সারাদেশ

ইট,পাথর আর কংক্রিটের নগরী রাজধানী ঢাকার অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান হাতিরঝিল

  প্রতিনিধি ১০ মে ২০২৩ , ২:২৫:০৫ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।ইট,পাথর আর কংক্রিটের নগরী রাজধানী ঢাকার অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান হাতিরঝিল।উন্নয়নের নামে হাতিরঝিলকে আবারও গলাটিপে হত্যার চেষ্টা চলছে।এটি অবাধে ভরাট করে চলছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণযজ্ঞা বেশ কয়েকটি পিলার বসালেও ঝিলের কোনো ক্ষতি হবে না বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।তবে একে সম্পূর্ণ অনৈতিক ও সরকারের উন্নয়ন মহাপরিকল্পনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন,কর্তৃপক্ষের অদূরদর্শিতার বলি হতে পারে না জলাধারটি।

ইট,পাথর আর কংক্রিটের নগরী রাজধানী ঢাকার অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান হাতিরঝিল।নান্দনিকতার আধার এ লেক একদিকে যেমন ধারণ করে আছে অসীম জলরাশি,তেমনি সড়ক ও নৌ যোগাযোগেও এগিয়ে রেখেছে নগরবাসীকে।

হাতিরঝিলের পরিপূর্ণ সুফল পেতে দীর্ঘ একটা সময় বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অবৈধ বিজিএমইএ ভবনও এখন অদৃশ্য। ভবনটি ভাঙার পর নগরবাসী যখন ঝিলটির সৌন্দর্য ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায়,ঠিক তখনই শুরু হয় ভরাটকরণের এ মহাকর্মযজ্ঞ। জলাশয় উন্মুক্ত করার বদলে চলছে বালু ফেলে ভরাটের কাজ।গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলা এ কর্মযজ্ঞে এখন প্রায় পরিপূর্ণ ভরাটের পথে ঝিলের কিছু অংশ।

ভরাট কর্মযজ্ঞের ছবি তুলতে গেলে প্রথমেই বাধার মুখে পড়তে হয় প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের। ছবি তুলতে নিষেধ করে জানান,তারা সমস্যায় পড়বেন!

রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে শুরু হয়ে সংযোগ সড়কসহ ৪৬.৭৩ কিলোমিটারের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কমলাপুর হয়ে চলে যাবে কুতুবখালি।তবে এর দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় অংশ তেজগাঁও থেকে মগবাজার যাওয়ার পথে হাতিরঝিলে পড়বে বেশ কয়েকটি পিলার।বর্তমানে চলছে তারই প্রাথমিক কর্মযজ্ঞ।

যদিও এ প্রকল্পের জন্য এ জলাধারের কোনো ক্ষতি হবে না বলে দাবি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সহকারী প্রকল্প পরিচালক মিসবাহিল মোকার রাবিনের।পাশাপাশি এখনই সংবাদ প্রকাশ না করতেও অনুরোধ করেন তিনি।বলেন, ‘প্রতিবেদনটি এখনই প্রকাশ করলে অনেক পরিবেশবাদী না বুঝে কাজে বাধা দেবে,আন্দোলন শুরু করতে পারে।তখন সাংবাদিকরাও পেছনে লাগবে।’

অবাধে ভরাট চললেও এখন পর্যন্ত ঝিল ছেড়ে ডাঙায় উঠার অনুমোদন পায়নি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।ঢাকা দক্ষিণ সিটির আপত্তির মুখে থমকে আছে পান্থকুঞ্জ পার্ক ও মালিবাগ ব্যবহারের অনুমতি।ফলে কিছুটা আক্ষেপ নিয়েই মিসবাহিল মোকার রাবিন জানালেন,এতে কাজ কিছুটা থমকে আছে। দ্রুত সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কথা বলে কাজ শুরুর চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।

নানা প্রতিবন্ধকতায় বারবার হোঁচট খাওয়া এবং প্রকল্পে দফায় দফায় সিদ্ধান্ত বদল ও দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যার্জন সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করছেন ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন,শহরের ভেতরে দ্রুত গতির গাড়ির চাপ কমাতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করা হয়।কিন্তু ঢাকায় যা হচ্ছে,তাতে গাড়ি সব শহরের ভেতরেই প্রবেশ করবে;এতে যানজট সৃষ্টি হবে। কাজের কাজ হবে না কিছুই।’

এদিকে,সম্প্রতি প্রকল্পের নকশায় হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জ পার্ক যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েও ওঠেছে প্রশ্ন।যদিও বিষয়টি সম্পর্কে শেষদিকে জেনেছেন বলে দাবি রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলামের।তার দাবি,কারা-কীভাবে এ প্রকল্পে হাতিরঝিলকে যুক্ত করাচ্ছে তিনি জানেন না।একদম শেষ দিকে এসে তারা জানতে পেরেছেন।এতে হাতিরঝিল ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান জানতে চান,শুরুতে লেক-পার্ক প্রকল্পের মধ্যে না থাকলেও পরে কীভাবে তা যুক্ত হয়?কারা এটা করেছে,তাদের সামনে আনতে হবে।তিনি বলেন, ‘শুরুর নকশার সঙ্গে পরের নকশার পার্থক্য এর আগেও বহুবার হয়েছে,এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতেও তা দেখা যাচ্ছে।’

নগরকে বাঁচাতে দ্রুত এমন অপরিকল্পিত উন্নয়ন থেকে সরকারকে সরে আসতেও অনুরোধ করেন এ নগরবিদ।

উল্লেখ্য.১৩ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের ক্ষেত্রে রাজউকের মাস্টার প্লান কিংবা স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান থেকেও কোনো মতামত নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

আরও খবর

Sponsered content