জাতীয়

মিরপুরে ব্যাটারিচালিত রিকশা দেখা যায়নি

  প্রতিনিধি ২০ মে ২০২৪ , ৫:২২:৫১ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।রাজধানীর মিরপুরের কোনও সড়কে সোমবার (২০ মে) সকাল থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা দেখা যায়নি।পায়ে হেঁটেই গন্তব্যে যাচ্ছিলেন সাধারণ মানুষ। পায়েচালিত রিকশা নামলেও সংখ্যায় কম।বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি এলাকায় যাত্রী সেবা দিতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকরা নামেন।তারা যাত্রী প্রতি ২০ টাকা করে নিচ্ছেন। এছাড়া এলাকার ভেতর মোটরসাইকেলেও যাত্রী নেওয়া হচ্ছে।

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধের প্রতিবাদে রবিবার (১৯ মে) রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় লাঠিসোঁটা নিয়ে বিক্ষোভ করেন চালকরা।মিরপুর কালশীতে পুলিশ বক্সে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে।এতে পুলিশও চড়া হয় এ সব বিক্ষোভকারীদের ওপর। ১৯ মে দিবাগত রাতে বিভিন্ন রিকশার গ্যারেজে পুলিশ অভিযান চালিয়ে অটোর ব্যাটারি খুলে নেওয়ার অভিযোগ করেন রিকশা মালিকরা।এ কারণে সোমবার নানা শঙ্কায় রাস্তায় অটো নামাননি মালিকরা। এ দিকে রাজধানীর অন্যান্য এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকরা বিক্ষোভ করলেও মিরপুরে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মিরপুরে কোনও বিক্ষোভকারী দেখা যায়নি।

বিভিন্ন গ্যারেজে ঘুরে দেখা যায়,সাড়ি সাড়ি অটোরিকশা বসিয়ে রাখা হয়েছে।পুলিশের অভিযানের ভয়ে রিকশাগুলো থেকে ব্যাটারি খুলে রাখা হচ্ছে।

রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধ হওয়ায় স্বস্তির কথা জানালেও শারীরিক পরিশ্রম ও খরচ বেড়েছে বলে জানান সাধারণ যাত্রীরা।তারা বলেন,সড়কগুলো ফাঁকা হয়েছে।রিকশা চালকদের ডাকাডাকি শুনতে হচ্ছে না।তবে পায়ের রিকশা ভাড়া বেশি চাওয়ায় অনেকটা পথ সামনে হেঁটে গিয়ে রিকশা নিতে হচ্ছে।

মিরপুর ১১ এভিনিউ ফাইভের যাত্রী কুলসুম বলেন,আগে বাসার সামনে থেকে অটো নিলে ৩০ টাকায় মিরপুর ১০ যাওয়া যেতো।এখন সেই ভাড়া ৫০ টাকা।তাই ২ মিনিট হেঁটে এসে এখান (প্যারিস রোড মোড়) থেকে রিকশা নিচ্ছি।সেই ৩০ টাকায় লাগছে।২০ টাকা বাঁচাতে একটু হাঁটতে হলো। তবে রাস্তা ফাঁকা ছিল হাঁটতে হলেও সমস্যা হয়নি।আগে অটোর জন্য ভয়ে হাঁটাই যেত না।তাই বাধ্য হয়েই বাসার সামনে থেকেই অটো নিতে হতো।আমরাও চাই না,আমার এলাকার মাথায় অটো রিকশার জটলা থাকুক।’

কালশীর মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা আরেক যাত্রী জুয়েল বলেন, ‘অটোরিকশা না থাকায় এক হিসেবে ভালোই হয়েছে।এই জায়গাটা এত অটো থাকতো যে বাসগুলাও পাশে ভিড়াতে পারতো না।বাস থেকে নামলেই হঠাৎ সামনে দিয়ে একটা অটো সাঁই করে চলে যেত।ভয়াবহ অবস্থা ছিল।আর এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকবেন এই রিকশা ডাকবে,ওই রিকশা ডাকবে।বিরক্তিকর ছিল।’

অটোরিকশা না থাকায় ভাড়া বেড়ে গেছে জানিয়ে মিরপুর ১০ নম্বরের যাত্রী ফয়সাল বলেন,‘আমরাও চাই রাস্তায় শৃঙ্খলা আসুক।কিন্তু সবাইকে অসুবিধা ফেলে না।অটোরিকশা বন্ধ থাকলে রিকশাচালকদের কষ্ট।এখন পায়ের রিকশাও পাওয়া যায় না।রিকশার চাইতে যাত্রী বেশি।আবার ভাড়াও চায় অনেক।একটা সমাধানে আসা উচিত।’

এদিকে গ্যারেজগুলোতে ঘুরে মালিকদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন,সরকারর এইভাবে হঠাৎ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধ করে দেওয়া উচিত হয়নি।আমাদের সময় দিতো।আমরা আমাদের রিকশাগুলোর একটা ব্যবস্থা করতাম।

মিরপুর বাউনিবাধের একটি রিকশা গ্যারেজের মালিক আফজাল বলেন,সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর আমাদের জোর নাই।কিন্তু সময় দিতো।একটা ব্যাটারির এমনিতেই মেয়াদ এক বছর।এরপর ওই রিকশায় নতুন খরচ।এখন হঠাৎ করে বন্ধ করে দেওয়ায় এই রিকশাগুলো নিয়ে কী করবো।অন্তত ছয় মাস সময় দিলে কিছু টাকা উঠিয়ে রিকশাগুলা বন্ধ করে দেওয়া যেতো।’

পুরোপুরি অটোরিকশা বন্ধ না করে সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হলে ভালো হয় জানিয়ে আরেক রিকশা মালিক দেলোয়ার বলেন, ‘রিকশার ওপর নির্ভর করে অনেক মানুষের পেট চলে। আবার যাত্রীরাও কম খরচে রিকশা সেবা পেতো।কোনও কথা নাই এভাবে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করে দিয়ে সরকার কাকে বিপদে ফেলতে চাইছে,কার লাভ করতে চাইছে?’

শনিবার (১৮ মে) এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) থেকে জানানো হয়,ঢাকা মহানগরীতে আর ব্যাটারি বা মোটরচালিত রিকশা বা ভ্যান চলতে পারবে না।একইসঙ্গে রঙচটা,লক্কড়-ঝক্কড় মোটরযান চলাচলও বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়।

এর আগে বুধবার (১৫ মে) সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।ওই দিন রাজধানীর বনানীতে বিআরটিএ কার্যালয়ে এক সভায় সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত কোনও গাড়ি যেন ঢাকা সিটিতে না চলে। আমরা ২২টি মহাসড়কে নিষিদ্ধ করেছি,যেগুলো করা হয়েছে সেগুলো কার্যকর করেন।এই ২২টি মহাসড়ক এবং ঢাকা সিটির বাস্তবতা ভিন্ন।সিটিতে যেন এই ব্যাটারিচালিত গাড়ি না চলে। এ বিষয়ে শুধু নিষেধাজ্ঞা আরোপ নয়,এগুলো যেন চলতে না পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।’

সর্বশেষ সোমবার (২০ মে) দুপুরে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ওলামা লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচলে অনুমতি দিতে বলেছেন। তবে দেশের ২২টি মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ থাকবে বলে জানান তিনি।

আরও খবর

Sponsered content