ব্যবসা ও বাণিজ্য সংবাদ

বাজারে কমছে না সবজি,মাছ ও মুরগিসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম

  প্রতিনিধি ৩০ জুন ২০২৩ , ২:৩০:২৩ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।ঈদের ছুটিতে ঢাকা এখন প্রায় ফাঁকা। এছাড়া বৃষ্টির কারণে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না।বাজারেও কমেছে ক্রেতাদের আনাগোনা। তারপরও যেন লাগামহীন নিত্যপণ্যের দাম।

শুক্রবার (৩০ জুন) কেরানীগঞ্জের জিনজিরা,আগানগর, কালীগঞ্জ,পুরান ঢাকার শ্যামবাজার এবং রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচা বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।

চলছে কোরবানির ঈদের ছুটি।বাজারে নেই চিরচেনা কোলাহল। নেই ক্রেতাদের ভিড়। হাতেগোনা চার-পাঁচজন ক্রেতা-বিক্রেতা। তবু বাজারে কমছে না সবজি,মাছ ও মুরগিসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম।

সরেজমিনে কেরানীগঞ্জের জিনজিরা,আগানগর,কালীগঞ্জ বাজার ঘুরে দেখা যায়,লাগামছাড়া কাঁচা মরিচের দাম। বিক্রি হচ্ছে ৬শ থেকে সাড়ে ৬শ টাকা কেজিতে।

বিক্রেতারা জানান,বেশ কয়েকদিন ধরেই ঊর্ধ্বমুখী কাঁচা মরিচের বাজার।একদিকে ঈদ অন্যদিকে বর্ষকালে সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়ছে ক্যাপসিকাম অ্যানাম জাতের এ সবজির।এছাড়া পাইকারিতেই কেজিতে এর দাম পড়ছে সাড়ে পাঁচশ টাকার ওপরে।

আলাউদ্দিন নামে এক বিক্রেতা বলেন,এক সপ্তাহ ধরে কোরবানির পশু আনা-নেয়ার কাজে ট্রাকগুলো ব্যস্ত থাকায় কাঁচা মরিচের সরবরাহ তেমন হয়নি।পাশাপাশি এখন বৃষ্টির সময়।এ সময় এমনিতেই দাম বেড়ে যায় এর।

ক্রেতাদের দাবি,সিন্ডিকেট করে বিক্রেতারা কাঁচা মরিচের দাম বাড়াচ্ছেন।সরকার ভারত থেকে আমদানির অনুমতি দিয়েছে। এরপরও কমছে না দাম।এর পেছনে অসাধু ব্যবসায়ীরা দায়ী।

দীপ বর্মণ নামে এক ক্রেতা জানান,বাজারে কাঁচা মরিচের দাম লাগামছাড়া।কেন এত দাম হবে? ইতোমধ্যে সরকার আমদানির অনুমতি দিয়েছে।ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে।

আমেনা বেগম নামে এক নারী ক্রেতা বলেন,মরিচ ছাড়া তরকারি রান্না করা যায় না। অন্য মসলা না থাকলেও চলে; কিন্তু মরিচ ছাড়া তরকারি স্বাদ হয় না।কিন্তু যেভাবে দাম বাড়ছে; মরিচ কেনাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে।

কাঁচা মরিচের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ২৫ জুন থেকে মরিচ আমদানির অনুমতি দিয়েছে।তবু কমছে না মরিচের দাম।এর মধ্যে দুদিন আমদানির পর ঈদের কারণে আপাতত বন্ধ রয়েছে মরিচ আমদানি কার্যক্রম।

এদিকে,বাজারে অন্যান্য সবজির দামও ঊর্ধ্বমুখী।প্রতিটি সবজি কেজিতে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। বাজারে প্রতিকেজি করলা ১২০ টাকা,পটল ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৪৫ টাকা,টমেটো ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা,বেগুন ৮০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা,আলু ৪০ টাকা ও শসা ৫০ টাকা।

দাম বেড়েছে পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের।বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা,আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়।প্রকারভেদে প্রতি কেজি আদা ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা এবং রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২০০ টাকায়।

পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের বিক্রেতা স্বপন জানান,
আমদানি কমেছে পেঁয়াজের।এতে কিছুটা বেড়েছে দাম। পাইকারিতে প্রতি ৫ কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা। আর প্রতি ৫ কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়।

বিক্রেতারা বলছেন,আমদানি বন্ধ থাকায় পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।ঈদের ছুটির পর আমদানি শুরু হলে নিয়ন্ত্রণে আসবে পেঁয়াজ,আদা ও রসুনের দাম।

গত কয়েকমাস ধরে ওঠানামা করা মুরগির বাজারও ঊর্ধ্বমুখী।প্রতি কেজি ব্রয়লারের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত। বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে।গত সপ্তাহেও যেটি ছিল ১৮০ টাকা কেজি।এ ছাড়া সোনালি মুরগি ২৮০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ টাকা কেজিতে।

বিক্রেতারা জানান,ব্রয়লারের দাম গত সপ্তাহের চেয়ে বেড়েছে। মূলত বাজারে মুরগির সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়তির দিকে।

তবে বাজারে চাহিদা নেই গরু ও খাসির মাংসের। দুই-একটি দোকান খোলা থাকলেও ক্রেতা নেই।বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়।আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়।

মহসিন নামে এক বিক্রেতা বলেন,ঈদের কারণে মাংসের চাহিদা নেই।সবাই বাসাতেই কোরবানির মাংস নিয়ে ব্যস্ত। তবে যারা কোরবানি দিতে পারেননি,তাদের কেউ কেউ আসছেন মাংস কিনতে।

আর বাজারে প্রতি ডজন সাদা ডিম ১৩৫ টাকা ও লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৪ টাকায়।

ঊর্ধ্বমুখী মাছের বাজারও।বাজারে প্রতিকেজি দেশি মাগুর ১ হাজার ৩০০ টাকা,দেশি শিং ১ হাজার ৪০০ টাকা ও শোল ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া প্রতিকেজি টেংরা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা,রুই ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা,কাতল ৩৮০ থেকে ৪৩০ টাকা,পাবদা ৬০০ থেকে ৮০০,চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।আর আকারভেদে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৭০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়।

ক্রেতারা জানান,বাজারে মাছের সরবরাহ নেই।তাই সুযোগ বুঝে বেশি দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা।উজ্জ্বল নামে এ ক্রেতা বলেন,বাজারে ২০০ টাকার নিচে কোনো মাছ নেই।আর নদীর মাছের দাম তো আকাশছোঁয়া। মূলত ঈদের ছুটিকে কাজে লাগিয়ে মুনাফা লুটছেন বিক্রেতারা।

এদিকে,বিক্রেতারা জানালেন,ঈদের কারণে মাছের গাড়ি চলাচল বন্ধ।মাছ আসতে পারছে না।দূর-দূরান্ত থেকে সিএনজি-অটোতে করে মাছ আনতে হচ্ছে।পাশাপাশি ক্রেতাও কম।এতে দাম কিছুটা বাড়তি।

আরও খবর

Sponsered content