শিক্ষা

দূর্গম পাহাড়ী এলাকায় তিনটি ছাত্রাবাস এক যুগেও চালু হয়নি

  প্রতিনিধি ৩ জুলাই ২০২৩ , ৩:৫৭:২৬ প্রিন্ট সংস্করণ

খাগড়াছড়ি জেলা।।খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য নির্মাণ করা তিনটি ছাত্রাবাস এক যুগেও চালু হয়নি।এতে একদিকে যেমন পাহাড়ের শিক্ষার্থীরা অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে; অন্যদিকে অযন্ত-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে ছাত্রাবাসের অবকাঠামো।

এদিকে জনবল সংকটের কারণে ছাত্রবাসগুলো চালু করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,২০১১ সাল দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সুবিধার্থে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি দ্বিতীয় পর্যায়ের (পিডিইপি-২) আওতায় লক্ষ্মীছড়িতে একটি ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হয়।

জেলা সদর থেকে ৬২ কিলোমিটার দূরে দুর্গম এলাকায় নির্মাণ করা এ ছাত্রাবাসটি এখন পর্যন্ত চালু করা হয়নি বলে জানান লক্ষ্মীছড়ি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিজয় কুমার চাকমা।

তিনি বলেন,বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৯৬।তাদের অনেকেই দুর্গম এলাকার বাসিন্দা।ছাত্রাবাসে ৪০ ছাত্র ও ৪০ ছাত্রী থাকার মতো প্রয়োজনীয় অবকাঠামো রয়েছে। তবে এখনও চালু হয়নি।

“অনেক শিক্ষার্থী দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে আসে। ২০১৮ সালে বন্যায় ছাত্রাবাসের রান্নাঘর ও সীমানা প্রাচীর নষ্ট হয়ে গেছে। তা এখনও মেরামত করা হয়নি। এটি মেরামত শেষে চালু হলে দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমবে।”

খাগড়াছড়ির পানছড়ি বাজার মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস।একই প্রকল্পের আওতায় পানছড়ি ও মানিকছড়িতে দুটি ছাত্রাবাস নির্মাণ হলেও তা চালু করতে পারেনি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে,তিন ছাত্রাবাস নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা। প্রতিটি ছাত্রাবাসে ৮০ জন শিক্ষার্থীর জন্য চেয়ার,টেবিল,খাটসহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র রয়েছে। ছাত্রাবাসে বিদ্যুৎ সংযোগের পাশাপাশি সৌর প্যানেলও স্থাপন করা হয়েছে।

সব ধরনের অবকাঠামো থাকলেও জনবল না থাকায় তা চালু করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

ছাত্রাবাস চালু না হওয়ায় দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীর হার কমছে বলে জানিয়েছেন পানছড়ি বাজার মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিপাশা সরকার।

একযুগেও চালু হয়নি দুর্গম পাহাড়ের ৩ ছাত্রাবাস
তিনি বলেন,“ছাত্রাবাসটি চালু হলে ভালো হত। অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেত। আবাসিক সুবিধা থাকলে দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত হত।

“দুর্গম এলাকা থেকে বিদ্যালয়ে আসা অন্তত ২৫ শিক্ষার্থী আশপাশে বাসা ভাড়া নিয়ে পড়াশোনা করছে।ছাত্রাবাস চালু না হওয়ায় অনেক খাট,পড়ার টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। গত বছর ছাত্রাবাসের সীমানা প্রাচীরও ভেঙে গেছে।”

মানিকছড়ির রাজবাড়ি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ক্যজ মারমা বলেন, “ছাত্রাবাসের আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।তবে সীমানা প্রাচীরসহ মূল স্থাপনা ঠিক আছে। ছাত্রাবাসের সোলার প্যানেল ঠিক থাকলেও ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গেছে।

“কয়েকদিন আগে উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় থেকে ছাত্রাবাসের বর্তমান অবস্থা জানতে চেয়েছে।লিখিতভাবে তাদের জানানো হয়েছে।ছাত্রাবাস চালু হলে দুর্গম এলাকা থেকে শিক্ষার্থীর হার বাড়বে।”

একযুগেও চালু হয়নি দুর্গম পাহাড়ের ৩ ছাত্রাবাস
খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য এলাকার প্রাথমিক শিক্ষার দেখাশুনার ভার জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ছাত্রাবাসগুলো দ্রুত চালু করার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও পার্বত্য জেলা পরিষদের মাধ্যমে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

লক্ষ্মীছড়ি ও পানছড়ির দুই ছাত্রাবাস সংস্কারে নতুন করে এক কোটি ৬৭ লাখ টাকার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।বরাদ্দ না পাওয়ায় ছাত্রাবাসগুলো চালু করা যাচ্ছে না। এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তও আসেনি বলে জানায় সূত্রটি।

বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোসাদ্দেক হোসেন। তিনি সম্প্রতি এ জেলায় যুক্ত হয়েছেন, তাই ছাত্রবাস বন্ধের বিষয়ে কিছু জানেন না বলে এ প্রতিনিধিকে জানান।

ছাত্রাবাসগুলো নির্মাণের পরও কেন চালু হচ্ছে না তা দেখতে কয়েকদিন আগে পরিদর্শনে যান প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) টিটন খীসা বলেন,ছাত্রাবাসগুলো চালু করার জন্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।আশা করি,এবার সমস্যার সমাধান হবে।ছাত্রাবাস চালু হলে সুবিধা পাবে প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষার্থীরা।

আরও খবর

Sponsered content