অপরাধ-আইন-আদালত

সাংবাদিক প্রবীর সিকদারসহ চার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা

  প্রতিনিধি ২৫ আগস্ট ২০২২ , ৩:৫১:৪২ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:-উত্তারিধিকার ৭১ নিউজে দুটি সত্য ও তথ্যবহুল বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের পর মুক্তিযুদ্ধ ধারার দৈনিক বাংলা ৭১ ও উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের সম্পাদক, বিশিষ্ট সাংবাদিক প্রবীর সিকদারসহ চার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে (মামলা নং-২৭৩/২২)। মামলার অন্য তিন আসামিরা হলেন উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ও দৈনিক বাংলা ৭১ এর বিশেষ প্রতিনিধি গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অনলাইন নিউজ পোর্টাল তেপান্তর ডট কমের সম্পাদক সীমান্ত খোকন ও এর সংশ্লিষ্ট রিপোর্টার।

চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইবুনাল আদালতে গত ২৫ জুলাই মামলাটি করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক সীতানাথ সূত্রধরের ছেলে ব্যবসায়ী সুভাষ সূত্রধর।

এদিকে দেশের বরেণ্য সাংবাদিক প্রবীর সিকদারসহ চার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এই মামলার ঘটনায় বিভিন্ন মহলে নিন্দের ঝড় উঠেছে।

মামলার বিবরণে অভিযোগ করা হয়, প্রবীর সিকদারের সম্পাদনায় উত্তরাধিকার ৭১ নিউজে গত বছর ২০২১ সালের ২৮ মে ‘হামলাকারী সীতানাথ সূত্রধরের একমাত্র ছেলে সুভাষ সূত্রধরকে আজ সকালে চালান করা হয়েছে’ – শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে বাদীর মানহানী হয়।

এরপর চলতি বছর ২০২২ সালের ১৯ এপ্রিল একই পত্রিকায় (উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ) বাদীর পিতা সীতানাথ সূত্রধরের বিরুদ্ধে- ‘অপকর্মের প্রতিবাদ করায় নবীনগরে এক ব্যবসায়ীকে হত্যার হুমকী দিল সেই বিতর্কিত সীতানাথ’ শিরোনামে আরেকটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে বাদীর পিতার মানহানী হয় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।

মামলার বিবরণে বলা হয়, অনুরূপ দুটি সংবাদ একই শিরোনামে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিউজ পোর্টাল তেপান্তর ডট কমেও প্রকাশিত হয়।

মামলায় প্রকাশিত সংবাদ দুটিকে ‘মিথ্যা ও মানহানীকর’ দাবী করে এতে বাদী সুভাষ সূত্রধর ও তার পিতা নবীনগর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সীতানাথ সূত্রধরের সামাজিক ও কর্ম জীবনের মান সম্মান ক্ষুন্ন হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।

ফ্লাশব্যাক-
এদিকে উত্তরাধিকার নিউজের পক্ষ থেকে অনুসন্ধ্যান করে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে কথা বলে জানা গেছে, ২০২০ সালে করোনাকালে কর্মহীন হয়ে পড়া অসহায় গরীবদের জন্য বরাদ্দ হওয়া প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণের তালিকায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ নবীনগর শাখার সেক্রেটারী সীতানাথ সূত্রধর নিজে কোটিপতি হওয়া স্বত্বেও ওই গরীবের তালিকায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার একমাত্র ছেলে সুভাষ সূত্রধরের স্ত্রী (পুত্রবধূ), নিজের ভগ্নি, ভ্রাতুস্পুত্র, শ্যালকসহ নিকট আত্মীয়দের নাম অন্তভূর্ক্ত করেন।

এ নিয়ে সাংবাদিক গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু তার সে সময়ের কর্মস্থল দৈনিক কালের কণ্ঠে অনুসন্ধ্যানী রিপোর্ট করে সীতানাথের সেইসব স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম ও দুর্নীতির কাহিনী বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। এরপর সীতানাথের এই স্বজনপ্রীতি ও অপকর্মের জন্য বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া ঐক্যপরিষদের সংশ্লিষ্ট নেতাদের শোকজ করেন। কিন্তু শোকজের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায়, সীতানাথের অপকর্মের কারণে গোটা জেলার ত্রাণের তালিকাটি বাতিল করে দেন বিক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ । এতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার প্রায় দুই হাজার দরিদ্র হিন্দু পরিবার তখন প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত জনপ্রতি ২৫০০ টাকা করে ত্রাণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন।

এ ঘটনার পর সীতানাথ সূত্রধর ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিক গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু ও দৈনিক মানবকণ্ঠের স্থানীয় সাংবাদিক মিঠু সূত্রধর পলাশের বিরুদ্ধে বিগত দিনে দুটি মিথ্যে ও হয়রাণীমূলক মামলা করেন। যার একটি মানহানীর অভিযোগ এনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে (মামলা নং ১২৬/২১) এবং অপরটি সাত ধারা আইনে (২১৬/২২)।

অনুসন্ধ্যানে আরও জানা যায়, বিতর্কিত হিন্দু নেতা সীতানাথ সূত্রধর শুধু মামলা করেই ক্ষান্ত থাকেননি, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের সহযোগিতায় নবীনগর সদরের উপজেলা পরিষদ রোডে অবস্থিত স্থানীয় সাংবাদিক মিঠু সূত্রধর পলাশের ফার্ণিচার দোকানে সাংবাদিক গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপুর ওপর সীতানাথ সূত্রধর ও তার ছেলের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা গত বছরের ২৭ মে প্রকাশ্য দিবালোকে অতর্কিতে সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলা চালায়। ওই হামলার ঘটনার পর সাংবাদিক গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু নবীনগর থানায় সীতানাথ ও তার ছেলে সুভাষের বিরুদ্ধে মামলা করলে পুলিশ সুভাষ সূত্রধরকে গ্রেপ্তার করে পরদিন ২৮ মে কোর্টে চালান করে। আর এ নিয়েই ওইদিন উত্তরাধিকার ৭১ নিউজে ‘হামলাকারী সীতানাথ সুত্রধরের একমাত্র ছেলে সুভাষ সূত্রধরকে আজ সকালে আদালতে চালান করা হয়েছে’ শিরোনামে সংবাদটি প্রকাশিত হয়।

এদিকে অনুসন্ধ্যানে জানা যায়, নবীনগর কেন্দ্রীয় কালীবাড়িতে প্রায় দুই যুগ ধরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকার পরও সীতানাথ সূত্রধর কালীবাড়ির ‘সভাপতি’ পদে থেকে কালীবাড়ির লাখ লাখ টাকার কোন হিসাবপত্র দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় চলতি বছরের গোড়ার দিকে কালীবাড়িতে মিটিং চলাকালে সীতানাথের এসব নানা অনিয়মের প্রতিবাদ করায় গত এপ্রিল মাসে নবীনগর বাজারের ফার্ণিচার ব্যবসায়ী কালীপদ সূত্রধরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে তাকে ‘হত্যার হুমকী’ দেয় সীতানাথ সূত্রধর।

পরে নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ব্যবসায়ী কালীপদ সূত্রধর ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে সীতানাথ সূত্রধরের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং ৩১৯/২২)।

পরবর্তীতে ওই মামলার বরাত দিয়ে গত ১৯ এপ্রিল উত্তরাধিকার ৭১ নিউজে ‘অপকর্মের প্রতিবাদ করায় নবীনগরে ব্যবসায়ীকে হত্যার হুমকী দিল সেই বিতর্কিত সীতানাথ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এ বিষয়ে সাংবাদিক গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু বলেন,’যখন যা ঘটেছে, একজন সাংবাদিক হিসেবে আমি তা পত্রিকায় তুলে ধরেছি।

মূলত আমার সাহসী সাংবাদিকতাকে বন্ধ করতেই সীতানাথ একটি চিহ্নিত প্রভাবশালী মহলের সহযোগিতায় আমার বিরুদ্ধে একের পর এক এসব জঘণ্য মিথ্যে ও হয়ামরাণীমূলক মামলা করে যাচ্ছে। এসব হয়রাণীমূলক মিথ্যে মামলায় আমি আর্থিক, শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমি মারাত্মক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী। তাই একের পর এক মামলা দিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে আমাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। সেজন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর জোর প্রতিকার চাচ্ছি।’

সত্য নিউজ করার পর যদি একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এভাবে একের পর এক মিথ্যে ও হয়ারাণী মূলক মামলা দেয়া হয়, তাহলে সাংবাদিকতা আমরা করবো কিভাবে? তাই এসব মিথ্যে মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারসহ প্রয়োজনে আমি উভয় পক্ষকে সামাজিক নিষ্পত্তির মাধ্যমে বিষয়টির দ্রুত সুরাহা করার অনুরোধ করছি।’

নবীনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি সফিকুল ইসলাম শফিক বলেন,’গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু আমার আমলে থানা ছাত্রলীগ কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন। তিনি একজন সৎ ও সাহসী সাংবাদিক হিসেবে সব মহলে সুপরিচিত। এছাড়া তিনি একজন বলিষ্ঠ ও বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক সংগঠকও। তার মতো বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সত্যনিষ্ঠ, মেধাবী সাংবাদিক ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শপুত্র খ্যাত দেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের বিরুদ্ধে এরকম জঘণ্য মিথ্যে মামলা অকল্পনীয়। সীতানাথ সূত্রধর এসব হয়রাণীমূলক মিথ্যে মামলা করতে সাহস পায় কিভাবে, সেটি সবার আগে খুঁজে বের করতে হবে। তাই আমি সীতানাথের কঠোর বিচারসহ এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে সব মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি করছি।’

আরও খবর

Sponsered content