প্রতিনিধি ৫ মে ২০২৫ , ৪:৫৫:৩৩ প্রিন্ট সংস্করণ
পাথরঘাটা(বরগুনা)প্রতিনিধি।।বরগুনার বিষখালী,বলেশ্বর ও পায়রা নদীতে নিষিদ্ধ বাঁধা জাল,গোপজাল,বেহুন্দিজাল ও কারেন্ট জালে অবাধে ধরা পড়ছে ইলিশের পোনা।ইলিশের এই পোনাকে এলাকার হাটবাজারে ‘চাপিলা মাছ’ বলে বিক্রি করছে জেলেরা।

স্থানীয়দের অভিযোগ,সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কিছু অসাধু জেলেরা মৎস্য কর্মকর্তাদেরকে ম্যানেজ করে এ কাজ করছেন।এতে সাধারণ মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।তাদের ভাষ্যমতে পাথরঘাটা মৎস্য বিভাগের দৃশ্যমান কোনো অভিযান না থাকায় অসাধু জেলেরা এর সুযোগ নিচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,জেলেরা ইলিশের পোনাসহ নানা মাছের পোনা নিধনের পাশাপাশি বাজারজাত করছে। প্রশাসনের চোখের সামনেই পৌর এলাকার হাটবাজার সহ বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জের হাটবাজারে বিক্রি হচ্ছে ইলিশের এই পোনা।এছাড়াও এই ইলিশের পোনা পরে শুটকি বানিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।যেখানে এই ইলিশের পোনা বিক্রয় করা ও ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
সরেজমিনে দেখা যায়,এসব নদীতে নিষিদ্ধ জালে প্রতিদিন ইলিশসহ বিভিন্ন মাছের যে পরিমাণ পোনা মাছ নিধন হচ্ছে তাতে আগামী মৌসুমে ইলিশ মাছ আহরণে চরম সংকট দেখা দেবে।নদীতে ছোট ফাঁস জালের অবাধ ব্যবহারে মাছের স্বাভাবিক প্রজনন,বংশ বিস্তার ও বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। মৎস্য আইনে মাছের পোনা সংরক্ষণে সোয়া চার ইঞ্চির কম ফাঁস জাল ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।অথচ এই নদীগুলোতে জেলেরা আধা ইঞ্চির কম থেকে পৌনে এক ইঞ্চি ফাঁস জাল ব্যবহার করে ছোট মাছ নিধন করছে।
পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের রুহিতা গ্রামের জাকির হোসেন মুন্সি জানান,প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চোখের সামনেই প্রতিদিন বাঁধা জাল,গোপজাল,বেহুন্দিজাল ও কারেন্ট জাল সহ বিভিন্ন অবৈধ জাল দিয়ে মাছের পোনা ধ্বংস করছে।
পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,এ ইউনিয়নে তিনশ’র বেশি নৌকায় ভাসা জাল দিয়ে মাছ ধরে।এ জালগুলোতে জাটকা,পোয়া,তপসি,টেংরাসহ অন্য প্রজাতির অনেক মাছ আর পোনা ধরা পড়ে।বিক্রি যোগ্য মাছ বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি করে।আর হাটবাজারে বিক্রির অযোগ্য মাছ শুঁটকি করার জন্য শুটকি পল্লীতে বিক্রি করা হয়।
স্থানীয় সাধারণ জেলে ও সচেতন ব্যক্তিরা বলেন,নিষিদ্ধ বাঁধা,গড়া ও বেহুন্দি জাল দিয়ে জেলেরা মাছ শিকার করে। মাছের মধ্যে ইলিশের পোনা,ডিমওয়ালা গলদা চিংড়ি, পাঙ্গাশের পোনাসহ নদীর বিভিন্ন ছোট মাছ থাকে।অবৈধ বাঁধা জালে নদীতে প্রচুর পরিমাণে ইলিশের পোনা মারা পড়ছে। জেলেরা ইলিশের মরা ছোট পোনাগুলো নদীতে ফেলে দিয়ে আসে।দেড়-দুই ইঞ্চি সাইজের পোনাগুলো প্রকাশ্যে খোলা ডাকে বিক্রি করছে।স্থানীয় মৎস্য বিভাগের কোনো নজরদারি না থাকায় এ অনাচার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তারা আরও বলেন,প্রতিদিন কী পরিমাণ পোনা মাছ নিধন হচ্ছে,তা নিজের চোখে না দেখলে কল্পনা করাও কঠিন। প্রশাসন যদি কঠোর নজরদারি না করে তাহলে ইলিশ সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব হবে না।
সম্প্রতি কাকচিড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আল আমিন সাংবাদিকদের,নদীতে সব সময় অবৈধ জাল দিয়ে ইলিশের পোনা সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা নিধন করছে স্থানীয় জেলেরা।এতে বাধা দিলে জেলেরা বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি দিতে থাকে।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান,প্রশাসনের নাকের ডগায় এভাবে অবৈধ বিভিন্ন ধরনের জাল দিয়ে ইলিশের পোনা শিকার করলে ইলিশের বংশ ধ্বংস হয়ে যাবে।নদ-নদীতে পানি থাকবে কিন্তু মাছ থাকবে না বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসীন বলেন,আমরা গত মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৫০ টির বেশী অভিযান পরিচালনা করছি।যেহেতু জেলায় তিনটি নদী আর আমাদের জনবল কম,ফলে সব জায়গায় পৌঁছানো আমাদের পক্ষে অনেক সময় সম্ভব নয়।এই সুযোগে অসাধু জেলেরা ইলিশের পোনা ধরে চাপিলা বলে গোপনে বিক্রি করছে। আমরা নদীতে টহল জোরদার করেছি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান খান বলেন,বিভিন্ন এলাকার অসাধু জেলেরা অবৈধ জাল দিয়ে ইলিশের পোনাসহ নানা জাতীয় পোনা নিধন করছে।এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।












