সারাদেশ

৩টি টার্মিনাল (স্হল বন্দর) ৩০ বছরের জন্য বিদেশীর কাছে হস্তান্তর

  প্রতিনিধি ১২ অক্টোবর ২০২৫ , ৬:২৬:২৪ প্রিন্ট সংস্করণ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি।।নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘২০২০ সালে সরকার চট্টগ্রাম বন্দর বিষয়ে বিদেশি কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে।তাদের প্রতিবেদন সরকার ছয় মাস আগে পেয়েছে।’

চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া,নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ও ঢাকার কেরানীগঞ্জের পানগাঁও টার্মিনাল পরিচালনার জন্য বিদেশি অপারেটর নিয়োগে আগামী ডিসেম্বরে চুক্তি স্বাক্ষর করবে সরকার।এর মধ্যে লালদিয়া টার্মিনাল ৩০ বছরের জন্য,আর বাকি দু’টি টার্মিনাল ২৫ বছর মেয়াদে বিদেশি কোম্পানিগুলোর হাতে পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে।

রোববার (১২ অক্তোবর) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘সমুদ্রগামী জাহাজ শিল্পে বিনিয়োগ সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন,২০২০ সালে সরকার চট্টগ্রাম বন্দর বিষয়ে বিদেশি কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে।তাদের প্রতিবেদন সরকার ছয় মাস আগে পেয়েছে।’

কনসালটেন্টের সুপারিশ অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দরের ট্যারিফ বাড়ানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ইআরএফ প্রেসিডেন্ট দৌলত আকতার মালার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বাংলাদেশ সমুদ্রগামী জাহাজ মালিক সমিতির প্রেসিডেন্ট আজম জে চৌধুরী এবং বাংলাদেশ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ড. জাইদি সাত্তার উপস্থিত ছিলেন।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (সিপিএ) সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধি ছিল দীর্ঘদিনের বিলম্বিত সমন্বয়। কারণ,১৯৮৬ সালের পর থেকে বন্দরের ডলার-ভিত্তিক হারগুলো কখনও বাড়ানো হয়নি। কিন্তু যা সিপিএ প্রকাশ্যে বলছে না,তা হলো—এই সময়ে টাকার মান ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ায় তাদের আয় আগেই বহুগুণ বেড়ে গেছে।

চট্টগ্রাম বন্দর বিপুল মুনাফায়, তবু কেন বাড়ল মাশুল-এর হাতে আসা নথি অনুযায়ী,নতুন ট্যারিফ কাঠামোটি বিশ্বব্যাংক গ্রুপের বেসরকারি খাতের শাখা ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি)-এর প্রস্তাবিত কাঠামোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিলে যায়।সরকার ও সিপিএ-র পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করে আইএফসি পতেঙ্গা ও লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনালের জন্য কনসেশন চুক্তি তৈরি করেছে।

তাদের মূল লক্ষ্য ছিল—চট্টগ্রাম বন্দরকে বেসরকারি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা। সমালোচকদের অভিযোগ,এর ফলে ট্যারিফের এই কাঠামো সিপিএ’র চেয়ে বিদেশি অপারেটরদের বেশি সুবিধা দিচ্ছে।

আইএফসি তার ‘লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল পিপিপি প্রজেক্ট ট্রানজাকশন স্ট্রাকচার রিপোর্ট’-এ সতর্ক করেছিল যে বাংলাদেশের কঠোর ও অপরিবর্তনীয় ট্যারিফ নীতি আন্তর্জাতিক টার্মিনাল অপারেটরদের (আইটিও) বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করতে পারে।প্রতিষ্ঠানটি সেখানে স্পষ্টভাবে সুপারিশ করেছিল “নিশ্চিত ট্যারিফ সংস্কার,যার মধ্যে ট্যারিফ বৃদ্ধির নিশ্চয়তা অন্তর্ভুক্ত থাকবে”—যা প্রকল্পের সফলতার অন্যতম শর্ত হিসেবে বিবেচিত হবে।

এখন সেই পরামর্শ বাস্তবে রূপ পেয়েছে।সরকার বে টার্মিনালের দুটি কনটেইনার বার্থ থেকে শুরু করে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত সব নতুন টার্মিনাল বেসরকারি খাতে লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল,বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে বাধ্য হয় এক ব্যাপক ট্যারিফ পুনর্বিন্যাসে।এই পদক্ষেপের মাধ্যমে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বাজারকে “আর্থিকভাবে আকর্ষণীয়” করে তুলতেই মূলত হঠাৎ এই বড় পরিসরের ট্যারিফ বৃদ্ধি কার্যকর করা হয়েছে।

এই ট্যারিফ বৃদ্ধির সুবিধাভোগী শুধু ভবিষ্যতের নতুন বিনিয়োগকারীরাই নয়,বরং বর্তমানে পরিচালনাকারীরাও। সৌদি আরবভিত্তিক রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনাল (আরএসজিটিআই) ইতোমধ্যেই পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনা করছে।অন্যদিকে,সংযুক্ত আরব আমিরাতের বন্দর অপারেটর ডিপি ওয়ার্ল্ড খুব শিগগিরই নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি)-এর নিয়ন্ত্রণ পেতে যাচ্ছে,যা এককভাবে চট্টগ্রাম বন্দরের মোট কনটেইনার পরিবহনের প্রায় ৪০ শতাংশ পরিচালনা করে।

এদিকে ডেনমার্কের শিপিং জায়ান্ট এ.পি. মোলার মায়েরস্ক নজর রেখেছে লালদিয়া টার্মিনাল কনসেশনের দিকে—যার কাঠামো তৈরি করেছে আইএফসি।

আরও খবর

Sponsered content