প্রতিনিধি ৪ মার্চ ২০২৩ , ১২:৪৩:৩৭ প্রিন্ট সংস্করণ
শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধি।।পদ্মা নদীর ওপর দিয়ে সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে চরাঞ্চলে সংযোগ দেওয়া হয়েছে বিদ্যুতের। এতে চরের ৫৭টি গ্রামের মানুষ আনন্দিত,উচ্ছ্বসিত।দুর্গম এ চরাঞ্চলে নতুন ব্যবসা,কৃষি ও মৎস্য খাতভিত্তিক শিল্প সম্প্রসারণের স্বপ্ন দেখছেন এখানকার মানুষেরা।

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার নওপাড়া মুন্সিকান্দি গ্রামের বাসিন্দা ফজলুল হক ব্যাপারী (৪০) কিশোর বয়স থেকে নদীতে মাছ শিকার ও কৃষিশ্রমিকের কাজ করতেন।বেশি আয়ের আশায় এক দশক আগে পাড়ি জমান ঢাকায়। সেখানে গাড়ির গ্যারেজে শ্রমিকের কাজ করতেন। পদ্মা নদী পেরিয়ে চরে বিদ্যুৎ আসার প্রস্তুতি দেখে তিনি গত বছর গ্রামে ফিরে আসেন।চালু করেন অটোরিকশার যন্ত্রাংশের দোকান।নতুন এ ব্যবসায় ফজলুল হকের আয় বাড়বে, সংসারে ফিরবে সচ্ছলতা,এমন স্বপ্ন তাঁর।
ফজলুল হক বলেন,উত্তাল পদ্মা পেরিয়ে দুর্গম চরে বিদ্যুৎ এসেছে।এটি আমাদের জীবন ও আমাদের গ্রামকে বদলে দেবে।এখন বাড়ির পাশে দোকান চালিয়ে মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করতে পারব।স্বাচ্ছন্দ্যে সংসার চলবে, সন্তানেরা পড়ালেখা করবে।’
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চরআত্রা,নওপাড়া, জাজিরার কুন্ডেরচর,ভেদরগঞ্জের কাচিকাটা,চাঁদপুর সদরের রাজরাজেশ্বর,মতলবের,একলাশপুর ও জহিরাবাদ ইউনিয়ন পদ্মা নদীর চরে অবস্থিত।ওই সব ইউনিয়নের ৫৭টি গ্রামে জনবসতি আছে।নৌকা ও ট্রলারে করে গ্রামের বাসিন্দারা বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেন।চরগুলোতে কোনো সড়ক ছিল না,ছিল না বিদ্যুতের সংযোগ।দীর্ঘ ও উত্তাল নদী পেরিয়ে বিদ্যুতের সংযোগ স্থাপন করাও ছিল দুরূহ কাজ।
শরীয়তপুর ও মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্র জানায়, শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম ২০১৯ সালে চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেন।পদ্মা নদীর তলদেশ দিয়ে দেড় কিলোমিটার সাবমেরিন কেব্লের মাধ্যমে প্রথমে বিদ্যুৎ নেওয়া হয় নড়িয়ার নওপাড়া ও চরআত্রা ইউনিয়নে। নওপাড়ায় ১০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়।ওই উপকেন্দ্র থেকে ৫৭টি গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।গতকাল শুক্রবার ওই সঞ্চালন লাইনের উদ্বোধন করা হয়।
গ্রামগুলোতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে চরাঞ্চলে ২৭৮ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে।আর নড়িয়ার নওপাড়া ও মুন্সিগঞ্জের দীঘিরপাড় এলাকায় পদ্মা নদীর ওপরে আটটি খুঁটির মাধ্যমে দেড় কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন দিয়ে চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ আনা হয়েছে।ওই সঞ্চালন লাইন দিয়ে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনা যাবে।বর্তমানে চরের সাড়ে ১২ হাজার গ্রাহকের ১ দশমিক ৫২ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা আছে।চরাঞ্চলে কৃষি ও মৎস্যভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বাকি বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যাবে।
চরআত্রার বাসিন্দা শাহীন হাওলাদার ঢাকার সাইনবোর্ড এলাকার একটি গ্যারেজে কাজ করতেন।বিদ্যুতে বদলে যাবে চরাঞ্চলের অর্থনীতি এমন স্বপ্ন দেখে মুন্সিকান্দিতে একটি ওয়ার্কশপ খুলেছেন।শাহীন হাওলাদার বলেন,ঢাকার গ্যারেজে কাজ করে ১০ হাজার টাকা বেতন পেতাম।এখন গ্রামে ওয়ার্কশপ খুলেছি।মোটরসাইকেল ও অটোরিকশার কাজ শুরু করেছি।আশা করছি ভালো আয় হবে।আয়ের টাকা দিয়ে জমি কিনব,ব্যবসা সম্প্রসারণ করব এমন পরিকল্পনা করছি।’
ভেদেরগঞ্জের কাচিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমীন দেওয়ান বলেন,চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ায় মানুষ আনন্দিত,উচ্ছ্বসিত।আমাদের এ অঞ্চল কৃষি ও মৎস্যপ্রধান।বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এ অঞ্চলে উৎপাদিত কৃষিপণ্য ও মৎস্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছি আমরা।’
শরীয়তপুরের চরাঞ্চলগুলো কৃষি,মৎস্য ও পর্যটনের সম্ভাবনার জায়গা বলে মন্তব্য করেন জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান। তিনি বলেন,ওই জায়গাগুলো এখন আরও সমৃদ্ধ করতে হবে। সে অনুযায়ী সরকার কাজ করছে।এই চরাঞ্চলে কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজও শুরু হয়েছে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন,প্রথমে সাবমেরিন কেব্লের মাধ্যমে শরীয়তপুর ও আশপাশের জেলার চরগুলোতে বিদ্যুৎ নেওয়া হয়েছে।এখন তা স্থায়ীভাবে সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে নেওয়া হলো।বিদ্যুতের কল্যাণে অবহেলিত চরের জনপদ বদলে যাবে। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য শিল্পকারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।চরের জনগোষ্ঠীকে দক্ষ শ্রমিক হিসেবে গড়ে তুলতে কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন করা হবে।








