জাতীয়

কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি চার মন্ত্রী

  প্রতিনিধি ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ , ৪:২৪:৫৭ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।দাপ্তরিক কার্যক্রমের মাধ্যমে আজ শুরু হচ্ছে নতুন সরকারের মন্ত্রিসভার যাত্রা।তবে কয়েকটি কারণে চার মন্ত্রী সবচেয়ে বেশি চাপে থাকবেন এমন ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট,রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে পণ্যের অস্থিতিশীল বাজার,নির্বাচনকে ঘিরে সৃষ্ট কূটনৈতিক মেরুকরণের মতো সংকট মোকাবিলা করতে হবে নতুন সরকারকে।

এর মধ্যে একটি হলো অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে।

পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সৃষ্ট দূরত্ব কমিয়ে আনাই প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের।

শিক্ষার নতুন কারিকুলাম নিয়ে ভাবতে হবে শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে।আর দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাজ শুরু করতে হবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলামকে (টিটু)।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ,ডলার সংকট দূর ও রিজার্ভ বাড়ানোই প্রধান চ্যালেঞ্জ : কোভিড-১৯ মহামারি কেটে অর্থনীতিতে গতি ফিরবে এমন প্রত্যাশাকে মাটি চাপা দিয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।

এর প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতির পরিস্থিতি টালমাটাল হয়ে পড়ে। দেশের মূল্যস্ফীতি রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি।দেখা দেয় ডলার সংকট।কমে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।

এসব সংকটের মধ্যে নতুন দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।দায়িত্ব গ্রহণের শুরুতে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনাই তার জন্য বড় চাপ হিসাবে থাকবে।

এছাড়া অর্থবছর শেষ হতে এখনও ৬ মাস বাকি।এরই মধ্যে সাড়ে ৭ লাখ কোটি টাকার বাজেট বাস্তবায়ন করতে হবে।প্রকৃত বাস্তবায়নের হার এখনো অনেক কম।গেল ৫ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার ৩১ শতাংশ এবং এডিবি বাস্তবায়ন হার ৫ দশমিক ৭ শতাংশ।অর্থনীতিকে টালমাটাল করে তুলছে লাগামহীন মূল্যস্ফীতি।

অপরদিকে আইএমএফের শর্তানুযায়ী জুনে ২ হাজার ১১ কোটি ডলারের রিজার্ভ গড়ে তুলতে হবে।এমন অসমাপ্ত কাজগুলো তাকে শেষ করতে হবে।এ চ্যালেঞ্জ নিয়ে আজ রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রথম অফিস করবেন নতুন অর্থমন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন,অর্থনীতি বহুমুখী চাপে রয়েছে। ‘প্রধানমন্ত্রী নিজেও বলেছেন, নতুন সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ অর্থনীতি।অর্থনীতির এ নাজুক দশা সামাল দিতে কোন বিষয়ে অগ্রাধিকার দেবেন প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন,আগে সার্বিক অর্থনীতির দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করা হবে।এজন্য অর্থ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ,অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। তারপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, বিদেশে অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।

সবচেয়ে বড় কাজ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী মার্চে এক হাজার ৯২৭ কোটি মার্কিন ডলারে উন্নীত করা।ডিসেম্বর নাগাদ ছিল এক হাজার ৭৭৮ কোটি মার্কিন ডলার।এটি অর্জন বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে থাকছে।এজন্য রপ্তানি আয় এবং প্রবাসীদের রেমিট্যান্স বাড়াতে হবে। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে।

এবছর প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাও কমিয়ে আনা এবং বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে।অর্থবছরের শুরুতে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ ধরে মূল্যস্ফীতি নির্ধারণ করা হয়।কিন্তু সর্বশেষ ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৭১ শতাংশে নেমে আসে।সরকার মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এদিকে খেলাপি ঋণ কমিয়ে ব্যাংকিং খাত সংস্কার বড় একটি অসমাপ্ত কাজ।সদ্য বিদায়ি অর্থমন্ত্রী প্রথমে বলেছিলেন,খেলাপি ঋণ বাড়বে না।কিন্তু পরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে।

এছাড়া বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলছে,২০০৮ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত এই ১৫ বছরে দেশের ব্যাংক খাত থেকে ছোট-বড় ২৪টি অনিয়মের মাধ্যমে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে।প্রকৃত অর্থে সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতের লুটপাট আরও বেশি।

জানতে চাইলে সাবেক সিনিয়র অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ  জানান,নতুন অর্থমন্ত্রীর কাছে বড় চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা।এজন্য মুদ্রা ও রাজস্বনীতি সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি দিয়ে অর্থ সরবরাহ কমিয়েছে। পাশাপাশি সুদের হার বাড়ানো হয়েছে।রাজস্বনীতির মাধ্যমে আমদানি পণ্যের শুল্ক কমাতে হবে।এখানে যে আয় ঘাটতি হবে সেটি পূরণের জন্য ভ্যাট ও আয়কর বাড়াতে হবে।আমি আশা করছি অর্থমন্ত্রী একজন বিজ্ঞ। তিনি এসব উদ্যোগ নেবেন।

বৈশ্বিক মেরুকরণ সমাধানে অভ্যন্তরীণভাবে রাজনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে: জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে অনেকটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে।যুক্তরাষ্ট্র,যুক্তরাজ্য,কানাডাসহ পশ্চিমা কয়েক দেশ বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

অপরদিকে ভারত,চীন,রাশিয়া,ব্রাজিল,সিঙ্গাপুরসহ অধিকাংশ দেশই বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সমর্থন দিয়েছে।যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের অভিমত,৭ জানুয়ারির নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। একই অবস্থান কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার।জাতিসংঘও উদ্বেগ জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে বাংলাদেশকে ঘিরে বৈশ্বিক মেরুকরণ হয়েছে।এ সংকটের সমাধানে অভ্যন্তরীণভাবে রাজনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে।তাহলেই দেশের অর্থনীতিসহ সার্বিক পরিস্থিতি ঝুঁকিমুক্ত হবে।এখন যেভাবে চলছে,তাতে চ্যালেঞ্জ আরও বাড়বে।আর এই দূরত্ব কমিয়ে আনতে চাপে থাকবেন নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রতিক্রিয়ায় ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন,নবগঠিত মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য,ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোসহ প্রায় সব দেশের রাষ্ট্রদূতরা গিয়েছিলেন।অর্থাৎ বর্তমান সরকারকে সম্ভাষণ জানাতে তারা সবাই গিয়েছিলেন।

জানা গেছে,ঢাকায় নিযুক্ত ১৯ দেশের রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নির্বাচনে জয়ের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন।ইউরোপের ২৭ দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) অভিনন্দন না জানালেও যুক্তরাষ্ট্রের মতো কঠোর বার্তা দেয়নি।

নির্বাচনে সহিংসতা ও অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে উদ্বেগ জানালেও জিএসপি প্লাসসহ অন্যান্য বিষয়ে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছে।

মানবাধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ২০২২ সালের ডিসেম্বরে র‌্যাব এবং সংস্থাটির সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।গত মে মাসে ভিসানীতি ঘোষণা করে জানিয়েছে,সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বাধা সৃষ্টিকারীরা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে।

গত অক্টোবরে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে,ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ শুরু করা হয়েছে।গত নভেম্বরে ঘোষিত নতুন মার্কিন শ্রমনীতি সারা দুনিয়ার জন্য প্রযোজ্য হলেও বাংলাদেশকে লক্ষ্যবস্তু করার শঙ্কা রয়েছে।

কম্বোডিয়াসহ কয়েকটি দেশের নির্বাচনের পর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তেমন কিছু হবে কিনা,তা স্পষ্ট নয়।দেশ হিসাবে বাংলাদেশের রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র।দেশটি থেকে সবচেয়ে বেশি ডলার আসে বাংলাদেশে।যুক্তরাষ্ট্রে গত ১১ মাসে গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানি প্রায় ২৫ শতাংশ কমেছে।

উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা,নতুন শিক্ষাক্রমে পরীক্ষার চেয়ে ব্যবহারিকের প্রতি বেশি গুরুত্ব: নতুন বছরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের কয়েকটি শ্রেণিতে নতুন একটি কারিকুলাম বা শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে।এতে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচি ও মূল্যায়ন পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে,যা নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

নতুন শিক্ষাক্রমে দশম শ্রেণির আগের সব পাবলিক পরীক্ষা তুলে দেওয়া হয়েছে।এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা পদ্ধতিতেও আনা হয়েছে পরিবর্তন।এছাড়া থাকছে না নবম শ্রেণিতে বিভাগ পছন্দের সুযোগ।এর বদলে একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা পছন্দমতো বিভাগে পড়তে পারবে।

আগের বছর প্রথম,দ্বিতীয়,ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণিতে নতুন পাঠ্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে।এ বছর বাস্তবায়ন করা হচ্ছে তৃতীয়,চতুর্থ,অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে।এরপর ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে, ২০২৬ সালে একাদশ শ্রেণিতে এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে ধাপে ধাপে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হওয়ার কথা রয়েছে।

শিক্ষার্থীদের আনন্দময় পরিবেশে পড়ানোর পাশাপাশি মুখস্থনির্ভরতার পরিবর্তে দক্ষতা,সৃজনশীলতা,জ্ঞান ও নতুন দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে শেখাতেই নতুন এই শিক্ষাক্রম চালু করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড।কিন্তু এ নিয়ে অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন।

অভিভাবকদের মতে, নতুন শিক্ষাক্রমে পরীক্ষার চেয়ে ব্যবহারিকের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।যার ফলে পড়ার চেয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক নানা কাজের চাপ বেড়েছে,যা অনেক অভিভাবকের ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

তিনি বলেছেন,কারিকুলাম বাস্তবায়নে যদি কোনো পরিবর্তন আনতে হয়,আমরা তাতে পরিবর্তন আনব। এছাড়া শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের পদ্ধতিতেও যদি বেশি চ্যালেঞ্জ আসে,প্রয়োজনে সেখানেও পরিবর্তন আনা হবে।এনিয়ে তাকে অনেক কাজ করতে হবে।

নতুন সরকারের ১১ অগ্রাধিকারের মধ্যে একটি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ : দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ,ডলার সংকট কাটাতে রপ্তানি আয় বাড়ানো, ভারত থেকে কোটা ভিত্তিক ছয় পণ্য আমদানি নিশ্চিত নিয়ে শুরুতেই চাপে থাকবেন নতুন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম (টিটু)।

কারণ দায়িত্ব গ্রহণ এমন একটি সময় হচ্ছে যখন বাজারে ফের নতুন করে পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে।যদিও আগে থেকেই বেড়ে অনেক উপরে আছে পণ্যের দাম।মাংসের মূল্য ৬৫০ টাকা থেকে বেড়ে সাড়ে সাতশ টাকা হয়েছে।ভরা মৌসুমে সবজির মূল্যও কমছে না।এর জন্য অনেকটা দায়ী করা হয় পণ্যের বাজার ঘিরে সিন্ডিকেটকে।আর এ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ শুধু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নয় নতুন সরকারের ১১টি অগ্রাধিকার কাজের মধ্যে একটি।

এদিকে শনিবার আসন্ন পবিত্র রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে নবনিযুক্ত মন্ত্রীদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন,পবিত্র রমজান ঘনিয়ে আসছে,তাই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন।কারণ,এই মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ানো উচিত নয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন,এ মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি।মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) হিসাবে ৫ বছরে কোনো কোনো পণ্যের দাম ৯ থেকে ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

যদিও সদ্য বিদায় নেওয়া বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি।সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নজির দেখা যায়নি।সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে সংকট আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা করেছেন তিনি।

এমন পরিস্থিতিতে দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়।এরই মধ্যে নতুন ভাবে এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম (টিটু)।

আজ ‘রোববার তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ শুরু করবেন।জানতে চাইলে নবনিযুক্ত বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম (টিটু)  বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা আমার প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসাবে কাজ থাকবে।এটি সরকারের অগ্রাধিকারের মধ্যে আছে।নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ।তাই পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ব্যবসায়ীদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা হবে।

এছাড়া রপ্তানি আয় বাড়াতে ব্যাপক ভূমিকা নিতে হবে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো রপ্তানি আয় বাড়াতে কতটা ভূমিকা রাখছে সেটিও খতিয়ে দেখার সময় আসছে।এই মুহূর্তে ডলার সংকট কাটাতে রপ্তানি আয় বাড়ানো খুবই জরুরি।বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে হলে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সের ওপর জোর দিতে হবে বেশি।আর রপ্তানি আয় বাড়ানোর সব ধরনের উদ্যোগ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নেওয়া হবে।

 

এদিকে ভারত থেকে ৬টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বাংলাদেশকে দেওয়ার কথা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় ৬ পণ্যের ক্ষেত্রে বছরে ৫২ লাখ ৫০ হাজার টন আমদানির কোটা ভারতের কাছে চেয়েছিল বাংলাদেশ।পণ্যগুলো হচ্ছে-চাল,গম,চিনি,পেঁয়াজ,আদা ও রসুন।দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ কোটা সুবিধা চাওয়া হয়েছে।

এ নিয়ে দুদেশের মধ্যে বৈঠকও হয়েছেআমদানির বার্ষিক কোটার মধ্যে চালের পরিমাণ হচ্ছে ১৫ লাখ টন। এর মধ্যে সরকারিভাবে ৮-১০ লাখ এবং বেসরকারিভাবে ৫-৭ লাখ টন আমদানির কোটা চাওয়া হয়েছে।

এছাড়া গম আমদানির কোটা সুবিধা চাওয়া হয় ২০ লাখ টনের।যার মধ্যে সরকারিভাবে ৫ থেকে ৭ লাখ এবং বেসরকারি পর্যায়ে ২০ লাখ টন।

অপর চারটি পণ্যের মধ্যে চিনি ১০ লাখ টন,পেঁয়াজ ৬ লাখ টন,আদা এক লাখ টন এবং রসুন ৫০ হাজার টন। এ বিষয়টি নিষ্পত্তি দ্রুত করতে পারলে দ্রব্যমূল্য বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

জানতে চাইলে সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান  জানান,অস্বীকার করার উপায় নেই যে নিরন্তর বাড়ন্ত জিনিসপত্রের দাম সাধারণ মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে ফেলেছে।মূল্যস্ফীতির এই দানবকে শৃঙ্খলিত করার শিকল নিশ্চয় আমাদের হাতে আছে।

২০০৯ সালে মুদ্রানীতিকে সংকোচনমূলক করার পাশাপাশি কৃষি ও গার্মেন্টসসহ রপ্তানি খাতকে বাড়তি প্রণোদনা দিয়ে চাহিদা ও সরবরাহের দিক থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে মূল্যস্ফীতিকে ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

অন্যদিকে পেঁয়াজ,রসুন,আদা,হলুদের আমদানি কমানোর লক্ষ্যে সুদে ভর্তুকি দেওয়া হয়।এতে কৃষকরা এসব পণ্য উৎপাদনে উৎসাহী হন।যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাজারে। ২০০৯ সালের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বাজার ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হবে।

 

আরও খবর

Sponsered content