।

সিটিটিসির অভিযানের সময় ওই জঙ্গি দলের একটি অংশ পাহাড়ি এলাকায় আত্মগোপান করেছিল বলে রাহেনার ধারণা। এলাকা ছাড়তে তারাই সোমবার সকালে বের হয়ে আসে বলে তিনি মনে করছেন।

কর্মধা ইউনিয়নের গুতুমপুর গ্রামের বাসিন্দা জোবের হান্নান বলেন, “এখানে বনের গভীরে ষাঁড়ের গজ পাহাড়ে (স্থানীয়ভাবে কালা পাহাড়) একটি মাজার রয়েছে।ধারণা করা হচ্ছে,সেখানকার জঙ্গলে তারা লুকিয়ে ছিলেন।আজ সকালে তারা বেরিয়ে সেখান থেকে মৌলভীবাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। তখন স্থানীয় অটোরিকশার চালকদের সন্দেহ হলে তাদের আটক করা হয়।”

কুলাউড়ায় জঙ্গি সন্দেহে ১৭ জনকে আটকেছে এলাকাবাসী
একজন অটোরিকশা চালকের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, “আছকরাবাদ চা বাগানের পাশে আমি সিরিয়াল নিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম।প্রথমে তিন লোক একজনকে কোলে করে দ্রুততার সঙ্গে নিয়ে আসেন।পেছনে আরেকজন দৌড়ে আসেন। তারা গাড়ি ঠিক করার জন্য আমার সঙ্গে কথা বলেন।আমি তখন জানতে চাই,কী হয়েছে?তখন তারা জানায়,গাছ থেকে পড়ে গেছেন।

“তিনজন আমার গাড়িতে উঠেন আর একজন থেকে যান। আমি যাত্রীদের বলি,কোথায় যাবেন?তারা তখন প্রথমে বলেন,ফুলতলা যাব।পরে বলেন,মৌলভীবাজারের যেদিকে হাসপাতাল আছে সেদিকে নিয়ে যান।তাদের কথাবার্তা শুনে তখন আমার সন্দেহ হয়।

“আমি বাবুর বাজার গিয়ে আমাদের ম্যানেজারকে বলি যে, আমার এদের জঙ্গি বলে মনে হচ্ছে।তখন কর্মধা থেকেও ফোন আসে।তখন আমরা তাদের নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে চলে যাই”,যোগ করেন অটোরিকশার চালক।

বাবুর বাজারের এক পরিবহন শ্রমিক (ম্যানেজার) বলেন, “আমাকে আগেই ফোন করে কর্মধা ইউনিয়নের এলাকা থেকে জানানো হয়,এমন কয়েকজন ধরা হইছে,মনে হয় তারা জঙ্গি।একটা সিএনজি করে তারা এদিকে আসতাছে,তাদের আটকান।ড্রাইভারকে না পেলে তারে ফোন দেন।

“এর মধ্যেই আমরার ড্রাইভার এসে পড়ে।তিনি আমাকে বলেন,এদের কথাবার্তায় সন্দেহ হচ্ছে,মনে হয় জঙ্গি।তখন আমরা কয়েকটা সিএনজি করে তাদের নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে চলে যাই।গিয়ে দেখি সেখানে আরও কয়েকজনকে আটকে রাখা হয়েছে।”

আরও খবর

Sponsered content