রাজনীতি

১৭ বছর পর তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনঃ-আইনের শাসনের কফিনে শেষ পেরেক,নাকি ক্ষমতার পালাবদলের আইনি নাটক?

  প্রতিনিধি ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ , ১২:০৪:১৯ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।১৭ বছর পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনকে দলীয় রাজনীতিতে ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ হিসেবে উপস্থাপন করা হলেও,বাস্তবে এটি বাংলাদেশের আইনের শাসন,বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও সাংবিধানিক ভারসাম্যের জন্য এক ভয়াবহ নজির হয়ে উঠছে।

এটি কোনো সাধারণ প্রত্যাবর্তন নয়—এটি একটি রাষ্ট্র কীভাবে আইনকে রাজনৈতিক প্রয়োজন অনুযায়ী ভাঁজ করে,তার নগ্ন দলিল।

গ্রেফতার ও মামলা: বিচার না হয়রানি—রাষ্ট্রের দায় এড়ানোর কৌশল?

২০০৭ সালের ৭ মার্চ তারেক রহমান গ্রেফতার হন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তাঁর বিরুদ্ধে মোট ৭২টি মামলা দায়ের হয়।

আইনি প্রশ্ন:

🔹 ফৌজদারি কার্যবিধি (CrPC) ১৯০ ধারা অনুযায়ী মামলা দায়েরের উদ্দেশ্য অপরাধ বিচার—

> তাহলে ১৭ বছরেও অধিকাংশ মামলার বিচার শেষ না হওয়া কি রাষ্ট্রীয় অক্ষমতা,নাকি ইচ্ছাকৃত বিলম্ব?

🔹 সংবিধানের ৩১ ও ৩৫ অনুচ্ছেদ (আইনের সমতা ও ন্যায়বিচারের অধিকার) অনুযায়ী—

> কাউকে বছরের পর বছর বিচার ছাড়াই ঝুলিয়ে রাখা কি মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন নয়?

বিদেশযাত্রা ও ‘পলাতক’ নাটক: আইন প্রয়োগের ভণ্ডামি

২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তির রাতেই তারেক রহমান লন্ডনে যান চিকিৎসার জন্য। এরপর—

পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ

আদালতের চোখে তিনি “পলাতক”

অথচ ইন্টারপোল নোটিশ, প্রত্যর্পণ চুক্তি বা কার্যকর কূটনৈতিক উদ্যোগ—কোনোটিই দৃশ্যমান নয়

প্রশ্ন:

❓ CrPC ৮৭ ও ৮৮ ধারা অনুযায়ী পলাতক আসামির বিরুদ্ধে রাষ্ট্র কেন সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত বা প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া চালায়নি?
❓ নাকি “পলাতক” তকমা ছিল শুধু রাজনৈতিক ভাষ্য?

রাষ্ট্র যদি আন্তরিক হতো, ১৭ বছর একজন “পলাতক” বিদেশে রাজনৈতিক দল চালাতে পারতেন না।

রাষ্ট্রপতির খালাস: সংবিধান ভাঙার সাংবিধানিক দৃষ্টান্ত?

গণঅভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে তারেক রহমান একাধিক মামলায় খালাস পান।

এখানেই রাষ্ট্র সবচেয়ে ভয়ংকর সীমা অতিক্রম করে।

🔴 সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ রাষ্ট্রপতিকে দয়া, ক্ষমা বা সাজা মওকুফের ক্ষমতা দেয়—
➡️ কিন্তু বিচারিক “খালাস” দেওয়ার ক্ষমতা দেয় না।

গুরুতর সাংবিধানিক প্রশ্ন:

❓ রাষ্ট্রপতি কি বিচার বিভাগের জায়গায় বসে রায় দিতে পারেন?
❓ যদি পারেন,তাহলে বিচার বিভাগ কেন প্রয়োজন?
❓ এটি কি ক্ষমতার বিভাজন নীতি (Separation of Powers)-এর সরাসরি লঙ্ঘন নয়?

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে,

> “সাজা মওকুফ ≠ নির্দোষ ঘোষণা”
এই সীমা ভাঙা মানে সংবিধানকে রাজনৈতিক চুক্তিপত্রে নামিয়ে আনা।

বিশেষ নাগরিক তারেক রহমান?

২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমান যেভাবে দেশে ফিরলেন,তা সাধারণ নাগরিকদের জন্য এক নির্মম প্রশ্ন ছুড়ে দেয়—

হাজারো প্রবাসী মামলা ঝুলে থাকায় দেশে ফিরতে পারে না

পাসপোর্ট জটিলতায় মানুষ বছরের পর বছর আটকে থাকে

অথচ একজন ‘পলাতক ঘোষিত’ রাজনীতিক সব বাধা অদৃশ্য করে নির্বিঘ্নে প্রত্যাবর্তন করেন

সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ:

> “আইনের দৃষ্টিতে সকল নাগরিক সমান”
তাহলে প্রশ্ন—
❓ এই সমতা কি কেবল কাগজে?
❓ ক্ষমতার উত্তরাধিকার কি আইনের ঊর্ধ্বে?

বিএনপি পুনর্বাসন না রাষ্ট্রীয় আত্মসমর্পণ?

তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন বিএনপির রাজনীতিতে নতুন গতি আনতে পারে।
কিন্তু রাষ্ট্রের জন্য এটি এক আত্মঘাতী দৃষ্টান্ত—

আজ তারেক
কাল আরেক ক্ষমতাবান
পরশু যে কেউ
যেখানে মামলা থাকবে,বিচার হবে না—ক্ষমতা এলে সব মাফ।

চূড়ান্ত প্রশ্ন: অপরাধী কে—ব্যক্তি না রাষ্ট্র?

তারেক রহমান নির্দোষ হলে—
❓ ১৭ বছর ধরে তাঁকে কেন অপরাধীর মতো ঝুলিয়ে রাখা হলো?

আর যদি নির্দোষ না হন—
❓ কোন আইনে,কোন আদালতে,কোন রায়ে তিনি হঠাৎ বৈধ হলেন?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর না থাকলে,ইতিহাস বলবে—
👉 এই প্রত্যাবর্তন কোনো ব্যক্তির মুক্তি নয়,বরং রাষ্ট্রের আইনি আত্মসমর্পণ।

আরও খবর

Sponsered content