সম্পাদকীয়

১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস?!

  প্রতিনিধি ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ৪:৫৩:৩৮ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।বিশ্ব ভালোবাসা দিবসটি যে মানুষটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে তার নাম সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন।কথিত রয়েছে,তৃতীয় শতকে রোমের সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াসের শাসনকালে তিনি রোমের যাজক হিসেবে কাজ করতেন।যদিও এই দিনটি আমরা সুখ,আনন্দ আর ভালোবাসার মধ্যে থেকে পালন করি,তবে এই দিনটির পেছনে লুকিয়ে আছে এক করুণ প্রেমের ইতিহাস।

১৪ ফেব্রুয়ারির এই দিনটিতেই ভালোবাসার এই দূতকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন সেই সময়ের রোমের সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস।তার মৃত্যুর আসল কারণ আজও সবার কাছে রহস্য হয়েই আছে।মধ্যযুগে রোম থেকে ইংল্যান্ডে ভ্যালেন্টাইনের নাম ছড়িয়ে পড়ে।

পরবর্তী সময়ে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সে তিনি হয়ে ওঠেন সবচেয়ে জনপ্রিয় সেইন্টদের একজন।তাই বর্তমানে যে ভ্যালেন্টাইন ডে উদ্‌যাপিত হয়,এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে খ্রিষ্টান ধর্ম ও প্রাচীন রোমের ঐতিহ্য।অনেকেই মনে করেন,ভ্যালেন্টাইন দিবসটি এসেছে দেবতাদের রানি জুনো থেকে। প্রাচীন রোমে দেবতাদের রানি জুনোর সম্মানে ১৪ ফেব্রুয়ারি ছুটি পালন করা হতো। রোমানরা বিশ্বাস করত যে,জুনোর ইশারা-ইঙ্গিত ছাড়া কোনো বিয়ে সফল হয় না।ছুটির পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারি লুপারকালিয়া ভোজ উৎসবে হাজারো তরুণের মেলায় র‌্যাফেল ড্র-র মাধ্যমে সঙ্গী বাছাই প্রক্রিয়া চলত।এই উৎসবে উপস্থিত তরুণীরা তাদের নামাঙ্কিত কাগজের সি­প জনসম্মুখে রাখা একটি বড় পাত্রে ফেলত।

সেখান থেকে যুবকের তোলা সি­পের তরুণীকে কাছে ডেকে নিত।কখনো এ জুটি সারা বছরের জন্য স্থায়ী হতো এবং ভালোবাসার সিঁড়ি বেয়ে বিয়েতে গড়াত।ওই দিনের শোকগাথায় আজকের এই ‘ভ্যালেন্টাইন ডে।তবে সবচেয়ে বেশি যে জনশ্রুতি আছে তা হলো,ভ্যালেন্টাইনের জীবনের কাহিনি। ভ্যালেন্টাইন ছিলেন একজন সহানুভূতিসম্পন্ন,বীর ও রোমান্টিক মানুষ হিসেবে।অন্যদিকে রোমান সম্রাট ছিলেন তার ঠিক উল্টো।

সেই সম্রাট রাজ্য শাসনের সময় অনুধাবন করলেন যে,বিবাহিত সৈন্যদের চেয়ে অবিবাহিত সৈন্যরা বেশি কর্মঠ। তাই হঠাৎ একদিন তিনি ঘোষণা দিলেন,তরুণরা বিয়ে করতে পারবে না।

যুক্তি হিসেবে তিনি তুলে ধরেন,বিবাহিতদের চেয়ে অবিবাহিত পুরুষরা সেনা হিসেবে বেশি সক্ষম।ক্লডিয়াসের এই ঘোষণা মেনে নেননি সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন।এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি গোপনে তরুণ যুগলদের বিয়ে দিতে শুরু করেন।সেই সঙ্গে রোমান কারাগার থেকে খ্রিষ্টান বন্দিদের পালাতেও সাহায্য করেন।ক্লডিয়াসের কানে এ খবর পৌঁছে গেলে ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেন তিনি।ধারণা করা হয়,খ্রিষ্টের জন্মের ২৭০ বছর পর মৃত্যু হয় ভালোবাসার বার্তাবাহী এই সেইন্টের।অন্য এক শ্রুতি অনুসারে,মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আগে ভ্যালেন্টাইনকে কারাদণ্ড দেন ক্লডিয়াস।সেখানে তার পরিচয় হয় এক কারারক্ষীর মেয়ের সঙ্গে। যে মেয়েটি ছিল অন্ধ।তার প্রেমে পড়েন সেইন্ট।

মৃত্যুদণ্ডের দিন (১৪ ফেব্রুয়ারি) তাকে একটি চিঠি লেখেন তিনি।চিঠির শেষে স্বাক্ষরের জায়গায় তিনি লিখেছিলেন,ইতি তোমার ভ্যালেন্টাইন।মেয়েটি চিরকুটের ভেতরে বসন্তের হলুদ ত্রৌকস ফুলের আশ্চর্য সুন্দর রং দেখল।তার অন্ধ দুই চোখে তখন ঝলমলে আলো।এর ফলে,৪৯৬ খ্রিষ্টাব্দে পোপ জেলাসিয়ুস ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখকে ভ্যালেন্টাইন ডে ঘোষণা করেন।সেই থেকে ভ্যালেন্টাইন ডে পালন করছে সারা বিশ্বের মানুষ জাত ভেদাভেদ ছাড়া ইতিহাসের রূপকথার চির মুকুট।।

আরও খবর

Sponsered content