প্রতিনিধি ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ , ৮:১৭:৫৬ প্রিন্ট সংস্করণ
মাজহারুল ইসলাম।।বাংলাদেশের রাজনীতি বর্তমানে এক অস্বস্তিকর অনিশ্চয়তার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে।নির্বাচনের তারিখ, অংশগ্রহণকারী শক্তি,প্রশাসনের নিরপেক্ষতা—সবকিছু মিলিয়ে প্রশ্ন একটাই: আগামী জাতীয় নির্বাচন আদৌ হবে কি,হলে তার ফলাফল কোন দিকে যাবে?

রাজনৈতিক বাস্তবতা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়,নির্বাচন ঘিরে প্রধান দলগুলোর অবস্থান পরস্পরবিরোধী।একমাত্র বিএনপি প্রকাশ্যে নির্বাচন চাইলেও,মাঠের অন্য অনেক শক্তির মধ্যে আন্তরিক আগ্রহের অভাব স্পষ্ট।এমনকি অন্তর্বর্তী ক্ষমতাকেন্দ্রের ভেতরেও নির্বাচন নিয়ে দ্বিধা ও কৌশলগত বিলম্বের ইঙ্গিত মিলছে।এই প্রেক্ষাপটে একটি সম্ভাব্য দৃশ্যপট ক্রমেই আলোচনায় আসছে—জামায়াত–এনসিপি নেতৃত্বাধীন একটি দুর্বল কোয়ালিশন সরকার।
কোয়ালিশন সরকার কেন গুরুত্বপূর্ণ?
আন্তর্জাতিক রাজনীতির অভিজ্ঞতা বলে,শক্তিশালী একক সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকারের তুলনায় দুর্বল কোয়ালিশন সরকার বহিরাগত চাপ ও প্রভাবের জন্য বেশি সহনশীল।মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোতে সরকার পরিবর্তনের পর যে ধরণের ভঙ্গুর জোট সরকার দেখা গেছে,তা এই ধারণাকেই শক্তিশালী করে।বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই ছক প্রয়োগের চেষ্টা অস্বাভাবিক নয়।
জামায়াতের সংগঠিত কৌশল
জামায়াত বরাবরই সীমিত আসনে মনোযোগী,সংগঠিত অর্থব্যবস্থা ও ক্যাডারভিত্তিক শৃঙ্খলার জন্য পরিচিত।সম্ভাব্য নির্বাচনে তারা এমন সব আসনকে লক্ষ্য করতে পারে—যেখানে বিএনপি প্রার্থী দুর্বল,অথবা আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির ভোটব্যাংক বিভক্ত।এসব এলাকায় বিদ্রোহী বা তথাকথিত ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থীর মাধ্যমে ভোট বিভাজনের কৌশল নতুন নয়।
প্রশাসনের ভূমিকা
বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে প্রশাসনের ভূমিকা কখনোই গৌণ ছিল না।ডিসি,এসপি,ইউএনও,ওসি থেকে শুরু করে প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার—এই শৃঙ্খল যদি কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক ধারার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়,তাহলে নির্বাচন কাগজে সুষ্ঠু হলেও ফলাফল প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।সাম্প্রতিক বদলি ও নিয়োগ নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে,তা এই আশঙ্কাকেই উসকে দিচ্ছে।
অর্থ, ধর্ম ও প্রচারণা
নির্বাচনে অর্থের প্রভাব অস্বীকার করার সুযোগ নেই।এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ধর্মীয় আবেগ ও লক্ষ্যভিত্তিক প্রচারণা।দরিদ্র ও অনিশ্চিত ভোটারদের ওপর এই দুইয়ের সম্মিলিত প্রভাব নির্বাচনী সমীকরণ বদলে দিতে পারে।একই সঙ্গে মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতিবাচক প্রচার কোনো একটি দলের মনোবল ভাঙতেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
তাহলে ফলাফল কী হতে পারে?
যদি নির্বাচন হয় এবং তা পুরোপুরি অংশগ্রহণমূলক না হয়, তাহলে কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে—এমন সম্ভাবনা ক্ষীণ।সে ক্ষেত্রে জামায়াত–এনসিপি একটি কিংমেকার শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে এবং সমঝোতার মাধ্যমে কোয়ালিশন সরকার গঠনের পথ খুলে যেতে পারে।তবে এটি যে অবশ্যম্ভাবী—তা নয়; রাজনৈতিক সমঝোতা,আন্তর্জাতিক চাপ ও গণআন্দোলন এই সমীকরণ যেকোনো সময় বদলে দিতে পারে।
উপসংহার
বাংলাদেশের সামনে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন নির্বাচন নয়, নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা।যদি নির্বাচন হয় কিন্তু তা জনআস্থার সংকট কাটাতে ব্যর্থ হয়,তবে যে সরকারই গঠিত হোক না কেন,তার স্থায়িত্ব ও গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়বে।দুর্বল কোয়ালিশন সরকার হয়তো কারও জন্য সুবিধাজনক হতে পারে,কিন্তু দেশের দীর্ঘমেয়াদি গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতার জন্য তা কতটা উপযোগী—এই প্রশ্নের উত্তর এখনও অমীমাংসিত।

















