রাজনীতি

হাদি ইস্যুর পর্দা ফাঁস:নারী সংগঠনের আড়ালে রাজনৈতিক নেটওয়ার্ক? রাইহানা সুলতানা নাসিমকে ঘিরে অনুসন্ধান

  প্রতিনিধি ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ , ১:৩৪:৫০ প্রিন্ট সংস্করণ

বিশেষ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।।হাদি ইস্যুতে ভাইরাল বক্তব্যের পর এক নারী নেত্রীকে ঘিরে যে বিতর্ক শুরু হয়েছিল,তা এখন একটি বড় প্রশ্নে রূপ নিয়েছে—নারী ক্ষমতায়নের ব্যানারে রাজনৈতিক অপব্যবহার হচ্ছে কি না।এই বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে এসেছেন রাইহানা সুলতানা নাসিম;তার পরিচয়,সংগঠনিক অবস্থান ও নেটওয়ার্ক নিয়ে একাধিক গুরুতর দাবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত।

🧾 পরিচয় ও অবস্থান: যা জানা যাচ্ছে

উন্মুক্ত সূত্র,অনলাইন ডাটাবেস ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত তথ্য অনুযায়ী—

নাম: রাইহানা সুলতানা নাসিম

করপোরেট পরিচয়: কেয়ারি লিমিটেডের পরিচালক

সংগঠনিক পদ: ‘সম্মিলিত নারী প্রয়াস’-এর কোষাধ্যক্ষ

পারিবারিক পরিচয় (দাবিকৃত): যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর বড় ভাই মীর নাসিম আলীর কন্যা—এমন দাবি ব্যাপকভাবে প্রচারিত

উল্লেখ্য, পারিবারিক পরিচয় সংক্রান্ত দাবিগুলো এখনো সরকারি নথি বা আদালতের মাধ্যমে নিশ্চিত নয়।

🔍 ‘সম্মিলিত নারী প্রয়াস’: কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন

সংগঠনটি নিজেকে নারী স্বনির্ভরতা ও সামাজিক উন্নয়নের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে উপস্থাপন করলেও সমালোচকরা কয়েকটি মৌলিক প্রশ্ন তুলছেন—

সংগঠনটির আইনগত নিবন্ধন,অর্থায়নের উৎস ও ব্যয়ের স্বচ্ছতা কোথায়?

কেন তাদের কর্মসূচি বারবার রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর সময়ের সঙ্গে মিলছে?

মাঠপর্যায়ে অংশগ্রহণকারীদের নির্বাচন ও প্রশিক্ষণের ধরন কেন একই ধাঁচের ও কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত বলে মনে হচ্ছে?

জুলাই–আগস্ট কর্মসূচি: স্বতঃস্ফূর্ততা বনাম সংগঠিত উদ্যোগ

গত জুলাই–আগস্টে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে নারীদের থালা-বাসন হাতে কর্মসূচি দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়। পরবর্তীতে অনলাইনে দাবি ওঠে—

অংশগ্রহণকারীদের একটি বড় অংশ একই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত

বার্তা,ভিজ্যুয়াল ও সমন্বয় ছিল অভিন্ন

প্রশ্ন উঠছে,এটি কি পরিকল্পিত সংগঠনিক কর্মসূচি ছিল?
অভিযোগের স্তর: দাবি আছে,প্রমাণ নেই

সমালোচকদের দাবির মধ্যে রয়েছে—

নারী সংগঠনকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার

তরুণীদের সংগঠনে যুক্ত করে নির্দিষ্ট মতাদর্শে প্রশিক্ষণ

ক্ষমতাকেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরির অভিযোগ

⚖️ গুরুত্বপূর্ণভাবে উল্লেখ্য:এসব অভিযোগের কোনোটি এখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা আদালত দ্বারা প্রমাণিত নয়।

বক্তব্য চাওয়া হলেও নীরবতা

এই প্রতিবেদনের জন্য রাইহানা সুলতানা নাসিম ও ‘সম্মিলিত নারী প্রয়াস’-এর দায়িত্বশীলদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে।প্রতিবেদন প্রকাশ পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।বক্তব্য পাওয়া গেলে তা সংযুক্ত করা হবে।

রাষ্ট্রের করণীয়: তদন্তের রোডম্যাপ

বিশেষজ্ঞদের মতে,বিতর্ক থামাতে প্রয়োজন নথিভিত্তিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত। প্রস্তাবিত রোডম্যাপ—

১. সংগঠনের নিবন্ধন যাচাই: সমাজসেবা অধিদপ্তর/এনজিও ব্যুরোতে নিবন্ধন ও কার্যপরিধি

২. অর্থায়ন অডিট: ব্যাংক লেনদেন,দাতা তালিকা ও ব্যয়ের স্বচ্ছতা
৩. কর্মসূচির টাইমলাইন বিশ্লেষণ: রাজনৈতিক ঘটনার সঙ্গে কর্মসূচির সামঞ্জস্য
৪. সাক্ষ্য সংগ্রহ: সদস্য,োমাঠপর্যায়ের সমন্বয়কারী ও সংশ্লিষ্টদের জবানবন্দি
৫. আইনি মূল্যায়ন: অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা; ভিত্তিহীন হলে অপপ্রচার বন্ধে আইনগত পদক্ষেপ

উপসংহার

হাদি ইস্যু থেকে জন্ম নেওয়া এই বিতর্ক এখন একটি নীতিগত প্রশ্নে দাঁড়িয়েছে—নারী ক্ষমতায়নের ভাষ্য কি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অপব্যবহৃত হচ্ছে?

সত্য উদঘাটনে প্রয়োজন প্রশাসনিক জবাবদিহি,নথিভিত্তিক তদন্ত ও স্বচ্ছতা।নইলে সোশ্যাল মিডিয়ার অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগেই সত্য চাপা পড়ে থাকবে।

আরও খবর

Sponsered content