অপরাধ-আইন-আদালত

১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীর নেতৃত্বে ডাকাতির ঘটনা চমকে গেল পুলিশ!

  প্রতিনিধি ৫ আগস্ট ২০২৩ , ৫:৩৩:৩০ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।আনুমানিক ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীর নেতৃত্বে ঢাকার সেন্ট্রাল রোডের এক বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা চমকে দিয়েছে পুলিশকে; যে দলে আরও এক কিশোরীসহ কিশোররাও রয়েছেন।

সন্ধ্যার পরপরই অস্ত্রের মুখে দুইজনকে জিম্মি করে গত মাসের মাঝামাঝিতে আধা ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ডাকাতিকালে নগদ আট লাখ টাকাসহ মোবাইল ফোন ও অন্যান্য সরঞ্জাম লুট করে দলটি।

ডাকাতি শেষে টাকা ও সরঞ্জাম ভাগ বাটোয়ারার পর দলের দুই সদস্যকে নিয়ে কক্সবাজারে ‘আনন্দ ভ্রমণেও’ যান ডাকাত দলের হোতা সেই কিশোরী।

তবে নগরের অপরাধে ভিন্ন মাত্রা যোগ করা এ ঘটনার পর পুলিশের জোর তৎপরতায় কয়েকদিনের দিনের মাথায় ধরাও পড়ে দলের নেতৃত্বে থাকা সেই কিশোরীসহ পাঁচজন।

বেশ কিছুদিন ধরে কিশোর দলের ছিনতাই,চাঁদাবাজি,মাদক কারবার,অন্যের হয়ে মারামারি,এলাকার অধিপত্য নিয়ে সংর্ঘষের মতো নানান অপরাধের খবরের মধ্যে কিশোর দলের ডাকাতির খবর এল।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারের মতে সামাজিক অবক্ষয়ের কারণেই কিশোর অপরাধ বাড়ছে।এদের অধিকাংশই মাদকাসক্ত।মাদকের অর্থ জোগাড় করতেই মূলত তারা নানা অপরাধে জড়িয়ে যায়। এসব দূর করতে সামাজিক সচেতনতার পাশাপাশি পরিবারের কর্তাদের কড়া নজরদারির তাগিদ দেন তিনি।

নিউমার্কেট থানার ওসি শফিকুল গণি সাবু জানান,গত ১৭ জুলাই সেন্ট্রাল রোডে মনিরুল হক নামে ওয়াসার এক অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলীর বাড়িতে ডাকাতির এ ঘটনা ঘটে।পরে তারা ডাকাত দলের দুই কিশোরী,দুই কিশোর এবং দলের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছেন।প্রায় ১৫ বছরের দুই কিশোরীর মধ্যে একজন দলের নেত্রী ‘মাস্টারমাইন্ড’।

ডাকাতির সময় ৭০ বছর বয়সী অবিবাহিত ওই প্রকৌশলী হজের জন্য সৌদি আরবে ছিলেন।তখন তার বাসায় প্রায় ৬৫ বছর বয়সী ফিরোজা বেগম নামের এক গৃহকর্মী ছিলেন, যিনি প্রায় ২৫ বছর ধরে ওই বাসায় কাজ করেন।আরও ছিলেন প্রায় ১৫ বছরের পুরনো গাড়ি চালক ও তত্ত্বাধায়ক মো. রিপন (৪২)।

থানায় দায়ের করা মামলার তথ্যে দেখা যায়,রিপনের কাছে ঘরের চাবি দিয়ে গত ২০ জুন প্রকৌশলী মনিরুল হজে যান। রিপন বাসার উত্তর পশ্চিম দিকে গাড়ির গ্যারেজের সঙ্গে লাগোয়া একটি কক্ষে থাকেন।গৃহকর্মী ফিরোজা থাকেন বাসার ভেতরের পৃথক একটি কক্ষে।

গত ১৭ জুলাই রাত পৌনে আটটার দিকে একজন কিশোরীসহ ছয় থেকে সাতজন বাড়ির দেওয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে রিপনের ঘরে গিয়ে ধারালো অস্ত্রের মুখে তাকে জিম্মি করে ফেলে।এসময় তার মোবাইল এবং নগদ ১১ হাজার টাকা নিয়ে নেয়।

রিপন পুলিশকে বলেছে,ডাকাত দলের সদস্যরা তাকে জিম্মি করার পর তার কাছে থাকা চাবি জোরপূর্বক নিয়ে গেট খুলে ভেতরে ঢুকে এবং অন্যান্য রুমে যায়।এসময় বাসার ভেতরে থাকা গৃহকর্মী এগিয়ে এলে তাকেও জিম্মি করে ফেলে।

দুইজনকে জিম্মি করে প্রায় ৩৫ মিনিট ধরে তারা পুরো বাসা তছনছ করে।আলমারিসহ অন্যান্য জায়গা থেকে জিনিসপত্র লুট করে।এসময় চিৎকার করলে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে চলে যায়।

ডাকাত দলের বেশিরভাগের বয়স ১৬ থেকে ২০ বছর বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।এ ডাকাতিতে অংশ নেওয়া গ্রেপ্তারদের মধ্যে দলনেতাসহ দুই কিশোরীর বয়স ১৫ এবং দুই যুবকের বয়স ২১ থেকে ২৩ বছর বলে ওসি জানান।

তিনি জানান,ঘটনার পর রিপন সৌদি আরবে প্রকৌশলী মনিরুলের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন বাসায় নগদ আট লাখ টাকা,দুইটি মোবাইল ফোন ও হাত ঘড়ি ছিল,যা ডাকাত দলের সদস্যরা নিয়ে গেছে।২০ জুলাই রিপন বাদী হয়ে মামলা করেন।

পুলিশ কর্মকর্তা শফিকুল বলেন,আমরা রিপনের সাথে কথা বলে যখন জানতে পারি এই ডাকাতদলে একজন কিশোরী ছিল যে মূলত ডাকাতিকালে নেতৃত্ব দিয়েছে তখনই বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়।যেন চমকে দেওয়ার মত অবস্থা।“

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আলমগীর হোসেন জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর তারা বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে খোঁজ নেওয়ার পাশপাশি আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেন।

সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে ১৭ বছর বয়সের এক কিশোর এবং ২৩ বছর বয়সের নাহিদুজ্জামান নাহিদকে শনাক্ত করা যায়।পরে তাদের কলাবাগান-কাঠাঁলবাগান এলাকা থেকে ২১ জুলাই গ্রেপ্তার করা হয়।নাহিদের কাছে পাওয়া যায় ডাকাতির ভাগের ২৫ হাজার টাকা।কিশোরটির কাছে পাওয়া যায় লুটের দুই লাখ টাকা,প্রকৌশলী মনিরুল হকের দুটি এবং তার গাড়িচালক-তত্ত্বাবধায়ক রিপনের একটি মোবাইল সেট।সেখান থেকে মাটির ব্যাংক ভেঙে নেওয়া খুচরা ৭৭৮ টাকাও উদ্ধার করা হয়।

এসআই বলেন,তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দলনেত্রীর তথ্য পাওয়া যায়।পরে বিভিন্ন সোর্সে এবং কৌশলে জানা যায় ডাকাতির পরপরই দুই কিশোরী এবং ২১ বছর বয়সী আরেক সদস্য আফজাল হোসেন কক্সবাজারে অবস্থান করছে।”

এদের ২৩ জুলাই কক্সাবাজরে গিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন,লুটের টাকা দিয়ে তারা মূলত সেখানে আনন্দ ভ্রমণে গিয়েছিল।

নিউ মার্কেট থানার ওসি জানান,ডাকাত দলের দুই কিশোরীর বন্ধু আফজালের কাছ থেকে লুট হওয়া ঘড়ি উদ্ধার করা হয়। এ দলের আরও কয়েকজন সদস্য আছে যাদের বয়স ১৬ থেকে ২০ এর মধ্যে।তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে। ডাকাত দলের সদস্যরা ‘টিকটক’ করে থাকেও বলে তারা জানতে পেরেছেন।

তদন্তকালে পুলিশ এলাকার লোকজনের কাছ থেকে জানতে পারেন কেউ অসুস্থ শুনলে প্রকৌশলী মনিরুল লাখ লাখ টাকা সহায়তা দিয়ে থাকেন।এ খবর এলাকার লোকজনের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়লে অনেকের ধারণা তার অনেক টাকা আছে।ডাকাত দলের সদস্যরা এমন খবর শুনেই তার অনুপস্থিতিতে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

আরও খবর

Sponsered content