ব্যবসা ও বাণিজ্য সংবাদ

একক নেতৃত্বে গড়ে উঠা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ধারণাঃ-

  প্রতিনিধি ৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ১:৪৪:৪৮ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।। সবচেয়ে আদি এবং সর্বাধিক জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান হচ্ছে একক নেতৃত্বে পরিচালনা করা। উদ্ভবের ঊষালগ্নেই এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের জন্ম এবং আজঅবধি একক নেতৃত্বের প্রতিষ্ঠান গুলো উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এরূপ প্রতিষ্ঠান সর্বাধিক জনপ্রিয় এবং এর গঠন পদ্ধতিও অত্যন্ত সহজ।

একক উদ্যোক্তা নিজ দায়িত্বে নিজস্ব তহবিল থেকে, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে কিংবা ব্যাংক বা এ জাতীয় অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান হতে ঋণ গ্রহণ করে মূলধন সরবরাহ করে থাকে।

একক নেতৃত্বের প্রতিষ্ঠান গুলো বিশ্বের সর্ব প্রাচীন ধরনের প্রতিষ্ঠান। অতীত কাল হতেই এরূপ নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতি সাধিত হয়ে আসছে ভবিষ্যতেও হবে। একথা নিশ্চিত করেই বলা চলে যে, সুদূর ভবিষ্যতেও একক নেতৃত্বে গড়ে উঠা প্রতিষ্ঠানের জয় জয়কার অব্যাহত থাকবে।

একজনের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হওয়াকে একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠান বলে।

এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের একজনই প্রধান উদ্যোক্তা থাকেন যিনি প্রতিষ্ঠানের প্রধান আয়োজক ও ব্যবস্থাপক। তিনি কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের সমস্ত পুঁজি সংগ্রহ করেন এবং এর ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
প্রধান উদ্যোক্তা একাই , ঝুঁকি বহন করেন ও লাভ-লোকসানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

একক নেতৃত্বের প্রতিষ্ঠান কতিপয় স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের কারণে সৃষ্টির আদিকাল হতে অদ্যাবধি জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে।

উদ্যোক্তার একক নেতৃত্বঃ
তিনি একাধারে যেমন কর্মপরিকল্পনার উদ্যোগ গ্রহণ করেন, মুলধন সংগ্রহ ও কার্যক্রমের প্রকৃতি নির্ণয় করে থাকেন, তেমনি প্রতিষ্ঠানের সাফল্য ও ব্যর্থতার জন্য তিনিই এককভাবে দায়ী থাকেন।

সহজ গঠনঃ
একক নেতৃত্বের প্রতিষ্ঠান সর্বাপেক্ষা সহজসাধ্য, স্বল্পসময় সাপেক্ষ, কম ব্যয়বহুল এবং আইনের জটিলতা মুক্ত সমাজের যে কোনো ব্যক্তি যে কোন সময় অত্যন্ত সহজভাবে এরুপ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারেন।

মূলধন সরবরাহঃ
উদ্যোক্তা এককভাবে নিজ দায়িত্বে প্রতিষ্ঠানের মূলধন সরবরাহ করে থাকেন। এরূপ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা নিজ তহবিল হতে, বন্ধু বা আত্মীয়স্বজন কিংবা ব্যাংকের নিকট হতে ঋণ গ্রহণ করে মূলধন সংগ্রহ করে থাকেন।

পৃথক সত্তাহীনতাঃ
আইনের চোখে একক নেতৃত্বের প্রতিষ্ঠানের কোনোরূপ পৃথক সত্তা নেই। এক্ষেত্রে কর্মপরিকল্পনা উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের সাথে একাত্ম ও অভিন্ন। প্রতিষ্ঠানের নামে কোনোরূপ মামলা দায়ের করার অর্থ পক্ষান্তরে উদ্যোক্তার নামেই মামলা দায়ের বোঝাবে।

সীমাহীন দায়ঃ
একক নেতৃত্বের প্রতিষ্ঠানের দায়দায়িত্ব অসীম। প্রতিষ্ঠানের যে কোনো প্রকার ঋণের জন্য প্রধান উদ্যোক্তা ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকেন। অর্থাৎ ব্যবসায়ের ঋণ পরিশোধের নিমিত্তে প্রয়োজন হলে প্রধান উদ্যোক্তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা চলে।

আয়তনঃ
শুরুতে একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠানের আয়তন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্ষুদ্র হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে একজন উদ্যোক্তা এককভাবে মূলধন বিনিয়োগ করেন বলে প্রতিষ্ঠানের আয়তন বৃদ্ধি করা সম্ভব হয় না। পরবর্তীকালে বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠান হিসাবে পরিচালিত হয়।

একক ঝুঁকি
একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠানের সমস্ত ঝুঁকি একা প্রধান উদ্যোক্তাকে বহন করতে হয়। কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কোনোরূপ লোকসান হলে এর দায়িত্ব পুরোটাই প্রধান উদ্যোক্তাকে গ্রহণ করতে হয়।

ব্যক্তিগত নিয়ন্ত্রণঃ
প্রধান উদ্যোক্তা তার বুদ্ধি, অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞার দ্বারা নিজ দায়িত্বে ব্যক্তিগতভাবে প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।

প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানঃ
একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠানের প্রধান উদ্যোক্তা নিজেই পরিকল্পনা তৈরি করেন, নীতি প্রণয়ন করেন এবং লক্ষ্যে উপনীত হবার জন্য প্রতিষ্ঠানের কার্যাদি পরিচালনা বা তত্ত্বাবধান করে থাকেন।

সামাজিক উন্নয়নঃ
প্রধান উদ্যোক্তার ইচ্ছানুসারে গঠিত ও পরিচালিত হয় বলে সমাজের প্রয়োজনানুসারে প্রতিষ্ঠানের কার্য পরিচালনা, বণ্টন ও চাকরি প্রদান করে সমাজের প্রভূত উন্নয়ন সাধন করা সম্ভব।

দ্রুত সিদ্ধান্তঃ

প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে কখনো কখনো দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। একক নেতৃত্বের প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রধান উদ্যোক্তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বিধায় যে কোনো সিদ্ধান্ত দ্রুত গ্রহণ করা সম্ভব হয়।

আলোচ্য একক নেতৃত্বের প্রতিষ্ঠানের এসব বৈশিষ্ট্য থেকে বোঝা যায় অর্থনীতি ও সমাজের জন্য এ প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব কতখানি। আসুন তাহলে জেনে নেয়া যাক এ প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে।

একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তাঃ

যে কোনো দেশের অর্থনীতিতে একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত। ক্ষুদ্রায়তনের একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠানের সূচনা হয়েছিল সেই প্রাচীনযুগে। আর তখণ থেকে অদ্যাবধি এ প্রতিষ্ঠানের যে অব্যাহত আধিপত্যা আমরা দেখতে পাই তা থেকে সহজেই এর গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়।

আত্ম-কর্মসংস্থানঃ
স্বল্প আয়ের লোকেরা তাদের সুবিধামত যে কোনো স্থানে অল্প পুঁজি ও সামান্য লোকবল নিয়ে কোনো দ্রব্য উৎপাদন বা ব্যবসায়ে নিয়োজিত হতে পারে। ফলে বহুলোক নিজেরাই নিজেদের কর্মসংস্থান করে নিতে পারে। এতে বেকারত্ব হ্রাস পায় এবং লোকজনের আয়ও বাড়ে।

সম্পদের সুষম বণ্টনঃ
শুরুতে ক্ষুদ্রায়তন বিশিষ্ট হওয়ায় দেশের শহর-গ্রাম নির্বিশেষে সকল স্থানে ব্যাপকভাবে উদ্যোক্তা গড়ে ওঠে। অন্যান্য বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠানের ন্যায় এক্ষেত্রে সম্পদ সীমিত ব্যক্তির হাতে পুঞ্জিভূত হওয়ার সম্ভাবনা কম, এতে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত হয়।

স্বল্প মূলধনে উদ্যোক্তাঃ
একক নেতৃত্বের প্রতিষ্ঠানে স্বল্প মূলধনে কার্যক্রম শুরু করা যায় । ফলে সমাজের সকল শ্রেণির লোক অতি সহজেই এরূপ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে।

প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহারঃ
দেশের ভেতর প্রাপ্তব্য প্রাকৃতিক সম্পদকে যথাযথভাবে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠান যথেষ্ট অবদান রাখে। বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজন তাদের এলাকায় যেসব সম্পদ পাওয়া যায় তা ব্যবহার করে অতি সহজেই এ কার্যক্রম শুরু করতে পারে।

জীবনযাত্রার মানোন্নয়নঃ
শুরুতে ক্ষুদ্রায়তনের হলেও এরূপ ব্যবসায় সারাদেশে বিস্তৃতির মাধ্যমে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর আয় ও সম্পদ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, অন্যদিকে জনগণের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবা সরবরাহ করে তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মূলধন গঠন ও বিনিয়োগঃ
শুরুতে একক নেতৃত্বের প্রতিষ্ঠানে কার্যক্রম স্বল্প পুঁজির। এ কার্যক্রমে বিনিয়োগের লক্ষ্যে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সঞ্চয়প্রবণ হয়ে মূলধন গঠন করে। ফলশ্রুতিতে দেশের সামগ্রিকভাবে মূলধন গঠন এবং বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের সম্প্রসারণঃ
একক নেতৃত্বের প্রতিষ্ঠান দেশের ব্যবসা- বাণিজ্য সম্প্রাসারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। একদিকে যেমন এ কার্যক্রম দেশের সকল প্রান্তের মানুষের কাছে পৌঁছাবার নিশ্চয়তা দেয় অন্যদিকে এ ধরনের অর্জিত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন কার্যক্রম ও প্রতিষ্ঠান স্থাপনে উদ্যোগী হয়। এতে প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে।

পরিবর্তনের সাথে সংগতি বিধানঃ
বিভিন্ন ধরনের পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেয়ার ক্ষমতা একক নেতৃত্বে গড়ে উঠা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বের পেছনে একটি বড় কারণ। পরিবর্তিত অবস্থার প্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত সে সম্পর্কে এ প্রধান উদ্যোক্তা সম্যক অবগত থাকেন এবং সে অনুযায়ী দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন।

উত্তম প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রেঃ
একক নেতৃত্বের প্রতিষ্ঠানের প্রধান উদ্যোক্তা ক্ষুদ্রায়তন কার্যক্রমের গঠন ও পরিচালনার মাধ্যমে যে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেন তা তাকে বৃহদায়তন কার্যক্রম প্রতিষ্ঠার জন্য যোগ্য করে গড়ে তোলে, অর্থাৎ এটি একটি প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়

উদ্যোক্তা সৃষ্টিঃ
স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগের মাধ্যমে কার্যক্রম ঠিক ভাবে গড়ে তোলার সুযোগ থাকায় সমাজের অনেক লোকই এ কার্যক্রমের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ফলে সমাজে উদ্যোক্তা শ্রেণির সৃষ্টি হয়। কর্মপরিকল্পনা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

জাতীয় আয় ও সম্পদ বৃদ্ধিঃ
জাতীয় আয় ও সম্পদ একক উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব অপরিসীম কেননা দেশের আনাচেকানাচে এ ব্যবসায়ের বিস্তার লাভের ফলে বহুলোকের আয়ের পথ প্রশস্ত হয় ও ব্যক্তিগত সম্পদ বৃদ্ধি পায় যা জাতীয় আয় ও সম্পদ বৃদ্ধিরই নামান্তর।

জনসেবাঃ
শুরুতে ক্ষুদ্রায়তন হবার ফলে দেশের সর্বত্র এ কার্যক্রম গড়ে ওঠে। ফলে উদ্যোক্তার প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সেবা সকল জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানোর মাধ্যমে জনগণের সেবাদান করে।

সুতরাং শুরুতে ক্ষুদ্রায়তন বিশিষ্ট প্রতিষ্ঠান হলেও একক উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম যে কোনো দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সে কারণে পৃথিবীর সকল দেশে এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাই অধিক।

আরও খবর

Sponsered content