প্রতিনিধি ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ , ৪:১৭:৪৭ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক।।ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী জুলাই আন্দোলনে সম্মুখসারিতে থাকা শহীদ ওসমান হাদির পরিবারকে বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে হাদির এক বোনকে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ও একজন গানম্যান দেওয়া হচ্ছে।পাশাপাশি পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সার্বক্ষণিক পুলিশি নজরদারি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

জুলাই যোদ্ধা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা উদ্যোগ
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক প্রতিবেদনে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা তুলে ধরা হলে সরকার ঝুঁকিতে থাকা জুলাই যোদ্ধা,আন্দোলনের সমন্বয়ক,সংসদ-সদস্য প্রার্থী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিতে উদ্যোগ নেয়।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সম্মুখসারির কয়েকজন নেতাকে ইতোমধ্যে গানম্যান দেওয়া হয়েছে এবং ব্যক্তিগত অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে।
যাদের নাম রয়েছে তালিকায়
নিরাপত্তা তালিকায় রয়েছেন—অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম,এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা,মুখ্য সমন্বয়ক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমসহ আরও কয়েকজন।
এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (জেপি) প্রধান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য গানম্যান চেয়ে আবেদন করেছেন।
আবেদনের ভিত্তিতে শিগগিরই যাদের গানম্যান ও অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হতে পারে,তাদের মধ্যে রয়েছেন—গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি,ডেমরা-যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে বিএনপি মনোনীত সংসদ-সদস্য প্রার্থী তানভির আহমেদ রবিন,পাবনা-৩ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জাফির তুহিন,জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু,এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদসহ আরও অনেকে।
হুমকি,হত্যা ও সরকারের উপলব্ধি
সূত্র জানায়,নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের পলাতক নেতাকর্মী ও তাদের দোসরদের পক্ষ থেকে জুলাই যোদ্ধাদের নিয়মিত প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।ভারতসহ বিদেশে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উসকানির অভিযোগও গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদিকে হত্যার হুমকি দিয়ে কয়েক মাস ধরে বিদেশি নম্বর থেকে ফোন করা হচ্ছিল।গত ১২ ডিসেম্বর তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয়।দেশি-বিদেশি উন্নত চিকিৎসা দিয়েও তাকে বাঁচানো যায়নি।এই ঘটনার পর সরকারের মধ্যে উপলব্ধি তৈরি হয়েছে—জুলাই যোদ্ধাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া জরুরি।
সীমাবদ্ধতা ও বাস্তবতা
জানা গেছে,জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া বহু যোদ্ধা ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিতে গানম্যান ও অস্ত্রের লাইসেন্স চেয়েছেন।তবে পুলিশ বাহিনীতে পর্যাপ্ত ফোর্স না থাকায় সবাইকে গানম্যান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।তাছাড়া অনেক যোদ্ধাই শিক্ষার্থী,যাদের নিজস্ব যানবাহন নেই এবং তারা রিকশা বা গণপরিবহনে চলাচল করেন—এতে গানম্যান দেওয়া বাস্তবিকভাবে জটিল হয়ে পড়ে।
তবে সরকার বিষয়টি সহনশীলভাবে বিবেচনা করছে এবং ঝুঁকির মাত্রা অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
পুলিশের বক্তব্য
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজি) বাহারুল আলম বলেন,“যারা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন,তাদের একজন করে অস্ত্রধারী রক্ষী দেওয়া হয়েছে।যারা তুলনামূলক কম ঝুঁকিতে আছেন,তাদের চলাফেরার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”
পুলিশের অপর এক কর্মকর্তা জানান,গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করে অগ্রাধিকার অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।অস্ত্রের লাইসেন্সের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।
অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) খোন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন,“সবাই ঝুঁকিতে নয়।যাদের ঝুঁকি রয়েছে,তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশ ও মেট্রোপলিটন ইউনিটগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।ঝুঁকি বিশ্লেষণ করে গানম্যান,নজরদারি ও অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হচ্ছে।”
নির্বাচন ও নিরাপত্তা
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়,লিখিতভাবে আবেদন করা ব্যক্তিদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে।ইতোমধ্যে ১২ জনের আবেদন জমা পড়েছে।দু-এক দিনের মধ্যেই সভা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের মতে,আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক সহিংসতা ও টার্গেট কিলিং ঠেকাতে ঝুঁকিতে থাকা জুলাই যোদ্ধা ও প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।

















