অপরাধ-আইন-আদালত

বিএনপি মামলা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে

  প্রতিনিধি ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ , ৩:৫৩:৩৩ প্রিন্ট সংস্করণ

বরিশাল।।বরিশাল বিভাগে ২৮ অক্টোবরের পর থেকে দায়ের হওয়া বিভিন্ন মামলায় বিএনপি অধিকাংশ নেতা–কর্মী মুক্তি পেয়েছেন।তবে এ জন্য তাঁদের নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত দৌড়ঝাঁপ করতে হয়েছে।এই সময়ে দলের আশানুরূপ সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন অনেক নেতা–কর্মী।জামিন পেলেও এসব মামলায় আদালতে হাজিরা দেওয়াসহ নানা কারণে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা।

জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের পরে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৩৯টি মামলা হয়েছে।সব মামলাই ছিল নাশকতার অভিযোগে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার হন অন্তত ৪৫৪ জন দলীয় নেতা-কর্মী।তবে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর গ্রেপ্তার হওয়া নেতা-কর্মীরা একে একে নিম্ন আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হচ্ছেন। আবার এসব মামলায় যাঁরা আত্মগোপনে ছিলেন,তাঁদের বেশির ভাগই উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়ে এলাকায় ফিরছেন।

বিএনপি নেতাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী,বিভাগে ৩৯টি মামলার মধ্যে বরিশাল জেলায় দায়ের হয়েছে সর্বোচ্চ ১৫টি। এ ছাড়া পটুয়াখালী জেলায় আটটি,বরগুনায় সাতটি, ভোলায় পাঁচটি এবং পিরোজপুরে চারটি মামলা হয়।এর মধ্যে পিরোজপুরে চারটি মামলায় সর্বাধিক ১৮০ জন নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হন।তবে ঝালকাঠিতে ২৮ অক্টোবরের পর নতুন করে কোনো মামলা না হলেও ২০২২ সালের পুরনো ৬টি মামলায় ৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবি নিয়ে গত বছর আন্দোলনে নেমেছিল বিএনপি। ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের পর দলের নেতা-কর্মীদের অনেকে নতুন ও পুরোনো মামলায় গ্রেপ্তার হন, কেউ কেউ আত্মগোপনে চলে যান।তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বলছেন,মামলায় হাজিরা দেওয়া,কারাগার ও আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় দলীয়ভাবেও তেমন কোনো সহায়তা পাননি তাঁরা। নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত ছুটতে দলের পক্ষ থেকে সহায়তা মিলেছে খুব কমই।উপরন্তু আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।পরিবার-পরিজন এবং জীবিকা নিয়েও উৎকণ্ঠায় তাঁদের দিন কাটছে।সংসদ নির্বাচন হয়ে গেলেও স্থানীয় নেতা-কর্মীরা এখনো জানেন না,দলের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি কেমন হবে।কীভাবে তাঁরা এসব মামলার ঘানি টানবেন।

অবশ্য বিএনপির বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান বলেন, ‘দলের পক্ষ থেকে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি স্থানীয় আইনজীবী প্যানেলের মাধ্যমে গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের আইনি সহায়তা দিতে। কারাগারে থাকা নেতা-কর্মীদেরও সাধ্যমতো খোঁজখবর নিয়ে সহায়তার চেষ্টা করা হয়েছে।’

বরগুনায় ২৮ অক্টোবরের পর ৭টি নতুন মামলায় আসামির সংখ্যা ৩৯৪ জন।তাঁদের মধ্যে অন্তত ১০০ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হন।উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়েছেন ১২৫ জন। একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ৯৬ দিন কারাভোগের পর গত ৪ ফ্রেব্রুয়ারি জামিনে মুক্ত হয়েছেন সদর উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব আবদুল হক।গত ৩১ অক্টোবর রাতে একটি জানাজায় অংশ নিতে গিয়ে তিনি ডিবির হাতে গ্রেপ্তার হন। তিনি নতুন দুটি এবং পুরনো চারটিসহ ছয়টি মামলার আসামি। প্রতি মাসে কমপক্ষে চার থেকে পাঁচদিন তাঁকে আদালতে হাজিরা দিতে যেতে হয়।

আবদুল হক বলেন, ‘কারাগারে থাকা অবস্থায় কাছের মানুষরা দেখাসাক্ষাৎ করেছেন।তবে দলের শীর্ষ নেতাদের খুব একটা সহায়তা মেলেনি।এটা খুব পীড়া দেয়।পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ উৎকণ্ঠায় আছি।’

এবার ভোলা জেলার সদর থানায় চারটি এবং চরফ্যাশন থানায় একটিসহ বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা হয়।পাঁচ মামলার এজাহারে ১৫০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছিল।অজ্ঞাত আসামি ছিল কয়েক শ।আসামিদের মধ্যে ৩০ জন গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মোহাম্মদ রাইসুল আলম বলেন,পাঁচ মামলায় ১৫০ জনের নাম উল্লেখ থাকলেও পরে যাঁদেরই আটক করা হয়েছে, তাঁদের এসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। ৩০ জন নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছিলেন,যাঁরা ইতিমধ্যে জামিনে বের হয়েছেন। নিজে দুটি মামলার ১ নম্বর আসামি ছিলেন উল্লেখ করে রাইসুল আলম বলেন,নিজেরাই মামলার খরচ সম্মিলিতভাবে মেটাচ্ছেন।যাঁদের সামর্থ্য আছে,তাঁরা দিচ্ছেন, যাঁদের সামর্থ্য নেই, তাঁদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে না। দায়ের হওয়া এসব মামলায় আত্মগোপনের থেকে যাঁরা গ্রেপ্তার এড়াতে পেরেছেন, তাঁরাও ৭ জানুয়ারির পর উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়েছেন।

বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান সফিকুজ্জামান মাহফুজ সম্প্রতি উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়েছেন।তিনি বলেন,দলের অনেক নেতা-কর্মী আগাম জামিন নিয়ে এলাকায় ফিরেছেন। তবে উচ্চ আদালতে জামিন করাতে হয়েছে নিজেদের অর্থে।

দলের নেতা-কর্মীরা বলছেন,স্থানীয়ভাবে আইনজীবীরা মামলার হাজিরা দিতে গেলে ফি নেন না। ষকিন্তু এরপরেও আদালতে হাজিরা দিতে যাতায়াতসহ আনুষাঙ্গিক অনেক খরচ হয়। এসব নিজেদের পকেট থেকে দিতে হয়।আবার কারাগারে থাকা অবস্থায় তাঁদের ও পরিবারের খোঁজখবরও কেউ নেয়নি।

২০১৩ সাল থেকেই দেশব্যাপী জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম নেতা-কর্মীদের সহায়তা দিয়ে আসছে বলে জানালেন বরিশাল জেলা আইনজীবী ফোরামের সভাপতি মহসিন মন্টু। তিনি বলেন,দলের ওয়ার্ড থেকে জেলা কমিটি আছে।যখন কেউ গ্রেপ্তার হন,স্বাভাবিকভাবেই তাঁর জেলা ও উপজেলা কমিটির নেতারা সেটা জানেন।উপজেলা থেকে জেলাকে বা কেন্দ্রে জানায়।স্থানীয় পর্যায়ে গ্রেপ্তার হলে স্থানীয় আইনজীবী ফোরাম তাঁর দায়িত্ব নেয়।তবে আদালতে কোর্ট ফি, ওকালতনামা বা অন্য খরচ কোনো আইনজীবীকে দেওয়া হয়নি।এটা তাঁরা নিজেরাই খরচ করেন।

বিএনপি করতে গিয়ে আইনি জটিলতায় পড়লে সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে যে কিছুটা ধোঁয়াশা তৈরি হয় না,তা নয়।যেমন দায়িত্বশীল নেতা-কর্মীদের বাইরে কোনো বিএনপি সমর্থক বা সাধারণ ব্যক্তি গ্রেপ্তার হলে সেই তথ্য আমাদের কাছে থাকে না। পরিচয় নিশ্চিত হলেই কেবল তাঁদেরও আইনি সহায়তা দিই।’

বরিশাল নগর বিএনপি আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আফরোজা নাসরিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় হওয়া বরিশালে ৩৭টি এবং ঢাকায় ৭টি মামলা রয়েছে।এ কারণে প্রায়ই আদালতে হাজিরা দিতে হয় তাঁকে।কখনো কখনো এক দিনে দু-তিনটিরও হাজিরাও দিতে হয়।তখন নানাভাবে সময় প্রার্থনা করতে হয়। আফরোজা নাসরিন বলেন, ‘আদালত আর জেলখানা আমার বাড়ি হয়ে গেছে।স্বামী, সংসার পরিবার—সবকিছু এলোমেলো, জানি না কী হবে।’ আফরোজা নাসরিন মনে করেন,দলীয় নেতা-কর্মীদের মামলার ব্যাপারে একটি পূর্ণাঙ্গ তথ্যভান্ডার স্থানীয়ভাবে দলের নেতা-কর্মীদের কাছে থাকা উচিত। সে অনুযায়ী সহায়তা প্রদান করা ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

আরও খবর

Sponsered content