অর্থনীতি

যে ব্যাংক বেশি দাম দেবে,স্বাভাবিকভাবেই সেখানে বেশি রেমিট্যান্স যাবে

  প্রতিনিধি ২৯ জানুয়ারি ২০২৫ , ৩:২২:২৪ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।একটি বেসরকারি ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ” ইনফ্লো চার্ট দেখলেই বোঝা যায়,কোন ব্যাংকগুলো বেশি দামে রেমিট্যান্স ডলার সংগ্রহ করছে।আমরা ১২২ টাকা রেটে ডলার দিচ্ছি।তবুও রেমিট্যান্স আসছে না।অথচ তুলনামূলকভাবে দুর্বল একটি ব্যাংক একই রেটে আমাদের চেয়ে ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি রেমিট্যান্স পাচ্ছে।এই তথ্য বিশ্বাসযোগ্য নয়।”

তিনি আরও বলেন, “রেমিট্যান্স মার্কেট রেট সেন্সিটিভ (ডলারের রেটের প্রতি সংবেদনশীল)।যে ব্যাংক বেশি দাম দেবে,স্বাভাবিকভাবেই সেখানে বেশি রেমিট্যান্স যাবে।”

২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সপ্তাহভিত্তিক রেমিট্যান্স ইনফ্লোর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে,ব্যাংকিং খাত মোট ১.৬৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে।বিভিন্ন ব্যাংকের রেমিট্যান্স প্রবাহে ভিন্ন প্রবণতা রয়েছে।কিছু ব্যাংকের রেমিট্যান্স গত দুই সপ্তাহে কমে গেছে।অথচ কিছু ব্যাংক, যারা আগে সাপ্তাহিক ৩০ থেকে ৪০ লাখ ডলার পেত,তারা সর্বশেষ সপ্তাহে ১.৩ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পেয়েছে।

ব্যাংকগুলো নির্ধারিত রেটের বেশি অফার করেও কীভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ভুল তথ্য রিপোর্ট করারর সুযোগ পাচ্ছে জানতে চাইলে একাধিক ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন,ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত দরের তথ্য গোপন করার জন্য ৪ থেকে ৫টি পদ্ধতি ব্যবহার করে।

একটি সাধারণ পদ্ধতি হলো,আমদানিকারকদের একত্রিত রেমিট্যান্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত করা।এই ব্যবস্থায়, আমদানিকারক সরাসরি এগ্রিগেটরদের প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে কাজ করে এবং আমদানিকারকরাই অতিরিক্ত দাম রেমিট্যান্স হাউজকে আলাদা পেমেন্ট করে দেয়।

এছাড়া অন্যান্য পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে,গোপনে অতিরিক্ত রেট পেমেন্ট করা,ভুয়া অ্যাকাউন্ট তৈরি করে অতিরিক্ত রেটের অংশটি সাময়িকভাবে জমা রাখা এবং পরবর্তীতে সুবিধাজনক সময়ে তা স্থানান্তর করা।এমনভাবে এগ্রিগেটররা ক্ষতিপূরণ পায়।

কর্মকর্তারা আরও দাবি করেছেন,বাংলাদেশ ব্যাংক এসব কার্যক্রম সম্পর্কে জানে এবং আগে কিছু ব্যাংকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ডলারের দর ১২৮ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক ১৩টি ব্যাংককে অতিরিক্ত দামে ডলার কেনার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে ডেকেছিল।এর পর বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়ে ব্যাংকগুলোর ট্রেজারি প্রধানদের ১২৩ টাকার ওপরে রেমিট্যান্স ডলার না কেনার নির্দেশ দেয়।

এরপর,ডিসেম্বরের শেষ দিকে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে একটি সভা করেন এবং রেমিটেন্স ও রপ্তানিতে সব ব্যাংককে একই দর দেওয়ার নির্দেশ দেন।

এছাড়া,এগ্রিগেটরদের প্রভাব কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ছোট মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নিয়ম শিথিল করেছে। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এসব প্রতিষ্ঠান ১০ হাজার ডলার সিকিউরিটি ডিপোজিট এবং নন-রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি (এনআরএফসি) অ্যাকাউন্টে ন্যূনতম ব্যালেন্স রাখার বাধ্যবাধকতা ছাড়াই সরাসরি ব্যাংকগুলোর কাছে রেমিট্যান্স ডলার বিক্রি করতে পারবে।

আরও খবর

Sponsered content