রাজনীতি

মানিকগঞ্জে ফুল দেওয়ার সময় নাম ঘোষণা নিয়ে শ্রমিক লীগের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ

  প্রতিনিধি ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ৪:১৯:৪৮ প্রিন্ট সংস্করণ

মানিকগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি।।ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে মানিকগঞ্জে ফুল দেওয়ার সময় নাম ঘোষণা নিয়ে শ্রমিক লীগের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন ৬ জন। মঙ্গলবার শ্রমিক লীগের বিবাদমান দুপক্ষের মধ্যে এ সংঘর্ষ ঘটে।

সংঘর্ষের ঘটনাটি পরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। এতে সরকার দলীয় আওয়ামী লীগের ওই তিন অঙ্গসংগঠনের কমপক্ষে ৬ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।

আহতদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় জানা গেছে।তারা হলেন— সদর উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল আহসান,জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা সানজিদ কাজল ও সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা জসিম উদ্দিন।

পুলিশ, দলীয় এবং প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, জেলা শ্রমিক লীগের আধিপত্য বিস্তার ও নেতৃত্ব নিয়ে বাবুল সরকার ও আবদুল জলিলের অনুসারীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল।

মঙ্গলবার সকাল নয়টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী ভাষাশহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে জেলা শহরে সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে যান। জেলা আওয়ামী লীগসহ অঙ্গসংগঠনগুলো আলাদা পুষ্পস্তবক নিয়ে নেতা-কর্মীরা শহিদ মিনারের পাদদেশে সমবেত হন।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মহিউদ্দীন ও সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালামের নেতৃত্বে দলের পক্ষ থেকে ফুল দেওয়া হয়। এর পর জেলা যুবলীগ,ছাত্রলীগ,মহিলা আওয়ামী লীগ ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানায়।এ সময় শ্রমিক লীগের দুপক্ষের নেতা-কর্মীরা আলাদা ব্যানারে ফুল দেওয়ার জন্য শহিদ মিনারের সামনে অবস্থান নেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুলতানুল আজম খান আপেল জেলা শ্রমিক লীগের নেতা আবদুল জলিলের নাম ঘোষণা করার পর জেলা শ্রমিক লীগের নেতা বাবুল সরকারের অনুসারী ও নেতা-কর্মীরা প্রতিবাদ করেন।এরপর শ্রমিক লীগের দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং একপর্যায়ে শ্রমিক লীগের দুই পক্ষসহ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ঘ ছড়িয়ে পড়ে।এ সময় বাঁশের লাঠি নিয়ে সরকারদলীয় সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া শুরু করেন।

জেলা যুবলীগের নেতাকর্মীরা জলিল বাবুলের পক্ষ হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।পরে দলের সিনিয়র নেতা এবং পুলিশের হস্তক্ষেপে প্রায় আধাঘণ্টা পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে।

সংঘর্ষের ঘটনায় শহিদ মিনারে ফুল দিতে আসা উপস্থিত সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা আতঙ্কিত হয়ে শহিদ মিনার এলাকা ত্যাগ করেন।

এ বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক খান বলেন,শহিদ মিনারে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে শ্রমিক লীগের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

এ সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক রাজা বলেন, ‘ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করি।’

জেলা শ্রমিকলীগের নেতা বাবুল সরকার বলেন, ‘জেলা শ্রমিক লীগের আমি বৈধ সভাপতি।কেন্দ্র থেকে আমাকে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।এরপরও ফুল দেওয়ার সময় আমার নাম ঘোষণা না করে আব্দুল জলিলের নাম ঘোষণা করে।’

তিনি দাবি করেন,জলিল অনুসারীরা আমার নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করে।’

এ দিকে জেলা শ্রমিক লীগের নেতা আব্দুল জলিল বলেন, ‘জেলা শ্রমিক লীগের আমিই সভাপতি।কেন্দ্র থেকে আমাকে চিঠিপত্র দেয়।কিন্তু বাবুল তা মেনে না নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটনায়।’

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দসু সালাম ঘটনার পরপরই মাইক দিকে সবাই শান্ত থাকার অনুরোধ জানান।তিনি মাইকে এঘটনার জন্য দু:খ প্রকাশও করেন।তিনি এ ঘটনা মোটেই কাম্য নয় বলেও জানান।

জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সুলতানুল আজম খান আপেল বলেন,দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের পরামর্শেই শ্রমিক লীগ নেতা জলিলের নাম ঘোষণা করা হয়। তবে মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এ ধরণের ঘটনা দুঃখজনক।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মহীউদ্দীন বলেন,আমি ফুল দেওয়া সমাপ্তি করে সভাপতি বক্তব্য দিয়ে চলে আসি।শহীদ মিনারে ফুল দিতে গিয়ে এ রকম ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হতে পারেন না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রাখেন না।’

আরও খবর

Sponsered content