শিক্ষা

এবারও দেশসেরা খুলনার মুহাম্মাদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

  প্রতিনিধি ২৪ জুন ২০২৪ , ৫:০৯:০৬ প্রিন্ট সংস্করণ

খুলনা প্রতিনিধি।।সারা দেশের ৬৫ হাজার ৬২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্বাচিত হয়েছে খুলনার মুহাম্মাদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।কয়েক বছর ধরে জেলার শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি পেলেও এবার দেশসেরা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে বিদ্যালয়টি।

খুলনা নগরের সীমানাঘেঁষা বিদ্যালয়টি অবস্থিত বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা ইউনিয়নের মধ্যে। ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি বিদ্যালয়টি নিয়ে ‘গরিবের স্কুলটাই জেলার সেরা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।মূলত বিদ্যালয়টি শহরের একেবারে পাশে হওয়ায় শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া পরিবারের শিশুরা বেশি পড়াশোনা করে।গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর সবার কাছে বিদ্যালয়টি পরিচিতি পেয়েছে ‘গরিবের বিদ্যালয়’ হিসেবে।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো. মনিরুজ্জামান বলেন,সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ স্বাক্ষরিত চিঠি পেয়েছেন তিনি।চিঠিতে জানানো হয়েছে, আগামী ২৭ জুন রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁদের হাতে প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০২৩ তুলে দেবেন।ইতিমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।এখন ঢাকায় পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের মহড়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

প্রধান শিক্ষক বলেন,বিদ্যালয়ের এই কৃতিত্ব বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক,শিক্ষার্থী,অভিভাবক,ম্যানেজিং কমিটি,জেলা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তা,জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ সবার।সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সহযোগিতায় বিদ্যালয় আজকের অবস্থানে এসেছে।

এর আগে মুহাম্মাদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দুই দফায় জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,একবার বিভাগের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মনিরুজ্জামান জেলার শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছিলেন।এবার দেশসেরা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে বিদ্যালয়টি।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে,গত বছর প্রাথমিক শিক্ষা পদকের বাছাইপর্ব শুরু হয়।প্রথমে জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত করা হয়।জেলার সেরাদের নিয়ে বিভাগীয় পর্যায়ের সেরা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হয়।এরপর চলতি বছর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি দেশসেরা প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত করার প্রক্রিয়া শুরু করেন।বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম ও প্রতিযোগিতা শেষে গত সপ্তাহে ফলাফল চূড়ান্ত করা হয়।

ফলাফলে দেখা গেছে,এবার ১৭টি ক্যাটাগরির মধ্যে শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক,শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক, শ্রেষ্ঠ জেলা প্রশাসকসহ মোট ৪টি ক্যাটাগরিতে খুলনা বিভাগ শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে।এর মধ্যে খুলনা জেলার মধ্যেই শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন। শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন পাইকগাছা উপজেলার তেলিখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিলন সরকার।এ ছাড়া মাগুরার জেলা প্রশাসক আবু নাসের বেগ শ্রেষ্ঠ জেলা প্রশাসক ও মাগুরা সদরের ভিটাসাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পংকজ কান্তি আইচ দেশের শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন।

এর আগে মুহাম্মাদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দুই দফায় জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, একবার বিভাগের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মনিরুজ্জামান জেলার শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছিলেন।বর্তমানে ওই বিদ্যালয়য়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ২০০-এর বেশি।চাপ কমাতে দুটি পালায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হয়।তারপরও এক বেঞ্চে ৪-৫ জন গাদাগাদি করে বসে ক্লাস করে শিশুরা।

২০১৮ সালে যখন মুহাম্মাদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়,তখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ হাজারের কিছু বেশি।কিন্তু শ্রেণিকক্ষের সংকট থাকায় মেঝে, বারান্দায় বসে ক্লাস করত শিশুরা।ছিল না পর্যাপ্ত শৌচাগার। শিক্ষক ছিলেন মাত্র পাঁচজন।এত সংকটের পরও প্রতিবছর প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় পাসের হার ছিল শতভাগ। ট্যালেন্টপুলসহ পাঁচ থেকে সাতজন করে বৃত্তি পেত শিক্ষার্থীরা। প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর নতুন তিনতলা ভবন পেয়েছে বিদ্যালয়টি।পাশাপাশি শিক্ষকসংকট কিছুটা নিরসন হয়েছে। এখন শিক্ষক রয়েছেন ১২ জন। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও পাসের হার আগের মতোই অব্যাহত আছে বলে জানান প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান।তিনি বলেন,বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষের সংকট কিছুটা নিরসন হলেও এখনো কোনো খেলার মাঠ নেই।জমির অভাবে মাঠের ব্যবস্থা করা যায়নি। জায়গা না থাকায় নতুন ভবন করা যাচ্ছে না।এখনো কক্ষসংকটে শিশুদের গাদাগাদি করে বসতে হচ্ছে।প্রায় তিন বছর ধরে জমি অধিগ্রহণ ফাইল আটকে আছে।

আরও খবর

Sponsered content