অপরাধ-আইন-আদালত

হিন্দাল শারক্বীয়ার সঙ্গে লেখক-প্রকাশক হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জিয়াউল হকের ‘যোগাযোগ ছিল’-র‌্যাব

  প্রতিনিধি ২৪ জুলাই ২০২৩ , ৪:৩০:৫১ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।নতুন জঙ্গি দল জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সঙ্গে লেখক-প্রকাশক হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জিয়াউল হকের ‘যোগাযোগ ছিল’ বলে তথ্য দিয়েছে র‌্যাব।

এ বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলছেন,নিষিদ্ধ জঙ্গি দল আনসার আল ইসলামের নেতা,সেনাবাহিনীর বরখাস্ত মেজর জিয়া বেশ কয়েকবার বান্দরবানে গিয়ে জামাতুল আনসারের আমির আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদের সঙ্গে দেখাও করেছেন।

রোববার রাত ৩টার দিকে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের একটি বাসা থেকে আনিসুরসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করার পর সোমবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য ‍তুলে ধরেন র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন।

এর আগে ২৩ জুন রাতে ঢাকার ডেমরা থেকে এই জঙ্গি দলের নেতা শামিন মাহফুজ ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করার কথা জানায় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।পুলিশের এই বিশেষায়িত বাহিনীর ভাষ্য, শামিন মাহফুজই জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ‘প্রতিষ্ঠাতা’।

তবে র‌্যাব বলছে,শামিন মাহফুজ এই সংগঠনের উপদেষ্টা। আর মূল ব্যক্তি,অর্থাৎ আমির হলেন কুমিল্লার আনিসুর রহমান মাহমুদ।

রোববার রাতে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে অভিযান চালিয়ে আনিসুরসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।
রোববার রাতে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে অভিযান চালিয়ে আনিসুরসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।
আনিসুর যেভাবে জঙ্গি নেতা

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জেনেছি, আমির আনিসুর রহমান দাওরায় হাদিস শেষ করেন।তিনি যখন মাদ্রাসায় পড়েতেন তখন হরকাতুল জিহাদের সঙ্গে যুক্ত হন। পরে তিনি একটা দরগা বা মাজারের সাথে যুক্ত হয়ে সেখানে অনেকদিন থাকেন।

“২০১৩ সালের পরে আনসার আল ইসলামের নেতাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়।তখন থেকেই তার মধ্যে একটি পরিকল্পনা ছিল যে তিনি এমন একটি উগ্রবাদী সংগঠন তৈরি করতে চান,যেটি হবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত,অনেক জ্ঞানী এবং যেটি এই উপমহাদেশে একটি রিমার্কেবল উগ্রবাদী সংগঠন হিসেবে নিজেদের দাবি করবে।”

র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়,২০১৬ সালের পরে বান্দরবানের বিভিন্ন মসজিদ ও মাদ্রাসায় যেতেন আনিসুর। মুসলিম ও অমুসলিমদের তিনি ‘ধর্মীয় অপব্যাখ্যা দিয়ে’ দলে টানার চেষ্টা করতেন।

মঈন বলেন, “২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি বান্দরবান, নাইক্ষংছড়ির মত এলাকায় অবস্থান করে তার চিন্তা অনেকের সঙ্গে শেয়ার করেন।এই সময় তার সঙ্গে আনসার ইসলামের সক্রিয় সদস্য রক্সি ও ফেলানির পরিচয় হয়।তাদের কাছ থেকে অনেক সাংগঠনিক বিষয় শেখেন আনিসুর রহমান মাহমুদ।বান্দরবান এলাকায় এই সংগঠনের উপদেষ্টা শামীন মাহফুজ ও নাথানবমসহ (পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফ এর নেতা) অন্যদের সঙ্গে আনিসুরের পরিচয় হয়।”

র‌্যাবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ষ৩২ বছর বয়সী আনিসুর রহমান মাহমুদের বাড়ি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার হরকল গ্রামে।তার বাবার নাম মোখলেছুর রহমান।

স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে হাফেজি পড়া শেষ করে সেখানেই একটি সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনে ম্যানেজার হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। ২০২১ সালে পৈত্রিক কিছু সম্পদ বিক্রি করে হঠাৎ নিরুদ্দেশ হয়ে যান।

মঈন বলেন,২০২০ সালের শুরুর দিকে নাথান বমসহ কেএনএফ এর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আসলাম নামের এক ব্যক্তির সাথে গহীন পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নিতে যান আনিসুর। সেখানে আসলামের তত্ত্বাবধানে তিনি প্রশিক্ষণ নেন।

প্রশিক্ষণ শেষে তিনি কুমিল্লায় এসে নিজের সম্পত্তি ৫০ লাখ টাকার বেশি দামে বিক্রি করে দেন।এরপর নাইক্ষংছড়িতে তিন বিঘা জায়গা কিনে পরিবারসহ থাকতে শুরু করেন। তিন বিঘা জমির দাম দিয়ে বাকি টাকা তিনি নতুন জঙ্গি সংগঠনকে দেন।

র‌্যাব বলছে,নাইক্ষংছড়িতে একটি খামার করেন আনিসুর। সেখানে এ সংগঠনের ‘আধ্যাত্মিক নেতা’ মাহমুদুল হাসান গুণভীসহ অনেকেই গেছেন। আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতা জিয়াও সেখানে যেতেন।

২০২০ সালের পরে আনসার আল ইসলামের সদস্যসহ উপদেষ্টারা প্রশিক্ষণের সম্ভাব্যতা দেখতে সেখানে যান।এ জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য সেখানে তাদের চুক্তিও হয় বলে র‌্যাব মুখপাত্রের ভাষ্য।

তিনি বলেন, জামাতুল আনসার ২০১৭ সাল থেকে তাদের কার্ক্রম শুরু করে।২০১৯ সালে প্রথম তারা সংগঠনের নামকরণ করে।তাদের প্রথম আমির ছিলেন মাইনুল ইসলাম ওরফে রক্সি। ২০২১ সালে রক্সি গ্রেপ্তার হন। এরপর সুরা সদস্যরা আনিসুরকে আমির নির্বাচিত করে।

আনিসুর রহমানই যে আমির,র‌্যাব কীভাবে নিশ্চিত হল জানতে চাইলে মঈন বলেন, “আমরা গেপ্তার করেছি ৮২ জনকে।র‌্যাবের বাইরে অন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ধরেছে ৮ থেকে ১০ জনকে।গ্রেপ্তার সুরা সদস্যসহ সবার সাথেই আমরা কথা বলেছি,তাদের সাংগঠনিক কাঠামো সম্পর্কে জেনেছি। তারাই বলেছে, আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ সংগঠনের আমির।”

র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, “গ্রেপ্তার হওয়া আনিসুরের সঙ্গে আনসার আল ইসলামের নেতাদের সুসর্ম্পক ছিল।শীর্ষ জঙ্গি নেতা মেজর জিয়ার সাথে তার বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছিল।”

বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায় এবং প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জিয়ার বিরুদ্ধে জঙ্গি হামলা ও হত্যার আরও কয়েকটি মামলা রয়েছে। তিনি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান বলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়ে আসছে।

২০১২ সালের ১৯ জানুয়ারি সেনাবাহিনী এক সংবাদ সম্মেলনে সরকার উৎখাতে ধর্মান্ধ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার একটি অভ্যুত্থান পরিকল্পনা নস্যাৎ করার খবর দেয়। অভ্যুত্থানচেষ্টাকারীদের নেতা হিসেবে জানানো হয় মেজর জিয়ার নাম। খন সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়া জিয়া পালিয়ে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামে যুক্ত হন বলে পুলিশের ভাষ্য।

২০১৬ সালে গুলশান হামলার পর জিয়াকে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে সরকার।তখন পুরস্কার ঘোষিত তামিম চৌধুরীসহ জঙ্গিদের কয়েকজন শীর্ষনেতা র‌্যাব-পুলিশের অভিযানে নিহত হলেও জিয়ার খোঁজ মেলেনি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন,দণ্ডিত জিয়া অন্য কোনো দেশে পালিয়ে রয়েছেন বলে তথ্য রয়েছে তাদের কাছে। তবে র‌্যাব এখন অন্য তথ্য দিচ্ছে।

সোমবার র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়,২০২২ সালে কিশোরগঞ্জে আনসার আল ইসলাসের সঙ্গে একটি বৈঠকে জামাতুল আনসার নেতা আনিসুর রহমান মাহমুদের একটি চুক্তি হয়।সেই চুক্তি অনুযায়ী আনিসুরকে ১৫ লাখ টাকা দেয় আনসার আল ইসলাম। পরে আরও টাকা দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়।

“চুক্তি অনুযায়ী জামাতুল আনসারের সদস্যদের আনসার আল ইসলাম আইটি ও নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেবে।বিনিময়ে আনসার আল ইসলামের সদস্যদেরকে পার্বত্য অঞ্চলে অস্ত্র প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং অস্ত্র সরবরাহ করবে জামাতুল আনসার।পরে আনিসুর কেএনএফ প্রধান নাথান বম ও সেকেন্ড ইন কমান্ড বাংচুং এর সাথে বৈঠক করে আনসার আল ইসলামের সাথে চুক্তির বিষয়ে অবহিত করেন ও প্রয়োজনীয় সমন্বয় করেন,” বলেন র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন।

যেভাবে গ্রেপ্তার:-

রোববার রাত ৩টার দিকে লৌহজং উপজেলার বড় নওপাড়া গ্রামের একটি একতলা বাড়ি ঘিরে অভিযান শুরু করে র‌্যাব।

পরে সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আনিসুর রহমান মাহমুদ (৩২) এবং তার দুই সহযোগী কাজী সিরাজ উদ্দীন ওরফে সিরাজ (৩৪) এবং মাহফুজুর রহমান বিজয় ওরফে বাবুল ওরফে জাম্বুলিকে (২৮) গ্রেপ্তারের কথা জানানো হয়।

ওই বাড়ি থেকে দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র,বোমা তৈরির সরঞ্জাম,উগ্রবাদী পুস্তিকা ও নগদ টাকা জব্দ করার কথাও জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক আ ন ম ইমরান খান।

তিনি বলেন,ওই বাড়িতে জঙ্গিরা অবস্থান করছে এমন খবর আমাদের কাছে ছিল। এর ভিত্তিতে সেখানে অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব।”

ওই বাড়ির মালিক আনোয়ারা বেগমের স্বামী বদিউর রহমান মারা গেছেন,ছেলেরা আলাদা থাকায় ওই বাড়ি তিনিই দেখভাল করেন।

আনোয়ারা বেগম জানান,তার একতলা ভবনের দুটি কক্ষ তিন দিন আগে ভাড়া নেন হাসান নামের একজন। এক পরিবারের সদস্য পরিচয় দিয়ে তিনজন পুরুষ বাসায় ওঠেন, পরিবারের নারী সদস্যরা পরে আসবেন বলে সে সময় তারা জানান।

“ভাড়া ঠিক হয়েছিল এক হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিলসহ মোট ৫ হাজার টাকা।নতুন ভাড়াটেরা বলেছিল,জাতীয় পরিচয়পত্র দুই দিন পরে দেবে।”

আনোয়ারা বলেন, রাত ৩টার দিকে হঠাৎ তার বাড়ি ঘেরাও করে অভিযান শুরু করে র‌্যাব। পরে নতুন ভাড়াটেদের তিনজনকেই গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।

নিখোঁজ ৪ তরুণসহ সাতজনকে গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব জানাল নতুন জঙ্গি দলের নাম

জামাতুল আনসারের সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান ওরফে মাসুদ ওরফে রণবীর চলতি বছরের শুরুতে র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েন। সংগঠনটির সদস্যদের প্রশিক্ষণের এই চিত্র রণবীরের ফোনে পাওয়া ভিডিও থেকে নেওয়া।
কারা এই জামাতুল আনসার

কুমিল্লা ও ঢাকার সাত কলেজছাত্র গত ২৩ অগাস্ট বাসা থেকে বেরিয়ে আর না ফেরায় থানায় জিডি করেছিল পরিবার। পরে জানা যায়, নিরুদ্দেশ ওই তরুণদের কয়েকজনকে শেষবার দেখা গিয়েছিল চাঁদপুরে।

অক্টোবরের শুরুতে কয়েকজনকে উদ্ধার করে র‌্যাব জানায়, ওই তরুণরা নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ায় যুক্ত হয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য ঘর ছেড়েছিলেন। আলোচনায় আসা জঙ্গি সংগঠনটি নিয়ে এরপর নানা ধরনের তথ্য দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

র‌্যাব বলছে, হরকাতুল জিহাদ, জেএমবি এবং আনসার আল ইসলামের বেশ কিছু সদস্য ২০১৭ সালে নতুন এই উগ্রবাদী সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করে। পরে ২০১৯ সালে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামে কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে।

এদিকে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফ নামে পাহাড়ের একটি সশস্ত্র দলের তৎপরতার খবর বেশ কয়েক মাস ধরেই আলোচনায় আসছিল। পাহাড়িরা কেএনএফ সংগঠনটিকে ‘বম পার্টি’ নামে চেনে। নিজেদের তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রান্তিক অঞ্চলের অনগ্রসর জনজাতিগুলোর ‘প্রতিনিধিত্বকারী’ হিসেবে তুলে ধরে।

এ সংগঠন ‘কুকি-চিন রাজ্যে’ নামে একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল চায়; যেখানে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরারা থাকবে না; থাকবে বম, খিয়াং, পাংখুয়া, লুসাই, খুমি ও ম্রোরা।

দুই দফায় জামাতুল আনসারের ১২ জনকে গ্রেপ্তারের পর র‌্যাবের তরফ থেকে বলা হয়, নতুন এ জঙ্গি সংগঠনকে পাহাড়ের দল বম পার্টি পৃষ্ঠপোষকতা করছে। পাহাড়ে তাদের প্রশিক্ষণও চলছে।

নতুন জঙ্গি দলের ‘পাহাড়ি যোগের’ তথ্য সামনে আসার পর অক্টোবরে পার্বত্য চট্টগ্রামে সমন্বিত অভিযান শুরু করার কথা জানায় র‌্যাব; যার অংশ হিসেবে দুর্গম এলাকায় প্রচারপত্র বিলি, মাইকিংও শুরু হয়।

জঙ্গিদের অবস্থানের তথ্য প্রদানকারীকে এক লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয় ওই লিফলেট। পাশাপাশি জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয় সেখানে।

এর মধ্যে বান্দরবান ও রাঙামাটির দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে গ্রেপ্তারের পর ২১ অক্টোবর র‌্যাবের এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কেএনএফ এর প্রতিষ্ঠাতা নাথান বমের সাথে ২০২১ সালে জামাতুল আনসারের আমিরের সমঝোতা হয়। পার্বত্য অঞ্চলে কেএনএফ’র ছত্রছায়ায় জামাতুল আনসার সদস্যদের ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য তাদের মধ্যে চুক্তিও হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে তিন লাখ টাকা দেওয়ার পাশাপাশি কেএনএফ সদস্যদের খাবার খরচ বহন করে জামাতুল আনসার।

আর ২৭ অক্টোবর সিটিটিসির তরফ থেকে বলা হয়, জামাতুল আনসারের মূল ব্যক্তি শামিন মাহফুজ, যিনি রংপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে বহিষ্কৃত একজন সাবেক শিবির কর্মী।

সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান সেদিন বলেন, কেএনএফ বা বমপার্টির প্রধান নাথান বম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। অন্যদিকে জামাতুল আনসারের বর্তমান আমীর শামিন মাহফুজ ছিলেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তারা খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন।

“জামাতুল আনসারের প্রশিক্ষণের ব্যাপারে যখন দুর্গম জায়গা খোঁজা হচ্ছিল তখন শামিন মাহফুজ জানতে পারে তার বন্ধুই বমপার্টির প্রধান। এরপরে তারা যোগাযোগ শুরু করে এবং কক্সবাজারের একটি হোটেলে বসে টাকার বিনিময়ে প্রশিক্ষণের বিষয়ে চুক্তি হয়।”

এ বছর জুনে শামিন মাহফুজকে গ্রেপ্তারের ওপর সিটিটিসি কর্মকর্তারা জানান, ২০১৪ সালে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর বন্দি থাকা নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবি, হুজি, আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে শামিনের সখ্য গড়ে ওঠে। ২০১৮ সালে জামিনে মুক্তি পেয়েই শামিন নতুন সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করেন। ২০২২ সালের শুরুতে পাহাড়ের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে বসে তিনি সংগঠনের নাম দেন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’।

আরও খবর

Sponsered content