শিক্ষা

আমাকে ও প্রো-ভিসিকে মহামান্য রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়েছেন-চবি উপাচার্য, অধ্যাপক শিরীন আখতার

  প্রতিনিধি ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ , ১১:১৯:৪০ প্রিন্ট সংস্করণ

চবি প্রতিনিধি।।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন,‘শিক্ষক সমিতি কি ভিসি,প্রো-ভিসি নিয়োগ দেয়?তারা কি ভিসি,প্রো-ভিসি আনেন।এটা কি কোনো ফল যে কেটে বসিয়ে দিলাম।আমাকে ও প্রো-ভিসিকে মহামান্য রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়েছেন।যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের জায়গায় অন্য কাউকে না দেবেন কাজ করে যাব।শিক্ষক সমিতিকে বলুন একজনকে নিয়ে আসুক,আমরা সসম্মানে জায়গা ছেড়ে দেব।কেউ একজনকে চিঠি নিয়ে আসতে বলুন,ফুলের মালা দিয়ে চলে যাব।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ডাকা উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য পদত্যাগের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এসব কথা বলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার।

চবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে বলেন,আমি কোনো অধ্যাদেশের লঙ্ঘন করেছি কি-না সেই প্রমাণ কি তাদের কাছে আছে।’

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমারদের পদত্যাগের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে চবি শিক্ষক সমিতি।

সোমবার দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষক সমিতির নেতা ও সদস্যরা।

অবস্থান কর্মসূচিতে চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হক বলেন,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত একজন ব্যক্তি যখন তার কিছু প্রশাসনিক সহযোগীসহ তাদের বাছাইকৃত আবেদনকারীকে সঙ্গে নিয়ে গোপন স্থানে নিয়োগ বোর্ড বসাতে পারেন।তখন এই ধরনের একজন ব্যক্তি এতো বড় প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসেবে থাকার সমস্ত নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন।

‘এটা আমরা বলতেও সংকোচবোধ করছি।শিক্ষক সমিতি ও শিক্ষক সমাজ তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন; শুধু তিনি নন, তার অন্যতম সহযোগী হিসেবে উপ-উপাচার্যকেও বিদায় নিতে হবে।তাহলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’

শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী বলেন,আমরা আইন ও বাংলা বিভাগের নিয়োগ বোর্ড বাতিলের জন্য উপাচার্যের কাছে গিয়েছি।কিন্তু তিনি গতকাল আমাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন। তিনি রুদ্রমূর্তি ধারণ করে সেখান থেকে চলে গেছেন।’

তিনি বলেন,পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি,নিয়োগ বোর্ডের একজন সদস্য আইন অনুষদের ডিন বলেছেন,উপাচার্যের কার্যালয়ে নিয়োগ বোর্ড বসেছে।অপরদিকে আরেক সদস্য আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. রকিবা নবী বলেছেন, উপাচার্যের বাংলোতে নিয়োগ বোর্ড বসেছে।এই ধরনের লুকোচুরি কীভাবে সম্পন্ন হয় আমরা জানি না।প্রকৃতপক্ষে এটা কোনো বোর্ড হয়নি।’

উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত প্রতিদিন অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষক সমিতির নেতারা।

শিক্ষক নিয়োগে শিক্ষক সমিতির হস্তক্ষেপে আইন বিভাগের প্রতিবাদ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনে প্রতিবাদ কর্মসূচি করেছেন আইন বিভাগের নয় শিক্ষক।

সোমবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চত্বরে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি করা হয়।

আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. রকিবা নবী বলেন, ‘গতকাল আমাদের আইন বিভাগে একটা শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড বসেছিল।বোর্ড ছিল আড়াইটার দিকে,আমরা যখন একটার দিকে গেলাম।তখন দেখলাম ভিসি ম্যামের অফিসে ৫০ জন শিক্ষক,যেখানে শিক্ষক সমিতি এবং আইন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক ছিলেন।ওনারা খুবই উত্তেজিত অবস্থায় ছিলেন,সেখানে তারা বাংলা ও আইন বিভাগের বোর্ড বন্ধ করার জন্য গিয়েছিলেন।আমরা সেখানে হতভম্ব হয়ে গেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন হতে পারে ভেবে খুবই কষ্ট পেয়েছি।তারা যে কাজ করেছে এটা অন্যায় এবং এই কাজের তীব্র নিন্দা জানাই।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন,এক প্রার্থীর সঙ্গে গতকাল খারাপ আচরণ করেছেন তারা৷এক পর্যায়ে ওই প্রার্থী ভাইবা না দিয়েই চলে গেছেন।অন্য প্রার্থীরাও ভয়ে ছিলেন।’

এসময় আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন,সভাপতি অথবা চেয়ারম্যান যদি প্লানিং না করে তাহলে উপাচার্যকে ক্ষমতা দেয়া আছে উনি বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন।সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত আছে কোনো বিভাগ যদি শূন্য পদ থাকে,সংশ্লিষ্ট বিভাগ ফরোয়ার্ড না করলে উপাচার্য বিজ্ঞাপন দেয়ার ক্ষমতা রাখে।এরপরেও যে বিজ্ঞাপন হয়েছে, এটা সিন্ডিকেট কর্তৃক অনুমোদিত।তারা কোরাম সংকট করে নিয়োগপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে চেয়েছে।তাদের কোনো আপত্তি থাকলে তারা আইনি প্রক্রিয়ায় যেত পারত।’

তিনি বলেন,উপাচার্যের বাংলোতে তার অফিস রয়েছে। সেখানে বোর্ড হয়েছে।’

এক অভিযোগের উত্তরে অধ্যাপক নির্মল কুমার সাহা বলেন, ‘আমরা তিনজন বোর্ড মেম্বার এক গাড়িতে করে গেছি। কোনো প্রার্থী আমাদের গাড়িতে করে যায়নি।এটা মিথ্যাচার।’

আন্দোলনের মুখে বাংলা বিভাগের নিয়োগ বোর্ড স্থগিত

শিক্ষক সমিতির আন্দোলনের মধ্যেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের নির্বাচনি বোর্ড স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন,অনিবার্য কারণে আমরা বাংলা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের নির্বাচনি বোর্ড স্থগিত করেছি।উপাচার্য মহোদয় এই বোর্ড স্থগিত করেছেন।’

সোমবার বেলা ১১টায় বাংলা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড বসার কথা ছিল,তবে বোর্ডে অনুপস্থিত ছিলেন বিশেষজ্ঞ সদস্য অধ্যাপক ড. মহীবুল আজিজ ও বংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. তাসলিমা বেগম।

জানা গেছে, রোববার চবি আইন বিভাগ ও সোমবার বাংলা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের নির্বাচনি বোর্ডের সময় নির্ধারণ করা হয়। তবে দুই বিভাগের শিক্ষকদের অভিযোগ, পরিকল্পনা কমিটির সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে উপাচার্যের ‘বিশেষ ক্ষমতাবলে’ দেয়া হয় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি।শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজন নেই’ মর্মে দুই বিভাগের পরিকল্পনা কমিটি থেকে সিদ্ধান্ত দেয়া হলেও তা মানা হয়নি।অভিযোগ উঠেছে,পরিকল্পনা কমিটির এক প্রকার আপত্তির মুখেই এই দুই বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে নির্বাচনি বোর্ড ডাকা হয়েছে। এটিকে ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশের লঙ্ঘন বলছেন চবি শিক্ষক সমিতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা।

শিক্ষক সমিতির অবস্থানের মুখে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে উপাচার্যের কার্যালয় ত্যাগ করেন চবি উপাচার্য ও উপ উপাচার্যসহ নির্বাচনি বের্ডের সদস্যরা।

শিক্ষক সমিতির পক্ষ সংবাদ সম্মেলন থেকে বলা হয়েছে, উপাচার্যের বাসভবনে (ভিসি বাংলোতে) নির্বাচনি বোর্ডের সভা বসেছে।একইসঙ্গে এক চাকরিপ্রার্থীকে সঙ্গে নিয়েই প্রশাসনিক ভবন ত্যাগ করেছেন নির্বাচনি বোর্ডের এক সদস্য, এতে সহযোগিতা করেছে চবি প্রক্টরিয়াল টিম।

এদিন দ্বিতীয় দফায় উপাচার্যের সাক্ষাৎ পেতে ব্যর্থ হয় শিক্ষক সমিতি।শেষে সন্ধ্যা ৬টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করে চবি শিক্ষক সমিতি।

এ সময় আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. এবিএম আবু নোমান অভিযোগ করে বলেন,নির্বাচনি বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক নির্মল কুমার সাহা একজন প্রার্থীকে গাড়িতে করে নিয়ে চলে যান। ফলে এই নির্বাচনি বোর্ড নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।নির্বাচনি বোর্ডের একজন সদস্য হয়ে কখনোই এ ধরনের কাজ তিনি করতে পারেন না।’

চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল হক বলেন,উপাচার্য ও তারপন্থিরা নিজে থেকে বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছেন, নিজে থেকে বোর্ড বসাচ্ছেন।শিক্ষকরা যখন উনাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন,সভাপতির সঙ্গে অনেক রূঢ় আচরণ করেছেন তিনি।পরে তিনি আমাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য ছয়জনকে ডেকে নেন।সেখানে আমাদের এক ঘণ্টা বসিয়ে রাখার পর বলেন,আমাদের সঙ্গে কথা বলতে তিনি রাজি নন,তিনি নাকি অপমানিত বোধ করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘যেখানে তিনি নিজে আমাদের অপমানিত করেছেন,সেখানে তিনি অপমানিত বোধ করেছেন বলে আর কোনো কথা বলেননি।যথারীতি নির্বাচনি বোর্ডের যে সদস্যরা কিছু প্রার্থীদের নিয়ে প্রক্টরের গাড়িতে করে গোপনে একটি জায়গায় গিয়ে বোর্ডের প্রক্রিয়াটি চলমান রেখেছেন বলে আমাদের কাছে খবর আছে।’

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী বলেন,আমরা এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি করি নাই যে, উপাচার্য চুপিচুপি কয়েকজন প্রার্থীকে নিয়ে বাংলোতে চলে গেলেন নিয়োগ পরীক্ষা নেয়ার জন্য।বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন পরিস্থিতি দ্বিতীয়টি আর কখনো হয়নি।আমরা আগে শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে তার কাছে অনেক দাবি দিয়েছি,এখন আর দাবির প্রশ্ন আসে না। আজকের পরিস্থিতির আলোকে একটি দাবিই উত্থাপিত হয়েছে,সেটি হলো- উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ। দাবিটি বাস্তবায়নে সোমবার বেলা ১১ টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করব। এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’

এ সব বিষয়ে জানতে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার,আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. রকিবা নবী ও আইন বিভাগের অধ্যাপক নির্মল কুমার সাহাকে ফোন করা হলে তারা কেউ রিসিভ করেননি।

নিয়োগ বোর্ডে বসবেন না দুই সদস্য

এদিকে সোমবার অনুষ্ঠিতব্য বাংলা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের সভায় না বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চার সদস্যের দুইজন।

রোববার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে তারা বোর্ডে না বসার বিষয়টি জানান।

এই দুই সদস্য হলেন- অধ্যাপক ড. তাসলিমা বেগম এবং অধ্যাপক ড. মহীবুল আজিজ।

চিঠিতে তারা লেখেন,বিভাগের পরিকল্পনা কমিটির সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে আহুত এই সভাটি সম্পর্কে ইতোমধ্যে জাতীয় পত্রপত্রিকায় ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে৷এমতাবস্থায় উক্ত বিতর্কিত নিয়োগ বোর্ডে অংশগ্রহণ করা আমরা বিবেচনাপ্রসূত বলে মনে করছি না।’

এ বিষয়ে বোর্ডের বিশেষজ্ঞ সদস্য অধ্যাপক ড. মহীবুল আজিজ বলেন,শিক্ষক নিয়োগ নিয়মানুযায়ী হচ্ছে না; এটা অধ্যাদেশ পরিপন্থি।এখানে পরিকল্পনা কমিটিকে কোনো প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে না।তাই আমরা দুজন সদস্য এই বোর্ড সভায় যাচ্ছি না।’

বাংলা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের নির্বাচনি বোর্ড চার সদস্য নিয়ে গঠিত।বোর্ডের অপর দুই সদস্য হলেন- উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার এবং বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার সাঈদ।

আরও খবর

Sponsered content