আন্তর্জাতিক

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে জি সেভেনে বনাম ব্রিকসের অর্থনৈতিক প্রতিযোগীতা পারিসের জন্য ভুল হচ্ছে কিনা!

  প্রতিনিধি ১০ জুন ২০২৩ , ২:০৭:৪২ প্রিন্ট সংস্করণ

অনলাইন ডেস্ক রিপোর্ট।।যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন শিল্পোন্নত দেশের জোট জি ৭ এবং চীনের নেতৃত্বাধীন ব্রিক্‌স দেশগুলোর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) মধ্যে ২০২০ সালেও সমতা ছিল।তারপর থেকে ব্রিক্‌স অর্থনীতি জি ৭-এর তুলনায় দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন বিশ্বের মোট উৎপাদনের এক-তৃতীয়াংশই আসে ব্রিক্‌স দেশগুলো থেকে, যেখানে জি ৭ থেকে আসে ৩০ শতাংশের কম।

জিডিপির এই পার্থক্যের পেছনে সুস্পষ্ট কারণ যা-ই থাকুক না কেন, সামগ্রিকভাবে এর পেছনে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক বিষয় জড়িত।সম্প্রতি জাপানের হিরোশিমায় জি৭ দেশগুলোর সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে নিয়ে আসায় বিশ্ব মনোযোগ সেদিকেই ছিল। তাই বিশ্ব অর্থনীতিতে কী বাড়ছে আর কী কমছে—এই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ততটা আলোচনায় আসেনি।

ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা কার্যত ব্যর্থ হয়েছে, যা ব্রিক্‌স জোটের শক্তিকে আরও প্রমাণ দেয়।একসময়ের আধিপত্যবাদী জি৭-এর দাবি ও চাপকে মোকাবিলা করতে উল্টো সেই দেশগুলোকে বরং ব্রিক্‌স জোট এখন বিকল্প প্রস্তাব দিতে পারে এবং চাপে রাখতে পারে।

রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার পরবর্তী চেষ্টা জি৭-এর জন্য আত্মঘাতী হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ তো উচ্চ স্বরে এই বলে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন,রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে জি৭ বনাম ব্রিক্‌সের অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা প্যারিসের জন্য ভুল হচ্ছে কি না।

সম্ভবত ইউক্রেন যুদ্ধ ছাড়াও কোরিয়া থেকে ভিয়েতনাম হয়ে আফগানিস্তান ও ইরাক পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থ স্থলযুদ্ধ প্রভাবিত করেছে স্বল্পোন্নত এসব দেশকে। মিত্র দেশগুলোর উন্নয়ন ঋণের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ওয়াশিংটনের আন্তর্জাতিক ঋণদানকারী মিত্রদের (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও বিশ্বব্যাংক) সঙ্গে প্রকাশ্যে ক্রমবর্ধমানভাবে প্রতিযোগিতা করছে চীন।

জি৭ থেকে চীনের অর্থনৈতিক সহযোগিতায় স্থানান্তর শত বছরের ঋণ নির্ভরশীলতাকে পেছনে ফেলে দেয় কি না, তা সময়ই বলে দেবে।ইতিমধ্যে চীনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে দেশটির রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনগুলো স্পষ্ট। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়,জি৭-এর চাপ থাকা সত্ত্বেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আফ্রিকার দেশগুলোর নিরপেক্ষতা।

ডি-ডলারাইজেশন বিশ্ব অর্থনীতি দ্রুত পুনর্গঠনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ২০০০ সাল থেকে মার্কিন ডলারে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে মুদ্রা মজুতের অনুপাত অর্ধেক নেমে গেছে, সেই পতন অব্যাহত রয়েছে।

কোনো না কোনো দেশ তাদের নিজস্ব মুদ্রায় বা ডলারের বদলে অন্য মুদ্রায় ব্যবসা-বাণিজ্যের লেনদেন ও বিনিয়োগ করছে এমন খবর প্রতি সপ্তাহেই পাওয়া যাচ্ছে।

এদিকে চীন সম্প্রতি ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনে মধ্যস্থতা করেছে।এতে চীনের কর্তৃত্ব মধ্যপ্রাচ্যেও ছড়িয়ে পড়ছে।চীনের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উৎস এবং ব্রিক্‌স দেশগুলোর সফলতা চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে জি৭ দেশগুলোর অর্থনৈতিক আধিপত্যকে।

গত ২৭ মার্চ থেকে ২ এপ্রিলের মধ্যে পিউ রিসার্চ সেন্টারের একটি জরিপে আমেরিকানদের মত নেওয়া হয়।তাঁদের প্রশ্ন করা হয়েছিল,আজকের তুলনায় ২০৫০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি কী হতে পারে।এর উত্তরে ৬৬ শতাংশ মনে করেন, মার্কিন অর্থনীতি দুর্বল হবে। ৭১ শতাংশের মতে,যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে কম গুরুত্বপূর্ণ হবে।৭৭ শতাংশের আশঙ্কা,যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিকভাবে আরও বিভক্ত হবে।এ ছাড়া ৮১ শতাংশ মনে করে,ধনী-গরিবের মধ্যে ব্যবধান বাড়বে।

যুক্তরাষ্ট্র এখন দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের মুখোমুখি। প্রথমত, দেশটির বেশির ভাগ নেতা তাঁদের অর্থনৈতিক ও বৈশ্বিক পতনকে কত দিন অস্বীকার করবেন।তাঁরা এমনভাবে আর কত দিন অভিনয় করবেন,১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিবর্তন হয়নি?দ্বিতীয়ত,দীর্ঘ মেয়াদে এই পতনের প্রবণতা যখন দেশটির বেশির ভাগ মানুষই স্বীকার করে নিচ্ছেন,তখন নেতাদের এ ধরনের আচরণ কীভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে?

মার্কিন নেতারা মরিয়াভাবে যা অস্বীকার করেছেন,দেশটির জনগণ তা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারছেন। এই পার্থক্য মার্কিন রাজনীতিকে তাঁতিয়ে তুলছে।

আরও খবর

Sponsered content