আন্তর্জাতিক

যুক্তরাজ্যের ভোটারদের প্রধান ৫ ইস্যু ভোটের ব্যালটে’ প্রাধান্য পাবে

  প্রতিনিধি ৪ জুলাই ২০২৪ , ৬:০৩:১৬ প্রিন্ট সংস্করণ

অনলাইন ডেস্ক রিপোর্ট।।নানা সমস্যায় জর্জরিত এক সময়ের ‘গ্রেট ব্রিটেন’ বা যুক্তরাজ্য।পরিবর্তন আশায় দিন গুনতে থাকলেও পরিস্থিতি পালটায়নি।ক্ষমতায় থাকা হর্তাকর্তারা বারবারই নিরাশ করেছেন ভোটারদের।ফলে ভোটের আগেই এক দশক পুরোনো কনজারভেটিভ পার্টির মুখ থুবড়ে পড়ার গুঞ্জন শুরু হয়। নিজেদের অধিকার বুঝে নিতে ‘ভোটের ব্যালটে’ প্রাধান্য পাবে ভোটারদের প্রধান ৫ ইস্যু।অর্থনৈতিক স্থবিরতা,স্বাস্থ্য,আবাসন সংকট,জীবনযাত্রার ব্যয়,অভিবাসন ও বৈদেশিক নীতির মতো বিষয়গুলোকে মাথায় রেখেই প্রার্থী নির্বাচনে মাঠে নেমেছেন ভোটাররা। আলজাজিরা।

এ নির্বাচন ঘিরে ভোটের প্রচারে রয়েছে ৯৫টি দলের চার হাজারের বেশি প্রার্থী।এর মধ্যে স্বতন্ত্র ১১ জনসহ মোট ৩৪ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী হয়েছেন।নির্বাচনি ইশতেহারে নানা প্রতিশ্রুতি দেখা গিয়েছে প্রার্থীদের মধ্যে।এ নিয়ে জনমত জরিপ সংস্থা ‘ইউগভ’ যুক্তরাজ্যের ভোটের গুরত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে একটি সাপ্তাহিক জরিপ করেছে।সেখানে দেখা গেছে,৫২ শতাংশ ভোটার অর্থনীতিকে গুরত্ব দিয়েছেন। এরপর স্বাস্থ্যে ৫০ শতাংশ,অভিবাসন ও আশ্রয়ে ৪০ শতাংশ, আবাসনে ২৪ শতাংশ, পরিবেশে ২০ শতাংশ,অপরাধে ১৮ শতাংশ,প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তায় ১৫ শতাংশ,শিক্ষায় ১৪ শতাংশ,ব্রেক্সিটে ১৩ শতাংশ এবং কর ইস্যুতে ১৩ শতাংশ ভোটার গুরত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন।

অর্থনীতি: ইনস্টিটিউট ফর ফিসক্যাল স্টাডিজের (আইএফএস) হিসাবে,গত দেড় দশকে যুক্তরাজ্যে আয় বেড়েছে সবচেয়ে ধীরগতিতে।প্রতিষ্ঠানটির সহযোগী পরিচালক টম ওয়াটার্স গত মে মাসের শেষের দিকে বলেন, ‘এটি ধনী-দরিদ্র,বয়স্ক-তরুণ সবার জন্যই একটি ধীরগতির বৃদ্ধি।

এর মানে আয়বৈষম্য স্থিতিশীল থাকার পরও প্রকৃত দারিদ্র্য হ্রাসের গতি অনেক কম।’সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি এবং বেতন না বাড়ায় ব্রিটেনের জনগণ তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় সংকুলানে হিমশিম খাচ্ছে। অর্থনীতিকে ঠিকঠাক করতে তাই ভিন্ন ভিন্ন পথ বাতলে দিয়ে ভোটের প্রচারে রয়েছে প্রধান দুই দল কনজারভেটিভ ও লেবার পার্টি। নির্বাচনি ইশতেহারে লেবার নেতা কিয়ার স্টারমার দলীয় ইশতেহারে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস),আবাসন,জ্বালানি ও অন্যান্য প্রধান বিষয় নিয়ে পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন।এসব খাতে বিনিয়োগের জন্য তার দল ৭৪০ কোটি পাউন্ড কর বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অন্যদিকে নাগরিকদের বেতনের ওপর বাধ্যতামূলক ন্যাশনাল ইনস্যুরেন্সের কর হার ২ শতাংশ পয়েন্ট কমানোসহ বছরে ১ হাজার ৭০০ কোটি পাউন্ড কর কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি।

আবাসন সমস্যা: যুক্তরাজ্যে আবাসন সংকটের পেছনে কারণ হলো সম্পত্তির দাম ও ভাড়া বৃদ্ধি এবং নতুন ভবন নির্মাণের খরচ বৃদ্ধি। স্থানীয় সরকার সমিতির হিসাবে, ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত ১০ বছরে সামাজিক আবাসনের ঘাটতির কারণে অস্থায়ী বাসস্থানের সংখ্যা বেড়েছে ৮৯ শতাংশ। ২০১০ সালে কনজারভেটিভ ও লিবারেল ডেমোক্র্যাট পার্টি জোট করে ক্ষমতায় আসে। তখন সরকারের বাজেট ঘাটতি কমিয়ে নাগরিকদের ওপর চাপ কমানোর চেষ্টা করা হয়। সেজন্য সরকার যে কঠোর পদক্ষেপ নেয়, তার চাপ তীব্র হয় স্থানীয় কাউন্সিলগুলোর ওপর।

স্বাস্থ্য: জনমত জরিপ সংস্থা ‘ইউগভ’র জরিপে সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ যে বিষয়গুলো যুক্তরাজ্যের এবারের ভোটে প্রভাব ফেলতে পারে,তার মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে স্বাস্থ্য খাত।তাদের একটি জরিপের ৩৪ শতাংশ উত্তরদাতা ‘জীবনযাত্রার ব্যয়ের’ পরই স্বাস্থ্য খাতকে গুরুত্ব দিয়েছেন। চলতি বছর এপ্রিলে এনএইচএসে চিকিৎসার জন্য অপেক্ষমাণ মানুষের সংখ্যা ছিল ৭৬ লাখ,যা গত বছরের সেপ্টেম্বরের রেকর্ড ৭৮ লাখ থেকে সামান্য কম।দুর্ঘটনা ও জরুরি বিভাগে চিকিৎসকের সাক্ষাৎ পেতে ৪ ঘণ্টার বেশি সময় হাসপাতালে অপেক্ষা করা মানুষের অনুপাত ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির ১৪ বছরে ক্রমাগতভাবে বেড়েছে।এটি জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা পরিস্থিতি যাচাইয়ের একটি গুরত্বপূর্ণ সূচক।

অভিবাসন: স্কাই নিউজের জন্য পরিচালিত ‘ইউগভ’র একটি জরিপে দেখা গেছে, ব্রিটেনের ৪৩ শতাংশ মানুষ মনে করেন, অভিবাসনের নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে।আর ইতিবাচক প্রভাবের পক্ষে সায় দিয়েছে ৩৫ শতাংশ মানুষ।অভিবাসনের জন্য যুক্তরাজ্যে মাঝেমধ্যে বা অনিয়মিতভাবে যারা আসেন, তাদের ঠেকাতে জোর দিয়ে আসছে কনজারভেটিভরা।যেমন: ছোট ছোট নৌকায় ফ্রান্স থেকে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাজ্যে ঢোকে অনেক মানুষ।কনজারভেটিভ পার্টি এমন অভিবাসন বন্ধের কথা বলে আসছে।অবৈধ বা কাগজপত্রহীন অভিবাসনপ্রত্যাশীদের যুক্তরাজ্য থেকে রুয়ান্ডার পাঠানোর একটি ‘বিতর্কিত’ পরিকল্পনা নিয়েছে ঋষি সুনাকের সরকার। ওই উদ্যোগ এর আগে আদালত কয়েকবার আটকে দিয়ে বলেছিলেন,এটা অনৈতিক।

‘ডিভলভড’ ও ‘রিজার্ভড’ ইস্যু: যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে প্রভাব ফেলা এসব বিষয় ছাড়াও কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলোকে বলা হয় ‘ডিভলভড ইস্যু’।স্কটল্যান্ড, ওয়েলস, নর্দান আয়ারল্যান্ডের জন্য স্থানীয় এসব ইস্যু খুবই গুরত্বপূর্ণ। ডিভলভড ইস্যুগুলোর মধ্যে রয়েছে শিক্ষা, আবাসন, বিচার ও পুলিশিং,অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং পরিবেশ।এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার।অপরদিকে রিজার্ভড ইস্যুগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রতিরক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তা, বৈদেশিক বিষয়, অভিবাসন,বাণিজ্য ও মুদ্রা।এসব বিষয় কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টের অধীনে নির্ধারিত হয় এবং সে অনুযায়ী সরকার পরিচালিত হয়।

আরও খবর

Sponsered content