সারাদেশ

শাহবাজপুরে ৪০ দিনের কর্মসূচিতে হতদরিদ্রদের কর্মসংস্থান, রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন

  প্রতিনিধি ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ , ৩:২৮:১৫ প্রিন্ট সংস্করণ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি।।চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নে ২০২২-২৩ অর্থবছরে হতদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচিতে কর্মসংস্থান হয়েছে স্থানীয় অসহায় দরিদ্র খেটে-খাওয়া দিনমজুর শ্রেণীর মানুষদের। প্রকল্পটির আওতায় পুরো ইউনিয়নে কাজ করছে ৪৫৯ জন শ্রমিক। ৪০ দিনের এই কর্মসূচিতে কাজ করছেন, স্বামী পরিত্যাক্তা, বিধবা, অসহায় নারী, অস্বচ্ছল কর্মহীন মানুষজন। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি ইউনিয়নজুড়ে হচ্ছে ব্যাপক উন্নয়ন।

শাহবাজপুর ইউনিয়নে ২০২২-২৩ অর্থবছরে হতদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির প্রথম পর্যায়ে একযোগে ৫টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। পাঁচটি প্রকল্পে বরাদ্দের পরিমান ধরা হয়েছে ৭৪ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে প্রকল্পগুলোর কাজ। কাজের মান বজায় রাখতে উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিগণ সরেজমিনে কাজ করছেন।

শাহবাজপুর ইউনিয়নের প্রকল্পগুলো হলো- ০১ নম্বর ওয়ার্ডে গোপালপুর চাপড় ফরিদের বাড়ি হতে কালভার্ট পর্যন্ত ভায়া, লেধ্রীর বাগান হতে সেন্টুর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার। এই প্রকল্পে ৮৩ জন শ্রমিক কাজ করছে। এর বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১০ লাখ ২৮ হাজার টাকা।

০২ নম্বর ওয়ার্ডে চলছে দমদমা পুকুর হতে মাঝাঘোন পুকুর পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার। এই প্রকল্পে কাজ করছে ১০৩ জন শ্রমিক এবং এখানে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। ০৬ নম্বর ওয়ার্ডে আকুটার বন রাস্তার জাবেদ ডাক্তারের বাড়ি হতে শেষ মাথা পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার কাজ চলছে আরেকটি প্রকল্পের আওতায়৷ সেখানে নিয়োজিত শ্রমিকের সংখ্যা ৪৭ জন ও বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৫২ হাজার।

এছাড়াও শাহবাজপুর ইউনিয়নের ০৯ নম্বর ওয়ার্ডে চলছে সবচেয়ে বড় প্রকল্পের কাজ। নামেচাকপাড়া গ্রামের আশাড়ীর বাড়ি হতে উপর চাকপাড়া কালভার্ট পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার কাজ করছে ১১৭ জন নারী-পুরুষ শ্রমিক৷ এই প্রকল্পটিতে বরাদ্দ হয়েছে ১৮ লাখ ৭২ হাজার টাকা। ০৭ নম্বর ওয়ার্ডের তেলকুপি গ্রামের জেন্টুর বাড়ি থেকে লাল বাবুর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারে কাজ করছে আরও ১০৯ জন শ্রমিক।

স্বামী পরিত্যক্তা তোহরা বেগম কাজ করছেন ৪০ এই প্রকল্পে। তিনি জানান, স্বামী ছেড়ে দেয়ার পর দুই সন্তানকে নিয়ে খুব অসহায়ের মধ্যে দিন পার হচ্ছে। মানুষের বাড়ি বাড়ি চেয়ে দিন যায়। এই প্রকল্পে কাজ পেয়ে যা টাকা পাব, তাতে তিনজনের সংসারের খরচ বহন করা যাবে কয়েক মাসের।

স্থানীয় কলেজ শিক্ষক ইমাম হাসান জুয়েল বলেন, এই প্রকল্পের ফলে কর্মহীনদের পাশাপাশি রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। এতে অনেক ভাঙ্গাচুরা রাস্তা আবারও চলাচলের উপযোগী করে গড়ে তোলা হচ্ছে। সরকারের এমন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।

৪০ দিনের কর্মসূচির শ্রমিক শাহবাজপুর ইউনিয়নের বালিয়াদিঘী গ্রামের আব্দুল জাব্বার বলেন, বয়স প্রায় ৬০ বছর পেরিয়েছে। তেমন কর্মক্ষমতা নেই। প্রতিবেশীদের সহযোগিতা নিয়ে চলাফেরা করি। আমার আর্থিক অবস্থা দেখে ইউপি সদস্য এই প্রকল্পে আমাকে কাজ দিয়েছেন। কাজটা পেয়ে যা টাকা পাব, তা দিয়ে সংসার চালানো যাবে। কাজটা পেয়ে খুবই উপকার হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এর আগে ৪০ দিনের কর্মসূচি হয়েছে, তা আমরা ভালভাবে জানতে পারিনি। কিন্তু এবার ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় রাস্তাঘাট সংস্কার লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবং অতিদরিদ্র শ্রমিকরা কাজ করছে। আমরা দেখে খুব আনন্দিত হয়েছি। ইউএনও মহোদয় এবিষয়ে খুব তৎপর, কারণ তিনি নিজে প্রকল্প পরিদর্শন করছেন এবং হাজিরা নিচ্ছেন। এটা সত্যিই প্রশংসনীয়।

শাহবাজপুর ইউনিয়নের ০১ নম্বর প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য মো. হুমায়ন কবীর। তিনি জানান, শ্রমিকরা কাজে গাফেলতি করবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাদের মাধ্যমে সঠিকভাবে কাজ করিয়ে নিতে গ্রাম পুলিশ সদস্য ও ইউপি সদস্যরা নিয়মিত কাজ তদারকি করছে। এছাড়াও প্রতিদিন নিয়মিতভাবে হাজিরা হয়। যারা অনুপস্থিত থাকবে, তাদের এ্যাকাউন্টে টাকা যাবে না।

এবিষয়ে শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নিজামুল হক রানা বলেন, পুরো ইউনিয়নে ৫টি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এসব প্রকল্পে ইউনিয়নের বিভিন্ন জরাজীর্ণ ভাঙ্গা পরিত্যক্ত রাস্তাঘাট মেরামত করা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে সমাজের অসহায় দরিদ্র খেটে-খাওয়া দিনমজুর শ্রেণীর মানুষদের কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে। এতে আর্থিকভাবেও লাভবান হচ্ছে তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই উদ্যোগে ব্যাপক উপকৃত হচ্ছে প্রকল্পে নিয়োজিত শ্রমিকরা।

শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হায়াত বলেন, ৪০ দিনের কর্মসূচিতে অনিয়ম সহ্য করা হবে না। পর্যায়ক্রমে আমি অনেকগুলো ইউনিয়ন পরিদর্শন করেছি, তবে যেখানে অনিয়ম পেয়েছি সেখানে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এছাড়া সকল ইউনিয়নে ৪০ দিনের কর্মসূচি প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে চলমান রয়েছে। তিনি এই প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

উল্লেখ্য, শিবগঞ্জ উপজেলায় ৪০ দিনের কর্মসূচিতে প্রায় ৪৫০০ জন নারী-পুরুষ শ্রমিক কাজ করছে।

আরও খবর

Sponsered content