আন্তর্জাতিক

ইসরায়েলি ট্যাংক আসার খবর পেয়ে রাফাহ সাড়ে চার লাখ বাসিন্দা পালিয়েছে

  প্রতিনিধি ১৫ মে ২০২৪ , ৫:৪৫:০৪ প্রিন্ট সংস্করণ

অনলাইন ডেস্ক রিপোর্ট।।ইসরায়েলি ট্যাংক গাজার দক্ষিণাঞ্চলে ঢুকছে এমন খবর আসার প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ বলছে,প্রায় সাড়ে চার লাখ ফিলিস্তিনি গত এক সপ্তাহে রাফাহ ছেড়ে পালিয়েছে। ‘মানুষ ক্রমাগত ক্লান্তি, ক্ষুধা আর ভয়ের মধ্যে রয়েছে,’ ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের দপ্তর ইউএনআরডব্লিওএ সতর্ক করে দিয়েছে।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে,তারা শহরের পূর্বাঞ্চলে ‘সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে অভিযান’ অব্যাহত রেখেছে, যেখানে দশ লাখেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলের অভিযানের কারণে আরও এক লাখের মতো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

ইসরায়েলের সৈন্যরা আবারো জেইতুন ও জাবালিয়াতে ফিরেছে,যেখানে দেশটির সেনাবাহিনীর দাবি অনুযায়ী হামাস পুনরায় সংগঠিত হয়েছে।পাঁচ মাস আগেই ইসরায়েল সেখানের হামাসের স্থানীয় ব্যাটালিয়নকে ধ্বংস করে দেয়ার দাবি করেছিলো।

সামরিক বাহিনী তাদের অভিযানের আগে বেসামরিক নাগরিকদের পূর্ব রাফাহ ও জাবালিয়া খালি করতে বলেছে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে।যদিও সাম্প্রতিক সময়ে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা প্রায় গাজার ২৩ লাখ মানুষের এক চতুর্থাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে।

গত সাতই অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে পাল্টা সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল।হামাসের ওই হামলায় বারশ মানুষের মৃত্যু হয়েছিলো এবং আরও ২৫২জনকে জিম্মি করা হয়েছিলো।এরপর থেকে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ৩৫১৭০ জন নিহত হয়েছে এবং এর মধ্যে গত চব্বিশ ঘণ্টায় ৮২ জন মারা গেছে বলে জানিয়েছে গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।এদিকে রাফাহ ক্রসিং নিয়ে ইসরায়েল ও মিশর পরস্পরকে দোষারোপ করেছে।ইসরায়েলের সেনারা ওই ক্রসিংয়ের গাজা অংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।

মঙ্গলবার সকালে ইউএনআরডব্লিওএ রাফাহ শহরের খালি রাস্তাঘাটের কিছু ছবি পোস্ট করেছে,যেগুলো ছয়ই মে ইসরায়েলের অভিযানের আগে তাঁবু ও অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে ভর্তি ছিলো।পরিবারগুলো নিরাপত্তার খোঁজে পালিয়েছে, বলেছে সংস্থাটি। কোন জায়গাই আর নিরাপদ নয়।দ্রুত যুদ্ধবিরতিই একমাত্র আশা’।

রাফাহ শহরে থাকা ইউএনআরডব্লিওএ মুখপাত্র লুইস ওয়াটারিজ সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন,এখনো যেসব পরিবার শহরে আছে তারা ‘যত দ্রুত সম্ভব পশ্চিম দিকে সরে যাচ্ছে’ এবং ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলের দিকে সমুদ্র সৈকতে তাঁবু গাড়ছে।

হাদিল রাদওয়ান একজন বাস্তু হারানো নারী ও নবজাতক শিশুর মা।তিনি পশ্চিমাঞ্চলীয় তাল আল-সুলতান এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিলেন।তিনি বলেন অবিরাম গোলার শব্দে তিনি ভীতসন্ত্রস্ত এবং পানি ও অন্য দরকারি জিনিসের তীব্র সংকটে ভুগছেন।

বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন তাদের সাথে থাকা অন্য অধিবাসীরা পালিয়ে গেছে।আমার সিজার হয়েছে এবং হুমকির মুখে দ্রুত সরে যাওয়া আমার জন্য কঠিন’।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে কয়েকজন ফিলিস্তিনি বলেছেন, ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো রাফাহর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আবাসিক এলাকার ভেতরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং মিশরের সাথে রাফাহ ক্রসিংয়ের কাছে প্রধান উত্তর দক্ষিণ সড়ক অতিক্রম করেছে।মঙ্গলবার ওই ক্রসিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা।

‘আজ সকালে ট্যাংকগুলো সালাহ আল-দিন সড়কের পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়েছে,’ একজন অধিবাসী বলছিলেন।

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ বলেছে,সেনারা রাফাহ ক্রসিংয়ের গাজার সাইডে সন্ত্রাসীদের কিছু সেল ধ্বংস করে দিয়েছে এবং বেশ কিছু সন্ত্রাসীকে নিশ্চিহ্ন করেছে ও রাফাহর পূর্বাঞ্চলে অস্ত্রশস্ত্র খুঁজে পেয়েছে’।

হামাসকে ইসরায়েল,যুক্তরাজ্য ও অন্য দেশগুলো সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে।

আইডিএফ বলেছে,দক্ষিণ গাজার লড়াইয়ে তাদের একজন সৈনিক গুরুতর আহত হয়েছে।কয়েক মাসের যুদ্ধের পর ইসরায়েল মনে করছে রাফাহর নিয়ন্ত্রণ না নিলে এবং হামাসের শেষ ব্যাটালিয়নকে ধ্বংস না করলে যুদ্ধ জয় অসম্ভব।

তবে জাতিসংঘ ও পশ্চিমা শক্তিগুলো সতর্ক করে বলেছে একটি সর্বাত্মক অভিযান বেসামরিক নাগরিকদের ব্যাপক হতাহত এবং একটি মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

ফিলিস্তিনিদের গণহারে বাস্তুচ্যুত হওয়ার প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে,রাফাহ ক্রসিং বন্ধ থাকায় জ্বালানি, খাদ্য ও অন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মজুত শেষ হয়ে আসছে এবং সহিংসতার কারণে কাছে ইসরায়েলের সাথে কেরেন শালম ক্রসিং ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

জাতিসংঘ জানিয়েছে,খান ইউনিসে ইউরোপীয় গাজা হাসপাতালে জাতিসংঘের চিহ্নিত একটি গাড়িতে করে যাওয়ার সময় হামলায় একজন ভারতীয় কর্মকর্তা মারা গেছেন।ওই হাসপাতালটি রাফাহর উত্তর পূর্ব দিকে।তবে এ ঘটনার জন্য সংস্থাটি কাউকে দায়ী করেনি।

আইডিএফ বলেছে,প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে গাড়িটি একটি যুদ্ধ-অঞ্চলে আটকা পড়েছিলো এবং তাদের চলাচলের বিষয়ে সচেতন করা হয়নি।তবে জাতিসংঘ বলেছে,এ গাড়ীটির চলাচলের বিষয়ে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিলো।

হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান সোমবার বলেছেন যুক্তরাষ্ট্র এখনো বিশ্বাস করে ‘রাফাহ শহরে বড় ধরনের সামরিক অভিযান হবে একটি ভুল,যা কোন ধরনের কৌশলগত অর্জন ছাড়াই বহু বেসামরিক নাগরিককে ঝুঁকিতে ফেলবে’।

‘রাফাহ সহ গাজার সব জায়গায় হামাসকে পরাস্ত করতে আমরা ইসরায়েলের সঙ্গে কাজ করছি,বলেছেন তিনি।

ওদিকে কাতারের প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার সতর্ক করে বলেছেন, রাফাহ অভিযান তার দেশ ও মিশরের যুদ্ধবিরতি চেষ্টা ও জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টিকে পেছনে ঠেলে দিবে।

‘বিশেষ করে গত কয়েক সপ্তাহে কিছু পরিস্থিতি আমরা দেখেছি,কিন্তু দুঃখজনকভাবে সবকিছু সঠিকভাবে এগোয়নি এবং এখন আমরা এক জায়গায় আটকে আছি,শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান আল-থানি দোহায় ইকনমিক ফোরামে বলেছেন।

আইডিএফ মঙ্গলবার আরও বলেছে,তাদের সেনারা জাবালিয়া এলাকায় কয়েকটি লড়াইয়ে অংশ নিয়েছে এবং তারা ‘সৈন্যদের লক্ষ্য করে গুলি করা কয়েক ডজন সন্ত্রাসীকে নিশ্চিহ্ন করেছে এবং ওই এলাকায় তৈরি করা বিস্ফোরকের নেটওয়ার্ক ধ্বংস করেছে’।

সৈন্যরা গোপন টানেল চিহ্নিত করেছে এবং জেইতুন এলাকায় অস্ত্রের মজুত ধ্বংস করেছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।

আরও খবর

Sponsered content