প্রতিনিধি ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ , ১১:২৯:৪৪ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক।।দীর্ঘ ১৮ বছর বিদেশে অবস্থানের পর আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।কিন্তু তিনি ফিরছেন একজন সাধারণ নাগরিক কিংবা রাজনৈতিক নেতা হিসেবে নয়—ফিরছেন আইন বদলে তৈরি করা বিশেষ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ছত্রছায়ায়।অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁকে দেওয়া হচ্ছে ‘ভেরি ইম্পর্টেন্ট পারসন’ (ভিআইপি) মর্যাদা এবং রাষ্ট্রীয় বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (এসএসএফ)-এর পূর্ণ প্রটোকল—যা এতদিন শুধুমাত্র রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের জন্য সংরক্ষিত ছিল।

এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে প্রশ্ন উঠছে—অন্তর্বর্তী সরকার কি নিরপেক্ষতার সীমা লঙ্ঘন করে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাকে রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের মাধ্যমে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে?
এক নজরে বিতর্কিত সিদ্ধান্তগুলো
একজনের জন্য আইন সংশোধন: ২০২১ সালের এসএসএফ আইন তড়িঘড়ি করে সংশোধন—লক্ষ্য একটাই,তারেক রহমানকে এসএসএফের আওতায় আনা
রাষ্ট্রপ্রধানের সমতুল্য নিরাপত্তা: রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত এলিট ফোর্স এখন একজন দলীয় নেতার ব্যক্তিগত নিরাপত্তায়
ভিআইপি ঘোষণার প্রজ্ঞাপন: সরকারি গেজেট জারি করে তাকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ বানানো
রাষ্ট্রীয় অর্থে নিরাপত্তা বিলাস: বাসভবন,অফিস,রাজনৈতিক কর্মসূচি ও সম্ভাব্য নির্বাচনী তৎপরতায় এসএসএফ মোতায়েন
আইন কি রাষ্ট্রের,নাকি ব্যক্তির সুবিধার জন্য?
স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রপতি,প্রধানমন্ত্রী ও সমমানের রাষ্ট্রীয় প্রধানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।কিন্তু গত ২৩ ডিসেম্বর, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে সেই দীর্ঘদিনের আইন ও নীতিমালায় মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়।
বিশ্লেষকদের মতে,এই সংশোধন কোনো জাতীয় নিরাপত্তা প্রয়োজনের কারণে নয়,বরং একজন নির্দিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিকে সুবিধা দিতে আইনকে ব্যবহার করার স্পষ্ট উদাহরণ। প্রশ্ন উঠছে—যে ব্যক্তি কোনো সাংবিধানিক পদে নেই, সরকারপ্রধান নন,রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে নেই—তিনি কীভাবে এসএসএফের আওতায় আসেন?
রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের রাজনৈতিক ব্যবহার
‘নর্থইস্ট নিউজ’-এর তথ্যানুযায়ী, নতুন নির্দেশনার ফলে তারেক রহমানের—
ব্যক্তিগত বাসভবন
রাজনৈতিক কার্যালয়
দলীয় বৈঠক
ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ও নির্বাচনী কর্মসূচি
সবখানেই রাষ্ট্রীয় অর্থে এসএসএফ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন।
গোয়েন্দা ঝুঁকি মূল্যায়নের অজুহাত দেখানো হলেও,নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের প্রশ্ন—তাহলে দেশের অন্যান্য শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা,সাবেক প্রধানমন্ত্রী,বিরোধী দলের নেতারা এই নিরাপত্তা পান না কেন?
অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নের মুখে
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে,একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান দায়িত্ব হলো নিরপেক্ষতা বজায় রেখে নির্বাচন ও রাষ্ট্র পরিচালনা করা।সেখানে একটি নির্দিষ্ট দলের শীর্ষ নেতাকে—
ভিআইপি ঘোষণা
আইন সংশোধন
সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা
দেওয়া ক্ষমতার অপব্যবহার এবং পক্ষপাতদুষ্ট রাষ্ট্রীয় আচরণের স্পষ্ট নজির।
অর্থনৈতিক সংকটে ব্যয়বহুল নিরাপত্তা—কার স্বার্থে?
যখন সরকার সাধারণ মানুষকে বলছে—
ভর্তুকি কমাতে হবে
ব্যয় সংকোচন জরুরি
সংস্কারের জন্য ত্যাগ স্বীকার প্রয়োজন
তখন প্রশ্ন উঠছে—একজন রাজনৈতিক নেতার জন্য এসএসএফের মতো ব্যয়বহুল এলিট ফোর্স মোতায়েনের অর্থ আসছে কোথা থেকে,এবং কার স্বার্থে?
উপসংহার: আইন কি সবার জন্য সমান?
তারেক রহমানের দেশে ফেরা একটি রাজনৈতিক ঘটনা হতে পারে।কিন্তু আইন বদলে,রাষ্ট্রীয় মর্যাদা বানিয়ে,জনগণের টাকায় বিশেষ নিরাপত্তা দিয়ে সেই ফেরা আয়োজন করা—এটি স্পষ্টতই একটি রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত, যার দায় সরকার এড়াতে পারে না।
আজ প্রশ্ন উঠছে—
👉 আইন কি রাষ্ট্র রক্ষার জন্য,নাকি ক্ষমতাবানদের সুরক্ষার জন্য?
👉 অন্তর্বর্তী সরকার কি ধীরে ধীরে রাজনৈতিক পক্ষপাতের পথে হাঁটছে?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তরই নির্ধারণ করবে—রাষ্ট্র সত্যিই নিরপেক্ষ আছে,নাকি পর্দার আড়ালে নতুন বন্দোবস্তের জন্ম হচ্ছে।















