চাকরির খবর

শিক্ষক নিবন্ধনের ২৬ হাজারের বেশি প্রার্থী বয়সের গ্যাড়াকলে চাকরি পাওয়া নিয়ে শঙ্কায়

  প্রতিনিধি ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ , ৩:০২:১৩ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন টাঙ্গাইলের মো. রেজা খান।আবেদনের সময় তার বয়স ছিল ৩১ বছর তিন মাস।বর্তমানে রেজার বয়স ৩৫ বছর ছুঁই ছুঁই।মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার আশা থাকলেও বয়সসীমা শেষ হওয়ার কারণে ৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে পারবেন না তিনি।ফলে চরম হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন রেজা।

তিনি জানান, ‘আমি পাঁচটি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছি।অনেক পরিশ্রমের পর ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মৌখিক অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছি।তবে এমপিও নীতিমালার কারণে মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও চাকরির আবেদন করতে পারবো না।আমার শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নও পূরণ হবে না।’

শুধু রেজাই নন; ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ২৬ হাজারের বেশি প্রার্থী বয়সের গ্যাড়াকলে চাকরি পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।তারা বলছেন, প্রায় চার বছর ধরে একটি নিবন্ধনের কার্যক্রম চলছে। অনেকের বয়স শেষ হয়েছে।অনেকের শেষের দিকে। এই অবস্থায় ৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতে বয়সের ছাড় দেওয়া না হলে ১৭তম নিবন্ধনে পাস করেও অধিকাংশ নিবন্ধনধারী চাকরি পাবেন না।

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) বলছে, এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের সর্বোচ্চ বয়স ৩৫ বছর।কাজেই ৩৫ বছর অতিক্রম হলে নিয়োগ সুপারিশের এখতিয়ার এনটিআরসিএ’র নেই। ৫ম গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগে প্রার্থীদের দাবির বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হবে।এরপর মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত দেবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় বয়স উল্লেখ করে দেয়।বিসিএসের ফল চার বছর পর হলেও যেদিন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় সেদিন থেকে প্রার্থীদের বয়স হিসেবে করা হয়।তবে এনটিআরসিএ সেটি করে না।ফলে মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও অনেকেই গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে পারবে না।তাদের শিক্ষক হওয়ার লালিত স্বপ্ন পূরণ হবে না।এই অবস্থায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন থেকে বয়স হিসেব করার জোর দাবি জানান তারা।

এ বিষয়ে এনটিআরসিএ সদস্য এস এম মাসুদুর রহমান বলেন, ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের বয়সে ছাড় দেওয়া হবে কি না সে বিষয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি।৫ম গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পূর্বে এ বিষয়ে আলোচনা হলেও হতে পারে।বয়সে ছাড়ের বিষয়টি নির্ভর করছে মন্ত্রণালয়ের সিদ্বান্তের ওপর।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা মহামারির কারণে সরকারি ও স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরিপ্রার্থীদের ক্ষতি পোষাতে আবেদনের ক্ষেত্রে ৩৯ মাস ছাড় দেয় সরকার।বিসিএস ছাড়া সরকারি ও স্বায়ত্ত্বশাসিত সব চাকরির ক্ষেত্রে তিন দফায় এই ছাড় দেওয়া হয়। প্রথম দফায় বয়সসীমায় ২১ মাস ছাড় দিয়ে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।সর্বশেষ ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর প্রার্থীদের সর্বোচ্চ বয়সসীমায় ৩৯ মাস ছাড় দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

চাকরিপ্রার্থীরা জানান, ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় ২০২০ সালে। করোনাভাইরাসের কারণে পরীক্ষা আয়োজন থেকে বিরত থাকে এনটিআরসিএ।তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও পরীক্ষা আয়োজনে গড়িমসি করে সংস্থাটি। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রায় তিন বছর পর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা আয়োজন করা হয়। সঠিক সময়ে পরীক্ষা হলে অনেক আগেই এই নিবন্ধনের কার্যক্রম শেষ হয়ে যেত।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ, এমপিওভুক্ত হওয়া সংক্রান্ত একটি নীতিমালা রয়েছে। ওই নীতিমালায় বয়স ৩৫ বছর অতিক্রম হলে শিক্ষক হওয়ার সুযোগ নেই।তবে ইনডেক্সধারীদের ক্ষেত্রে শর্তটি শিথিলযোগ্য।কাজেই এ বিষয়ে নতুন করে আলোচনার সুযোগ আছে বলে আমার মনে হয় না।তবে যেহেতু ২০২০ সালে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল, সেহেতু মন্ত্রণালয় চাইলে বয়সে ছাড়ের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে—ওবায়দুর রহমান, সচিব, এনটিআরসিএ

তারা জানান, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় বয়স উল্লেখ করে দেয়।বিসিএসের ফল চার বছর পর হলেও যেদিন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় সেদিন থেকে প্রার্থীদের বয়স হিসেবে করা হয়।তবে এনটিআরসিএ সেটি করে না। ফলে মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও অনেকেই গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে পারবে না।তাদের শিক্ষক হওয়ার লালিত স্বপ্ন পূরণ হবে না।এই অবস্থায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন থেকে বয়স হিসেব করার জোর দাবি জানান তারা।

মো. জসিম উদ্দীন নামে এক চাকরিপ্রার্থী জানান, ১৭তম নিবন্ধনের কার্যক্রম শেষ করতে প্রায় চার বছর লেগেছে।এর আগে অন্য কোনো নিবন্ধনের ক্ষেত্রে এত দীর্ঘ সময় লাগেনি।চার বছরে অনেকেরই বয়স শেষ হয়েছে।অনেকের বয়স শেষ দিকে। ৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতে বয়সের ছাড় দেওয়া না হলে অনেকেই চাকরি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন।শিক্ষক সংকট দূর করতে ৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতে অবশ্যই বয়সে ছাড় দেওয়া উচিত।

তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সরকার চাকরিপ্রার্থীদের বয়সে যে ছাড় দিয়েছিল সেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে,যেসব মন্ত্রণালয়-বিভাগ ও এর অধীন অধিদপ্তর,পরিদপ্তর,দপ্তর এবং সংবিধিবদ্ধ, স্বায়ত্ত্বশাসিত বা জাতীয়কৃত প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ক্যাটাগরির সরকারি চাকরিতে (বিসিএস ছাড়া) সরাসরি নিয়োগের লক্ষ্যে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারেনি,সেসব দপ্তর বা প্রতিষ্ঠানের ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকাশিতব্য বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত পদে আবেদনের ক্ষেত্রে প্রার্থীর বয়স ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সর্বোচ্চ বয়সসীমার মধ্যে থাকলে ওই প্রার্থী আবেদন করার সুযোগ পাবেন।’

১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে। তাহলে আমরা কেন বয়সে ছাড় পাবো না—এমন জিজ্ঞাসাও এই চাকরি প্রত্যাশীর।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএ’র সচিব মো. ওবায়দুর রহমান  বলেন,বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ,এমপিওভুক্ত হওয়া সংক্রান্ত একটি নীতিমালা রয়েছে।ওই নীতিমালায় বয়স ৩৫ বছর অতিক্রম হলে শিক্ষক হওয়ার সুযোগ নেই।

তবে ইনডেক্সধারীদের ক্ষেত্রে শর্তটি শিথিলযোগ্য। কাজেই এ বিষয়ে নতুন করে আলোচনার সুযোগ আছে বলে আমার মনে হয় না।তবে যেহেতু ২০২০ সালে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল,সেহেতু মন্ত্রণালয় চাইলে বয়সে ছাড়ের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে বলেও জানান তিনি।

তথ্য বলছে,২০২০ সালের জানুয়ারিতে ১৭তম নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ২০২২ সালের ৩০ ও ৩১ ডিসেম্বর ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।এতে এক লাখ ৫১ হাজার প্রার্থী উত্তীর্ণ হন।

  • চলতি বছরের ৫ ও ৬ মে শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হয়।এতে অংশ নেন মোট এক লাখ চার হাজারের বেশি প্রার্থী।গত ৩০ আগস্ট লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়।এতে উত্তীর্ণ হয়েছেন ২৬ হাজার ২৪২ জন প্রার্থী। আগামী বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) এই নিবন্ধনের মৌখিক পরীক্ষা শেষ হবে।

আরও খবর

Sponsered content