অপরাধ-আইন-আদালত

হোটেল বয় থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক আরাভ খান!

  প্রতিনিধি ১৭ মার্চ ২০২৩ , ৫:৫৩:২৯ প্রিন্ট সংস্করণ

গোপালগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি।।দুবাইয়ে স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করে সারা দেশে আলোচনায় আরাভ খান।একজন পুলিশ কর্মকর্তা খুনের মামলার অন্যতম আসামি তিনি।তার দোকান উদ্বোধন করেছেন তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বা দূর থেকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ভিডিওবার্তা দিয়েছেন দেশের অনেক তারকা।

হত্যা মামলার আসামি আরাভ খান বৃহস্পতিবার ফেসবুক লাইভে এসে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে কথা বলেছেন।

তিনি বলেন,আমি একজন দিনমজুরের ছেলে।আমি ঢাকায় এসে অনেক কষ্ট করেছি।হোটেলে কাজ করেছি।অনেক কষ্ট করে আমি আজ এ অবস্থানে এসেছি।আল্লাহ যদি আমাকে সুস্থ রাখে তা হলে খুব শিগগির দেশের ৬৪ জেলায় ৬৪ মসজিদ নির্মাণ করব।

নিজের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলার কথা তুলে ধরে আরাভ খান বলেন,আমার মামলা হয়েছে এ কথা সত্য।তবে আমি কোনো হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নই।পুলিশ আমাকে অস্ত্র মামলায় জেলে দিয়েছে।এ কথা সত্য।তবে আমি দোষী না।আমি অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় জেলে গেছি। আবার জামিনে বেরিয়ে এসেছি।আদালত যদি আমাকে সাজা দেন,তা হলে আমি সে সাজা মাথা পেতে নেব।

তিনি আরও বলেন,অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও সাকিব আল হাসান ভাই আমার স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করেছেন। এ জন্য আমি সাকিব আল হাসান ভাইয়ের কাছে কৃতজ্ঞ।

নিজের ব্যবসা সম্পর্কে বলতে গিয়ে আরাভ খান বলেন, অনেক কষ্ট করে আমি আমার এই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়েছি।এখানে আমার কিছু ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষ তৈরি হয়েছে।তারাই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা রটাচ্ছে।গণমাধ্যমে যেসব খবর আসছে তা পুরোপুরি সত্য নয় বলে উল্লেখ করেন এই আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী।

এর আগে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় দুবাইয়ের হিন্দ প্লাজায় আরাভ জুয়েলারি নামে এই স্বর্ণের দোকানটি উদ্বোধন করেন। দোকানটির মালিক কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ ইউনিয়নের আশুতিয়া গ্রামের আরাভ খান বলে জানা গেছে।তবে তার প্রকৃত নাম সোহাগ মোল্লা বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

সোহাগ মোল্লা আশুতিয়া গ্রামের দিনমজুর মতিয়ার রহমান মোল্লার ছেলে।মতিয়ার রহমান মোল্লা একসময় বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলায় ফেরি করে সিলভারের হাঁড়িপাতিল বিক্রি করতেন।এখানেই ১৯৮৮ সালে সোহাগ মোল্লার জন্ম হয়।২০০৫ সালে চিতলমারী সদরের একটি বিদ্যালয় থেকে সোহাগ মোল্লা এসএসসি পাশ করে। দারিদ্র্যতার কারণে এর পরে আর তার লেখাপড়া হয়নি। চিতলমারী থেকে ২০০৮ সালে ভাগ্যের অন্বেষণে তিনি ঢাকা চলে যান।

ঢাকায় পুলিশ হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের দায়ে ঢাকার বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে প্রায় ডজনখানেক মামলা হয়।এর পর পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে আরাভ খান ভারত হয়ে চলে যান দুবাইয়ে।

এদিকে আরাভ খানের দুবাইয়ে এই স্বর্ণের দোকান উদ্বোধনের খবর জানাজানি হলে এলাকায় আলোচনায় ঝড় ওঠে।সবার মুখে মুখে একই প্রশ্ন সোহাগ মোল্লা কীভাবে রাতারাতি এত টাকার মালিক বনে গেলেন।

সরেজমিন গিয়ে কথা হয় সোহাগ মোল্লা ওরফে আরাভ খানের চাচাতো ভাই ফেরদৌস মোল্লার সঙ্গে।তিনিও সোহাগ মোল্লা ওরফে আরাভ খান অল্প দিনে এত টাকার মালিক হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

ফেরদৌস বলেন,সোহাগ মোল্লা মাঝেমধ্যে তাদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতেন।বলতেন,বড় ব্যবসা করছেন।এলাকার লোকজনকে টাকাপয়সা দিয়ে সাহায্য করেন।প্রতিবার পাঁচ-ছয়টি গরু কোরবানি করে এলাকার মানুষকে খাওয়ান।

ফেরদৌস জানান,সোহাগ মোল্লা ৪-৫টি বিয়ে করেছেন। সর্বশেষ বিয়ে ভারতের কোলকাতায়।সেই স্ত্রীকে নিয়ে এখন দুবাইয়ে থাকেন। ্কয়েক দিন আগে তার মা-বাবা ও দুই বোন এলাকা ছেড়েছেন।তারা বলে গেছেন,দুবাই যাচ্ছেন।

হিরণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজহারুল আলম পান্না বলেন,সোহাগ মোল্লা ওরফে আরাভ খান একই ব্যক্তি।আমার গ্রামেই তার বাড়ি।সে একটি দরিদ্র পরিবারের সন্তান।গত পাঁচ সাত বছর ধরে সে এলাকায় আসে না।হঠাৎ করে সে কীভাবে এত টাকার মালিক হলো এটা আমাদের বোধগম্য নয়।

কোটালীপাড়া থানার ওসি মো. জিল্লুর রহমান বলেন,সোহাগ মোল্লা ওরফে মোল্লা আপন,ওরফে রবিউল ইসলাম রবি, ওরফে শেখ হৃদি,ওরফে আরাভ খানের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৯টি ওয়ারেন্ট আমার থানায় এসেছে।আমি ওয়ারেন্টগুলো তামিল করার জন্য চেষ্টা করেছি।কিন্তু তার কোনো হদিস আমরা পাইনি।

আরও খবর

Sponsered content