ব্যবসা ও বাণিজ্য সংবাদ

মুরগির দাম বৃদ্ধিতে দোকানে বিক্রি কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে

  প্রতিনিধি ১২ মার্চ ২০২৩ , ১:২৮:২৭ প্রিন্ট সংস্করণ

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি।।মুরগির দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় দোকানে বিক্রি নেমে গেছে অর্ধেকে। আর হোটেলে বিক্রি কমে গেছে প্রায় ৭০ ভাগ।মুরগির বাজার এবং হোটেলে খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য জানা গেছে।

কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পুরানথানা বাজারের ‘ভাই ভাই ব্রয়লার’ নামে দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়,এখন ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা কেজি।যা কয়েকদিন আগেও বিক্রি হয়েছে ১৭০ টাকায়।সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা কেজি।যা কয়েকদিন আগেও বিক্রি হয়েছে ২৭০ টাকায়। লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকা কেজি।যা কয়েকদিন আগেও বিক্রি হয়েছে ২৫০ টাকা কেজি।

বিভিন্ন দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়,দাম অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন বিক্রির পরিমাণ অর্ধেকে নেমে গেছে।সেই কারণে প্রতিটি দোকানে এখন মুরগির মজুদও কমে গেছে। আর লেয়ার মুরগির দাম মূল্য তালিকার বোর্ডে লেখা থাকলেও বিক্রি কমে গেছে বলে দোকানে লেয়ার মুরগির কোনো অস্তিত্ব নেই।

এদিকে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সকল প্রকার মুরগির দামই বেড়ে গেছে বলে জুনায়েদ নামে এক দোকানি জানিয়েছেন।মুরগি ব্যবসায়ীরা জানান,গরু আর খাসির মাংসের দামও অনেক বেড়েছে।মুরগির দামটা গরু আর খাসির মাংসের দামের তুলনায় অনেক কম ছিল বলে ভোক্তারা মুরগি বেশি কিনতেন।এখন দাম বেড়ে যাওয়ায় মুরগি কেনাও ছেড়ে দিচ্ছেন নিম্মবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা।

সদর উপজেলার যশোদল কাটাখালী গ্রামের কোয়েল খামারি স্বপন মিয়া জানান,তিনি করোনার আগে কোয়েলের পাশাপাশি ৩ হাজার ব্রয়লার মুরগি নিয়ে খামার করেছিলেন।কারোনার সময় একদিকে মুরগির বাজার মন্দা,অন্যদিকে খাবারের মূল্যবৃদ্ধি।এক সময় খাদ্যের বস্তা দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হলেও করোনার পর বেড়ে গিয়ে হয়ে যায় আড়াই হাজার টাকা।সেই বস্তা এখন হয়ে গেছে সাড়ে ৩ হাজার টাকা।এসব কারণে স্বপনের মতো আরও অনেক খামারির খামার বন্ধ হয়ে গেছে।তবে অনেক খামারি নিজের খামার বন্ধ করে বিভিন্ন পোল্ট্রি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন বলে স্বপন জানিয়েছেন। কোম্পানিগুলো বাচ্চা,খাবার এবং ওষুধ সরবরাহ করে।এরপর সময়মতো কোম্পানিগুলোই সব মুরগি নিয়ে যায়। খামারিকে কিছু লাভ দেয়।

এদিকে বাজারে মুরগির দাম বেড়ে যাওয়ায় হোটেলেও এর প্রভাব পড়েছে।হোটেলে এখন মুরগি বিক্রি কমে গেছে।সকল প্রকার মাংসের বিক্রিই কমে গেছে বলে হোটেল মালিকরা জানিয়েছেন।শহরের স্টেশন রোডের ‘খাওয়াদাওয়া’ হোটেলের মালিক মো. দুলাল মিয়া জানান,সব খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন হোটেলে বিক্রিও কমে গেছে।

দুলাল মিয়া বলেন,ব্যবসা করাটাই এখন কঠিন হয়ে গেছে। গ্যাস বিল,বিদ্যুৎ বিল,কর্মচারির বেতন,ঘর ভাড়াসহ সব খরচ মিটিয়ে লাভের মুখ দেখা কঠিন হয়ে গেছে।ব্রয়লার মুরগির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন হোটেলে মুরগি বিক্রি ৭০ ভাগ কমে গেছে বলে দুলাল মিয়া জানান।তিনি বলেন, কেবল মুরগি নয়,গরু আর খাসির মাংসেরও অবস্থাও একই রকম।অন্যান্য হোটেলেরও একই অবস্থা।

তবে বাজারে এখনও মাছের দাম মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে। শহরের জামিয়া রোডের খায়রুজ্জামান রবিন বলেন,অনেকেই এখন মাংস কেনা কমিয়ে দিয়েছেন।অনেকে আবার মাংস কেনা বাদই দিয়েছেন।তবে মাছের বাজার এখনও আগের মতো আছে বলে মানুষ কিনতে পারছে।

শহরের নগুয়া এলাকার বীমাকর্মী অনুপমা ভৌমিক বলেন, কেবল মাংস কেন,সব পণ্যের দামই এখন যেভাবে বেড়েছে, সংসারের সব দিক সামলানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

জেলা প্রাণীসম্পদক কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম জানান, মুরগির বাচ্চা আর খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মুরগির দাম বেড়ে গেছে।অনেক খামার বন্ধও হয়ে গেছে।দেড় হাজার টাকার খাদ্যের বস্তা এখন ৩ হাজার টাকা।২৫-৩০ টাকা দামের প্রতিটি বাচ্চার দামও হয়ে গেছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। গরু আর খাসির মাংসের পাশাপাশি ডিম আর দুধের দামও বেড়ে গেছে।এর পেছনে একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে। এর জন্য নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে ভূমিকা নিতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

আরও খবর

Sponsered content