জাতীয়

বিএনপির উদ্দেশ্য নির্বাচন বা গণতন্ত্র নয়-প্রধানমন্ত্রী,শেখ হাসিনা

  প্রতিনিধি ১৬ আগস্ট ২০২৩ , ৬:০৭:৫২ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।আওয়ামী লীগের সভাপতি,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন-আমেরিকাসহ কয়েকটি দেশ ষড়যন্ত্র করে, তাদের উদ্দেশ্য নির্বাচন বা গণতন্ত্র নয়।উদ্দেশ্য হলো- দেশের উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা।বঙ্গোপসাগরকে ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে আক্রমণ করা- এটাই কারো কারো উদ্দেশ্য।আমাকে সরিয়ে তাদের কিছু পদলেহনকারী গোলামদের ক্ষমতায় বসিয়ে ভারত মহাসাগরের মধ্যে থাকা দেশগুলোতে হামলা ও অশান্তি সৃষ্টি করে ধ্বংস করার উদ্দেশ্য নিয়েই তাদের এত টালবাহানা।

শেখ হাসিনা বলেন,বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা পছন্দ করে না বলেই তারা নির্বাচন নিয়ে খুব বেশি উতলা। আমাদের দেশপ্রেমিক জনগণকে এসব বুঝতে হবে,সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।আমি তো বলব- ভারত মহাসাগরের অন্যান্য দেশগুলো এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন আছে, সেটা আমি বিশ্বাস করি।

বুধবার বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় কোনো খেলা খেলে জনগণের ভাগ্য কেউ যাতে কেড়ে না নিতে পারে সেজন্য দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন,শত ব্যথা-বেদনা মুখ বুঝে সহ্য করে দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি।কতবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি।যতক্ষণ বেঁচে আছি,ততক্ষণ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না।দেশের মানুষের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে ক্ষমতায় থাকার লোভ আমার বাবারও কোনো দিন ছিল না,আমারও নেই।

ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের ভৌগলিক গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন,ভৌগলিক অবস্থানের দিক দিয়ে ভারত মহাসাগর,অপরদিকে প্রশান্ত মহাসাগর- এই ভারত মহাসাগরেই কিন্তু আমাদের ‘বে অব বেঙ্গল’।এর গুরুত্ব অনেক বেশি। প্রাচীনকাল থেকে এই জায়গা দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য চলে। আমাদের ভারত মহাসাগরে যতগুলো দেশ আছে কারো সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্ব নাই,সম্পূর্ণ নিষ্কণ্টক একটা যোগাযোগ পথ।এই জলপথে আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে নির্বিঘ্নে পণ্য পরিবহণ হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন,এটা আমি জানি,আমি বুঝি,আমাকে ক্ষমতা থেকে সরাবে আর তাদের কিছু কেনা গোলাম আছে, পদলেহনকারী আছে তাদেরকে বসিয়ে এই জায়গাটাকে নিয়ে খেলবে।এটাই হচ্ছে তাদের প্রচেষ্টা,সেটা আমি ভালোভাবে বুঝতে পারি।আমাদের কিছু আঁতেল আছে,জানি না তারা এসব চিন্তা করে কিনা।সেগুলো না করেই তারা ওই এদের সঙ্গে সুর মেলায়। দুটো পয়সার লোভে তারা নানাভাবে এই কাজগুলো করে বেড়ায়।

চক্রান্তের বিষয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন,এই বিষয়ে আমাদেরকে যেমন সজাগ থাকতে হবে,তাছাড়া অন্যান্য দেশ, আমি তো বলব ভারত মহাসাগরের অন্যান্য দেশগুলো এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন আছে,সেটা আমি বিশ্বাস করি। দেশবাসীকেও বলব,যারা দেশপ্রেমিক তাদের সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের এতটুকু ক্ষতি করে কোনো দিন ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা করি না।

দেশের স্বার্থ বেঁচে ক্ষমতায় আসতে হবে,এত ক্ষমতালোভী আমি না: বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে তৎপর দেশগুলোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,এদের উদ্দেশ্য গণতন্ত্র না,এরা একটা জিনিসই করতে চায়; আজকে যে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভিত্তিটা আমরা মজবুত করেছি, জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি,বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের পথে আজকে দারিদ্র্যের হার আমরা ৪১ থেকে ১৮ ভাগে নামিয়ে এনেছি।হতদরিদ্র যেটা ২৫ ভাগ ছিল সেটাকে আমরা ৫ দশমিক ৭ ভাগে নামিয়ে এনেছি,বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে এরা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চায়। আর আগেও গ্যাস বিক্রির কথা আসছিল,আমি বলেছিলাম- দেশের স্বার্থ বেঁচে ক্ষমতায় আসতে হবে,এত ক্ষমতালোভী আমি না।আমার বাবাও এমন ছিলেন না।

পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন,এই এলাকাটা নিয়ে নানা ধরনের খেলার একটা চক্রান্ত।পার্বত্য চট্টগ্রামে ২০ বছর ধরে যেখানে সংঘাত ছিল আমি সরকারে আসার পর সেখানে শান্তি ফিরিয়ে আনি। সেখানেও আবার নানা রকম অশান্তি সৃষ্টির প্রচেষ্টা হচ্ছে।

বিএনপিকে সন্ত্রাসী-বোমা হামলাকারীদের দল হিসেবে চিহ্নিত করে দেশবাসীকে সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচন যেন সুষ্ঠুভাবে হতে না পারে সেজন্য তারা চক্রান্তে লিপ্ত।জাতির পিতার হত্যকারী,সন্ত্রাসী,জঙ্গিবাদ সৃষ্টিকারী, বোমা হামলাকারী,গ্রেনেড হামলাকারী ওই বিএনপি,তারা জানে তারা নির্বাচন করে কোনো দিন ক্ষমতায় যেতে পারবে না,জনগণের ভোটও পাবে না।তাই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং ভোট যেন না হয় সেজন্য যত রকমের চক্রান্ত করা এই চক্রান্তে তারা লিপ্ত।

আওয়ামী লীগ সরকার দেশের মানুষের উন্নয়নে কাজ করছে সেটাই অনেকের অন্তর্জ্বালা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লুটেপুটে খেতে পারছে না,ক্ষমতা নাই,জনগণকে শোষণ করতে পারছে না।জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারছে না,তাই ধোঁয়া তুলছে নির্বাচনের।বিএনপির মুখে নির্বাচনের কথা আসে কোত্থেকে? ভোট চুরির অপরাধে ওই খালেদা জিয়া দুই-দুইবার ক্ষমতাচ্যুত,’ ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ইলেকশন আর ২০০৬ সালের সে জানুয়ারি মাসে ইলেকশন। তারপরেও তাদের মুখে আবার গণতন্ত্রের কথা।

বিএনপি সেই ’৭৫ থেকে এই চক্রান্ত করছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন,তারা চক্রান্ত করেছে আর দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলেছে।একমাত্র এ দেশের মানুষ যখন নৌকায় ভোট দিয়েছে স্বাধীনতা পেয়েছে।আজকে তারা পেট ভরে খেতে পারছে,বিদ্যুৎ পাচ্ছে,রাস্তাঘাট পেয়েছে,কর্মসংস্থান পাচ্ছে, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে- জাতির পিতা যা চেয়েছিলেন।

’৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নির্মমভাবে হত্যার প্রসঙ্গ টেনে সেদিন তিনি তার পরিবারকে হারালেও বাঙালি জাতি তার সব সম্ভবনাকে হারিয়ে ফেলে উল্লেখ করে তিনি বলেন,বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছিলাম।কিন্তু একটাই প্রতিজ্ঞা নিয়ে এসেছিলাম লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতাকে ব্যর্থ হতে দেব না।

’৭৫ এর শোক-ব্যথাকে বুকে ধারণ করে দিনরাত কাজ করে গেলেও একের পর আঘাত,প্রাণসংহারের প্রচেষ্টা তাকে মোকাবিলা করতে হয়েছে উল্লেখ করে জাতির পিতার কন্যা বলেন,আমারও সময় সীমিত।কত ভয়ানক মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি।আমার নেতাকর্মীরা জীবন দিয়ে আমাকে ফিরিয়ে এনেছে।বারবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি। আমার দলের নেতাকর্মীরা জীবন দিয়ে আমাকে রক্ষা করেছে। আমার বাবা রক্ত দিয়ে গেছেন এদেশের মানুষের জন্য।রক্ত দিয়ে গেছেন আমার মা, আমার ভাইয়েরা। প্রতি নিয়ত হৃদয়ে রক্তক্ষরণ নিয়ে আমাদের দিনরাত প্রচেষ্টা এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা।

আমাদের মানবাধিকার কোথায় ছিল:-শেখ হাসিনা বলেন, সব থেকে অবাক লাগে-যেসব দেশে এই খুনিদের (বঙ্গবন্ধুর) আশ্রয় দিয়ে রাখা হয়েছে,তারা আমাদের কাছে এসে মানবাধিকারের কথা বলে।তারা নির্বাচনের কথা বলে, স্বচ্ছতার কথা বলে।বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে একেবারে উতলা হয়ে পড়েছে।তাদের কাছে আমার প্রশ্ন- ২০০১ সালের নির্বাচনে এদেশে নির্বিচারে অত্যাচার চলল। কত মানুষকে খুন করেছে। হাত কেটেছে।চোখ তুলে নিয়েছে।ঘরবাড়ি জ্বালিয়েছে। তখন নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়নি কেন? সেই নির্বাচনে তো আমাদের হারার কথা নয়। সে নির্বাচনে তো জোর করে আমাদের হারানো হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।আরও বক্তব্য দেন দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম,অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম,অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গী কবির নানক,যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি,সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য তারানা হালিম,ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।

আলোচনা সভা পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপ-প্রচার সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম।

আরও খবর

Sponsered content