অপরাধ-আইন-আদালত

বিআইডব্লিউটিসির নতুন যে জলযান কেনা ও জনবল নিয়োগ হবে—এসবের ব্যবহার হবে কোথায়?

  প্রতিনিধি ১২ মে ২০২৪ , ৪:৩৩:৩৬ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) কার্যক্রম দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে।আগের তুলনায় জলযান চলাচলের রুট কমে গেছে।ফলে করপোরেশনের অনেক সচল জলযান পড়ে আছে। কাজ না থাকায় জনবলের বড় একটি অংশ অলস বসে আছে।এতে দীর্ঘদিন লাভে থাকা প্রতিষ্ঠানটি লোকসানে পড়েছে।কিন্তু এরই মধ্যে তারা হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন জলযান কিনছে।নিয়োগ দিচ্ছে জনবল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন,বিআইডব্লিউটিসি বিদ্যমান সম্পদেরই যথার্থ ব্যবহার করতে পারছে না।পদ্মা ও যমুনার মতো বড় বড় নদীতে সেতু হয়ে গেছে।এই বাস্তবতা মেনে গবেষণার আলোকে নতুন বিনিয়োগ করতে হবে।

প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও বলছেন,বিআইডব্লিউটিসির অনেক জলযান বসে আছে।জলযানের কর্মীরা বসে আছেন। সেগুলোর সঠিক ব্যবহার না করে নতুন জলযান ও জনবল নিয়োগ দেওয়ার যুক্তি নেই।

তবে নতুন বিনিয়োগ ও জনবল নিয়োগের মধ্য দিয়ে বিআইডব্লিউটিসি ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা প্রকাশ করছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এ কে এম মতিউর রহমান।তিনি আরও বলেন,দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে নতুন নৌরুট চালুসহ করপোরেশনকে লাভজনক করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

সংকুচিত হচ্ছে করপোরেশন

১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠার সময় বিআইডব্লিউটিসির বহরে ৬০৮টি জলযান ছিল।লাভে থাকা প্রতিষ্ঠানটি প্রথম ধাক্কা খায় ১৯৯৮ সালে।ওই বছরের জুনে যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হলে আরিচা–নগরবাড়ি নৌপথে ফেরি চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।বিআইডব্লিউটিসির আয়ের বড় অংশই আসত এই ফেরিপথ থেকে।

মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ফেরিঘাটকেন্দ্রিক রুটটিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল।পদ্মা সেতু ঘিরে প্রথমে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও পরে শিমুলিয়া ঘাট বন্ধ হয়ে যায়।পদ্মা সেতুর প্রভাব পড়ে পাটুরিয়া–দৌলতদিয়া ফেরি রুটেও।এই পথেও আয় এখন অনেক কম।

বিআইডব্লিউটিসির তথ্য অনুযায়ী,১৯৯৮ সালের পরও প্রতিষ্ঠানটির অন্তত ২৪টি ফেরিপথ ছিল।এর মধ্যে মাওয়া-কাঁঠালবাড়ি,শিমুলিয়া-বাংলাবাজার,মুন্সিগঞ্জ-গজারিয়াসহ অন্তত ১৬টি ফেরিপথ বন্ধ হয়ে গেছে।

যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হলে আরিচা–নগরবাড়ি নৌপথে ফেরি চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।বিআইডব্লিউটিসির আয়ের বড় অংশই আসত এই ফেরিপথ থেকে।

পদ্মা সেতু চালুর আগে ঢাকা থেকে বেশ কয়েকটি পথে বিআইডব্লিউটিসির সাতটি যাত্রীবাহী প্যাডেল স্টিমার ও মোটর ভ্যাসেল চলত।পদ্মা সেতু চালুর পর এসব সেবা বন্ধ হয়ে গেছে।এখন এসব জাহাজের কিছু ঘাটে পড়ে আছে,কিছু মেরামত হচ্ছে,কিছু ভাড়া দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া যানজট নিরসনে ঢাকার চারপাশে ২০০৪ সালে ওয়াটার ট্যাক্সি ও ওয়াটার বাসসেবা চালু করেছিল বিআইডব্লিউটিসি।প্রায় দুই বছর ধরে এই সেবা পুরোপুরি বন্ধ।

বিআইডব্লিউটিসির এখন কিছু উপকূলীয় যাত্রীসেবা,কার্গো ও কনটেইনার সেবা চালু আছে।এসব জলযানেরও একটা অংশ ভাড়া দেওয়া হয়েছে।

মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ফেরিঘাটকেন্দ্রিক রুটটিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল।পদ্মা সেতু ঘিরে প্রথমে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও পরে শিমুলিয়া ঘাট বন্ধ হয়ে যায়।পদ্মা সেতুর প্রভাব পড়ে পাটুরিয়া–দৌলতদিয়া ফেরি রুটেও।এই পথেও আয় এখন অনেক কম।

তবু নতুন জলযান কেনা হচ্ছে

বিআইডব্লিউটিসির বহরে এখন ১১১টি ফেরি,যাত্রীবাহী জাহাজ,কার্গো ও কনটেইনার জলযান আছে।এর মধ্যে চলাচল করছে মাত্র ৫২টি। সচল থাকলেও পড়ে আছে অন্তত ছয়টি জলযান।এ ছাড়া ২৪টি বিক্রির চেষ্টা চলছে,৯টি মেরামতে আছে।২০টি জলযান ভাড়া দেওয়া হয়েছে বা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

দেখা যাচ্ছে,বিআইডব্লিউটিসির বেশির ভাগ জলযান যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের বাইরে রয়েছে।তবু বিআইডব্লিউটিসি নতুন জলযান কিনছে।ইতিমধ্যে কেনা ছয়টি নতুন ফেরি ও দুটি তেলবাহী জাহাজ চলতি বছর করপোরেশনের বহরে যুক্ত হয়েছে।

জানা গেছে,বিআইডব্লিউটিসির জন্য ৩৫টি বাণিজ্যিক ও আটটি সহায়ক জলযান সংগ্রহ এবং দুটি নতুন স্লিপওয়ে নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় নতুন ছয়টি ফেরি কেনা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় আরও ছয়টি ইউটিলিটি ফেরি, তিনটি প্যাসেঞ্জার ক্রুজার,তিনটি আধুনিক অভ্যন্তরীণ যাত্রীবাহী জাহাজ,তিনটি আধুনিক উপকূলীয় যাত্রীবাহী জাহাজসহ মোট ২৯ জলযান কেনা হচ্ছে।

এ প্রকল্পে মোট খরচ হচ্ছে ১ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা।এর মধ্যে সরকার ১ হাজার ২৫২ কোটি ও বিআইডব্লিউটিসি ৬৬ কোটি টাকা জোগান দিচ্ছে।

যানজট নিরসনে ঢাকার চারপাশে ২০০৪ সালে ওয়াটার ট্যাক্সি ও ওয়াটার বাসসেবা চালু করেছিল বিআইডব্লিউটিসি।প্রায় দুই বছর ধরে এই সেবা পুরোপুরি বন্ধ।

জনবল বসে আছে,তবু নিয়োগ

পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে রাজধানীর পুরান ঢাকার বাবুবাজার সেতুসংলগ্ন বুড়িগঙ্গা নদীর বাদামতলী ঘাটে পিএস লেপচা,পিএস মাহসুদ ও এমভি মধুমতি নামে তিনটি যাত্রীবাহী জাহাজ অলস বসে আছে।

৫ মে বাদামতলী ঘাটে গিয়ে দেখা যায়,তিনটি জাহাজের কর্মীদের কেউ শুয়ে আছেন,কেউ বসে গল্প করছেন।

এসব জাহাজের কর্মীদের অলস সময় কাটলেও নতুন করে আরও ৮৫ জন গ্রিজার নিয়োগ দিচ্ছে বিআইডব্লিউটিসি। স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে বর্তমানে গ্রিজার আছেন ২৫৮ জন। জাহাজের যন্ত্রচালকের সহকারী হিসেবে কাজ করেন তাঁরা। নতুন নিয়োগের লক্ষ্যে গত শুক্রবার থেকে এই পদে মৌখিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে।

তবে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান মতিউর রহমান বলেন, সরকারের যথাযথ প্রক্রিয়া মেনেই গ্রিজার নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া নতুন জলযান আসছে,সেখানে গ্রিজার লাগবে।

বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নতুন যে জলযান কেনা ও জনবল নিয়োগ হবে—এসবের ব্যবহার হবে কোথায়? এই খরচ থেকে কি আয় উঠে আসবে?নতুন বাস্তবতা বিবেচনা করে বিনিয়োগ করতে হবে। না হলে বড় ধরনের অপচয়ের আশঙ্কা থাকবে।

আরও খবর

Sponsered content