জাতীয়

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীরের পদত্যাগপত্র জমা—সংকটকালে সিদ্ধান্ত না নিতে অনুরোধ প্রধান উপদেষ্টার

  প্রতিনিধি ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ , ৯:৫৫:০৩ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।বিশেষ সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।তবে দেশের চলমান অস্থির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সহিংসতা ও আন্তর্জাতিক চাপের প্রেক্ষাপটে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিলে তা সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে প্রতিভাত হতে পারে—এমন যুক্তিতে প্রধান উপদেষ্টা তাকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

সূত্রগুলো বলছে,এই মুহূর্তে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ সরকারকে আরও দুর্বল বার্তা দিতে পারে। ফলে প্রধান উপদেষ্টা তাকে দায়িত্বে থেকে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে সরকার বা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।তবুও খবরটি মিডিয়া ও রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা তৈরি করেছে।

আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি: দায় কোথায়?

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা, টার্গেট কিলিং,রাজনৈতিক সংঘর্ষ,গ্রেপ্তার–বিতর্ক এবং জননিরাপত্তা সংকট স্পষ্টভাবে বেড়েছে।আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা,নিরপেক্ষতা ও জবাবদিহি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বিশেষ করে পুলিশের শীর্ষ নেতৃত্বের ভূমিকা,অপারেশনাল সমন্বয় এবং মাঠপর্যায়ের কার্যকারিতা নিয়ে সমালোচনা তীব্র হয়েছে।পর্যবেক্ষকদের মতে,এই পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক–প্রশাসনিক নেতৃত্বের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।

বিডিআর বিদ্রোহ প্রসঙ্গ: অভিযোগ ও ব্যাখ্যা

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও তৎকালীন নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিডিআর বিদ্রোহ সংক্রান্ত বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ ও প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। উল্লেখ্য,এসব অভিযোগের বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত বিচারিক সিদ্ধান্ত এখানে প্রতিপাদ্য নয়—তবে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা–সংক্রান্ত এমন গুরুতর ঘটনার নৈতিক ও প্রশাসনিক দায় নিয়ে জনপরিসরে আলোচনা চলমান।

বিশ্লেষকদের মতে,অতীতের বড় নিরাপত্তা ব্যর্থতার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বর্তমান দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আরও জরুরি হয়ে ওঠে।

সাংবিধানিক ও আইনগত বিশ্লেষণ

১) পদত্যাগের সাংবিধানিক বৈধতা

সংবিধান অনুযায়ী উপদেষ্টা/মন্ত্রী পদত্যাগ করতে পারেন। তবে সংকটকালে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে প্রধান নির্বাহী/প্রধান উপদেষ্টার অনুরোধে পদত্যাগ স্থগিত রাখা একটি রাজনৈতিক–নৈতিক সিদ্ধান্ত,যা সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ নয়।

২) দায়বদ্ধতা বনাম স্থিতিশীলতা

আইনের শাসন অনুযায়ী দায়িত্বশীলতার প্রশ্নে পদত্যাগ একটি রাজনৈতিক জবাবদিহির মাধ্যম হতে পারে।আবার,গভীর সংকটে প্রশাসনিক ধারাবাহিকতা রক্ষাও রাষ্ট্রীয় স্বার্থ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এই দুইয়ের ভারসাম্যই এখানে মূল প্রশ্ন।

৩) আইজিপির ভূমিকা ও চেইন অব কমান্ড

আইনশৃঙ্খলা অবনতিতে আইজিপির নেতৃত্ব,অপারেশনাল সিদ্ধান্ত এবং মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্দেশনার সমন্বয় অপরিহার্য। চেইন অব কমান্ডে দুর্বলতা থাকলে দায় শুধু মাঠপর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকে না।

নতুন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ‘খলিল’—গুঞ্জন কতটা বাস্তব?

রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে নতুন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে ‘খলিল’ নামটি শোনা যাচ্ছে।তবে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক নিশ্চিতকরণ নেই।এই গুঞ্জন সরকারের ভেতরের চাপ,বিকল্প ভাবনা ও সংকট ব্যবস্থাপনার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

পর্যবেক্ষকদের মত: বার্তা কী যাচ্ছে?

বিশ্লেষকদের মতে,সংকটকালে শীর্ষ পর্যায়ে পদত্যাগ–গুঞ্জন রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নিয়ে নেতিবাচক বার্তা দিতে পারে। একই সঙ্গে,কার্যকর সংস্কার,জবাবদিহি ও দৃশ্যমান ফল না এলে দায়িত্বে থাকা নিজেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে ওঠে।

উপসংহার

বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সম্ভাব্য পদত্যাগ, আইজিপির নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন এবং নতুন নিয়োগের গুঞ্জন—সব মিলিয়ে সরকারের ভেতরের চাপ ও শাসন–সংকটের প্রতিফলন।সংকট উত্তরণে প্রয়োজন স্বচ্ছ তদন্ত, কার্যকর আইনশৃঙ্খলা পরিকল্পনা,রাজনৈতিক ঐকমত্য এবং সাংবিধানিক দায়বদ্ধতার দৃশ্যমান প্রয়োগ।

আরও খবর

Sponsered content