প্রতিনিধি ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ , ৩:২২:১৮ প্রিন্ট সংস্করণ
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি।।স্ত্রীকে কিছু না জানিয়ে প্রবাসী স্বামীর ডিভোর্স—শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলায় ঘটেছে এমনই এক হৃদয়বিদারক ঘটনা,যা মানবিকতা,বিশ্বাস ও আইনের প্রশ্নে সমাজকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।

দুই মাসের ছুটি নিয়ে প্রবাস থেকে দেশে আসেন ওই ব্যক্তি। এই সময়টাতে স্ত্রীকে নিয়ে সংসার করেন স্বাভাবিকভাবেই। ভালোবাসা,ঘনিষ্ঠতা,পারিবারিক সম্পর্ক—সবকিছুই ছিল স্বাভাবিক ও মধুর। স্ত্রী বিশ্বাস করেছিলেন,তার দাম্পত্য জীবন নিরাপদ,ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ।
কিন্তু এই স্বাভাবিকতার আড়ালেই লুকিয়ে ছিল ভয়ংকর এক প্রতারণা।
দেশ ছাড়ার সময় স্ত্রীকে একবারও কিছু না জানিয়ে, কোনো কারণ ব্যাখ্যা না করেই তিনি আইনি প্রক্রিয়ায় ডিভোর্স দিয়ে দেশ ত্যাগ করেন।স্ত্রী তখনো কিছুই জানেন না—না কাগজে, না মুখে।
স্বামী বিদেশে চলে যাওয়ার পর স্ত্রী বাবার বাড়িতে বেড়াতে যান। সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি দেখেন—নিজের সংসারের দরজায় ঝুলছে তালা।শ্বশুর-শাশুড়ি নেই,ঘর ফাঁকা।খোঁজ নিয়ে জানা যায়,শ্বশুর-শাশুড়ি মেয়ের বাড়িতে চলে গেছেন।
কারণ জানতে চাইলে যে উত্তর তিনি পান,তা যেন মুহূর্তেই তার পৃথিবী ভেঙে দেয়—
“আমাদের ছেলে তোমাকে ডিভোর্স দিয়েছে।এই বাড়িতে তোমার আর কোনো জায়গা নেই।”
এই কথা শুনে স্ত্রীর মাথায় যেন সপ্তম আকাশ ভেঙে পড়ে। কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।ভাষা হারিয়ে ফেলেন।যাকে তিনি প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন,বিশ্বাস করতেন—সেই মানুষটিই তাকে একেবারে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছেন।
প্রশ্ন উঠছে—
🔹 স্ত্রীকে না জানিয়ে ডিভোর্স কতটা নৈতিক?
🔹 এমন সিদ্ধান্তের আগে কি কোনো পারিবারিক বা সামাজিক দায় ছিল না?
🔹 প্রবাসী স্বামীরা কি দূরত্ব ও আইনি ফাঁকফোকরকে ব্যবহার করে স্ত্রীদের সঙ্গে এমন আচরণ করতে পারেন?
আইন অনুযায়ী ডিভোর্সের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া ও নোটিশ প্রদানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।কিন্তু বাস্তবে বহু নারীই এসব নোটিশ সম্পর্কে কিছুই জানতে পারেন না—বিশেষ করে যখন স্বামী প্রবাসে থাকেন এবং পারিবারিক প্রভাব খাটানো হয়।
এই ঘটনাটি কেবল একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়; এটি প্রবাসী স্বামীদের দ্বারা স্ত্রীদের প্রতি অবহেলা,প্রতারণা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের এক নির্মম উদাহরণ।সমাজ ও রাষ্ট্র যদি এসব ঘটনায় নীরব থাকে,তবে ভুক্তভোগী নারীদের জন্য ন্যায়বিচার কেবল কাগজেই থেকে যাবে।
টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারের এই ঘটনা প্রমাণ করে—বাস্তবতা কখনো কখনো সিনেমাকেও হার মানায়।কিন্তু এই বাস্তবতায় একজন নারীর ভেঙে যাওয়া জীবন,বিশ্বাসের মৃত্যু আর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ—এর দায় কে নেবে?

















