শিক্ষা

শিক্ষার্থীদের কাছে বড় আকর্ষণ—লেকের ভাসমান সেতু

  প্রতিনিধি ২১ মে ২০২৩ , ৩:৩৪:১০ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।দালানগুলোর সামনেই রাস্তা।রাস্তার ওপারে খেলার মাঠ।মাঠ পেরোলেই নেমে গেছে সিঁড়ি।ঘাসে ঢাকা সিঁড়িগুলোর এমাথা থেকে ওমাথা সাজানো হয়েছে ছোট-বড় সারি সারি ফুল ও পাতাবাহার গাছে।এই সিঁড়ি ধরে নেমে গেলেই লেক।স্থানীয় জেলেরা মাছ চাষ করেন লেকের পানিতে।প্রায় সময়ই ছোট ছোট নৌকায় করে তাঁদের জাল ফেলে মাছ ধরতে দেখা যায়।

এই দৃশ্য মিরপুর ক্যান্টনমেন্টে অবস্থিত বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি)।লেকের পারের এই জায়গাটিকে ডাকা হয় মনপুরা নামে।তবে এটি ঠিক দাপ্তরিক নাম নয়।প্রাথমিকভাবে নাম রাখা হয়েছিল জলসিঁড়ি।পরে কীভাবে,কেন আর কবে থেকে যে সবাই মনপুরা ডাকা শুরু করলেন,কারও জানা নেই।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণের এই মাঠ,সবুজ সিঁড়ি,লেকের পানি ও পাড়ের ডুবন্ত সূর্য ছাড়াও শিক্ষার্থীদের কাছে বড় আকর্ষণ—লেকের ভাসমান সেতু।ফাঁপা প্লাস্টিকের কিউব দিয়ে বানানো সেতুটি দেখে মনে হয়,যেন বাচ্চাদের খেলনা লেগো দিয়ে তৈরি।সেতুর দৈর্ঘ্য ১০০ মিটারের বেশি।এই সেতু ঘিরে বিইউপির শিক্ষার্থীদের কত যে গল্প,আনন্দ,উচ্ছ্বাস!

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে গায়েহলুদও!
লেকের ওপারে ক্লাস থাকলে এই সেতু পেরিয়েই হেঁটে যান শিক্ষার্থীরা।লেকের পানির মতোই চঞ্চল এই চলার পথ। হাঁটতে গেলেই দুলতে থাকে।দুলুনিতে কেউ কেউ খুব আনন্দ পান, কেউ পান ভয়।‘ভয় পাওয়া’ বন্ধুটিকে আরও ভয় দেখাতে মাঝেমধ্যে অন্যরা সেতুর ওপর লম্ফঝম্প শুরু করেন।

অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে:-
বছর তিনেক আগের কথা।সেতুটি তখন সদ্যই বানানো হয়েছে। সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী নোশিন সাইয়ায়া ইসলামের বিয়ের খবর পেয়ে এই সেতুর ওপরই গায়েহলুদের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন তাঁর বন্ধুরা।সেতুর ছবিও শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চোখে পড়ে হরহামেশা।এক শীতের সকালে কুয়াশাচ্ছন্ন সেতুর ছবি ফেসবুকে দিয়ে যেমন রাকিব হাসান নামের এক শিক্ষার্থী লিখেছিলেন, ‘স্বর্গের রাস্তা’।

করোনাকালের আগে এই ভাসমান সেতুর ওপর মঞ্চ বানিয়ে বসন্ত উদ্‌যাপন করেছিলেন বিইউপিয়ানরা। সেই দিনের স্মৃতি এখনো মনে পড়ে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী লাবণ্য ইসলামের।বলছিলেন, ‘এই ব্রিজে আমরা দল বেঁধে নেচেছিলাম।কী মজাটাই না হয়েছিল!তাই না?’ পাশে বসা বন্ধু আগ্নিলাও সায় দেন।বলেন, ‘ইশ, আবার যদি ফিরে পেতাম এমন দিন!’

থার্ড প্লেস নামকরণের পেছনের গল্পটাও চমকপ্রদ।মার্কিন সমাজবিজ্ঞানী রে ওলডেনবার্গ দ্য গ্রেট গুড প্লেস নামে একটা বই লিখেছিলেন। বইটিতে তিনি মানুষের জীবনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গার কথা লেখেন।তাঁর মতে, ফার্স্ট প্লেস বা প্রথম জায়গা হলো বাসা,যেখানে মানুষ তাঁর পরিবারের সঙ্গে বসবাস করে। সেকেন্ড প্লেস বা দ্বিতীয় জায়গা হচ্ছে কর্মক্ষেত্র, যেখানে মানুষ দিনের বেশির ভাগ সময় কাটায়। আর থার্ড প্লেস হলো—যেখানে মানুষ শারীরিক ও মানসিক বিশ্রাম নেয়,চেনা মুখদের সঙ্গে সময় কাটায় এবং নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হয়।ওলডেনবার্গের মতে,ব্যক্তির সমাজবোধ ও গণতন্ত্রের ধারণা গড়ে ওঠার জন্য এই ‘তৃতীয় স্থান’ খুব প্রয়োজন।

ওলডেনবার্গের দেওয়া প্রেক্ষাপট ধরেই বিইউপিতে ২০২২ সালে বানানো হয় এই তৃতীয় জায়গা,যেটি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মিলনস্থল হয়ে উঠেছে।সারি সারি গোলটেবিলের সঙ্গে বসার জন্য রাখা আছে চেয়ার।গরমে যেন কষ্ট না হয়, সে জন্য আছে ফ্যানের ব্যবস্থা।চারদিকে আছে ঝুলন্ত গাছ। ‘এই ঝোলানো গাছগুলো কিন্তু প্লাস্টিকের’, হেসে ভুল ভাঙিয়ে দেন শিক্ষার্থী তাহিরা সামসি।সঙ্গে যোগ করেন, আশপাশে কিন্তু অনেকগুলো ফলের গাছও আছে।ওগুলো সত্যিকারের।পেয়ারা,ডুমুর,জাম্বুরা,আরও অনেক ফলগাছ পাবেন।তবে ক্যাম্পাসের ফুলের গাছগুলো বেশি সুন্দর। কাঠবাদাম গাছে যখন লাল ফুল ধরে,দারুণ লাগে!

থার্ড প্লেসের পাশেই খাবারের ব্যবস্থা।পাওয়া যায় গরম-গরম ফুচকা,চটপটি,ঝালমুড়ি,ভাজাপোড়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্বাদের আইসক্রিম,ঠান্ডা ফলের জুস ছাড়াও কয়েক প্রকার প্যাকেটজাত পানীয়।

শেষ বিকেলে শিক্ষার্থীদের আড্ডা,হাসি কিংবা গিটারের টুংটাংয়ের সঙ্গে সমবেত কণ্ঠের গানে প্রাণ পায় এই হ্রদ, ভাসমান সেতু আর থার্ড প্লেস।কিন্তু শেষ বিকেলে হ্রদের ওপর ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া পাখিদের দেখে শিক্ষার্থীদেরও মনে পড়ে ঘরে ফেরার কথা।বাসগুলো ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ার আগপর্যন্ত বন্ধুরা একসঙ্গে সূর্যাস্ত উপভোগ করেন।আবারও নিশ্চুপ হয় লেক। অপেক্ষা পরের দিনের।

আরও খবর

Sponsered content