জাতীয়

একুশে পদক গ্রহণ করে আপ্লুত দই বিক্রি করে বই বিতরণ করা চাঁপাইনবাবগঞ্জের জিয়াউল হক

  প্রতিনিধি ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ , ৩:৩০:২৫ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে সমাজসেবায় আজ মঙ্গলবার একুশে পদক গ্রহণ করে আপ্লুত দই বিক্রি করে বই বিতরণ করা চাঁপাইনবাবগঞ্জের জিয়াউল হক।পদক পাওয়ার অনুভূতি জানিয়ে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে তিনি মুঠোফোনে বলেন,আজ আমার মনটা ভরে গেছে।মনে হচ্ছে, অনুষ্ঠানটি আমারই ছিল।প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমিই বেশি গুরুত্ব পেয়েছি।আজ আমি পৃথিবীর একজন সুখী মানুষ।’

আজ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে একুশে পদক বিজয়ী ও তাঁদের স্বজনদের হাতে পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।পদক নেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কী কথা হয়েছে—জানতে চাইলে জিয়াউল হক বলেন,আমি জিয়াউল সাধারণ পাঠাগারের জন্য একখণ্ড জমির ওপর ভবন নির্মাণ এবং আমার বাড়ির পাশের বিদ্যালয় মুসরীভূজা ইউসুফ আলী হাইস্কুলকে সরকারি করার দাবি জানাই। প্রধানমন্ত্রী আমার কথা আন্তরিকতার সঙ্গে শোনেন এবং আশ্বাস দেন।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে জিয়াউল হক খুবই খুশি।তিনি বলেন,স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি,একটু বড় পরিসরে আমার পাঠাগারটি হবে।অনেক মানুষ আসবে, বই পড়বে,জ্ঞান চর্চা হবে।এলাকা আলোকিত হবে।সমাজ ভালো হবে। আমার বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা বেড়ে গেছে। মানুষের জন্য আরও কাজ করার ইচ্ছা জাগছে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ একুশে পদক প্রদান অনুষ্ঠানে ভাষণ দেওয়ার সময় বলেন,যে মানুষটা জীবনে এত বড় ত্যাগ স্বীকার করতে পারেন,তাঁর জন্য কিছু করাটা আমার দায়িত্ব।আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বলছি না,আমি জাতির পিতার কন্যা হিসেবে বলছি,আমি যদি প্রধানমন্ত্রী নাও থাকতাম, তবুও নিজেরা চেষ্টা করতাম যদি জানতে পারতাম।’ প্রধানমন্ত্রী জিয়াউল হকের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে কথা বলেন, তাঁকে অনুসরণ করার আহ্বান জানান।

ফেরি করে দই বিক্রি করে কোনোমতে সংসার চালিয়ে জমানো টাকা দিয়ে জিয়াউল হক গরিব শিক্ষার্থীদের বই কিনে দিতেন।আর্থিক সহায়তাও দিতেন কাউকে কাউকে। পঞ্চম শ্রেণি পাসের পর টাকার অভাবে আর পড়াশোনা করতে পারেননি তিনি।তখনই ভাবেন,আশপাশের কোনো ছাত্র যেন টাকার অভাবে পড়াশোনা না ছাড়ে,সে জন্য বিনা মূল্যে বই দেবেন।

১৯৬৯ সালে জিয়াউল হক নিজের বাড়িতে ‘জিয়াউল হক সাধারণ পাঠাগার’ স্থাপন করেন।এ পাঠাগারে ১৪ হাজার বই আছে।বিদ্যালয়ে সরকারিভাবে বিনা মূল্যে বই দেওয়ার পর তিনি কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বই দিতে শুরু করেন।দুস্থ নারীদের বাড়ি বানিয়ে দেওয়াসহ নানা সমাজসেবামূলক কাজে যুক্ত হন।অনেক প্রবাসী ও স্থানীয় হৃদয়বান মানুষ তাঁর দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন।তাঁর একুশে পদক পাওয়ার খবর পেয়ে মানুষ যখন তাঁর বাড়িতে ভিড় জমিয়েছিলেন,তখন তিনি আশপাশের এলাকায় দই বিক্রিতে ব্যস্ত ছিলেন।তাঁকে নিয়ে ‘একুশে পদক পাওয়ায় বাড়িতে মানুষের ভিড়, জিয়াউল হক ব্যস্ত দই বিক্রিতে’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।পাঠক এই খবরে তাঁর প্রতি শুভেচ্ছা, ভালোবাসা জানান।

আরও খবর

Sponsered content