রাজনীতি

বরিশালে নৌকা সমর্থকদের হামলায় আহত হাতপাখা মেয়র প্রার্থীসহ ক’কর্মী

  প্রতিনিধি ১২ জুন ২০২৩ , ১০:৫৭:৩৩ প্রিন্ট সংস্করণ

রবিউল ইসলাম রবি (বরিশাল) অফিস॥বরিশালে হাত পাখা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিম বলেছেন, দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ডের ৮৭ নম্বর কেন্দ্রে সাবেরা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনকালে নৌকা সমর্থকরা তার ওপর হামলা চালিয়েছে। সোমবার (১২ জুন) বরিশাল পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত সাংবাদিক-পুলিশদের সামনে হাত পাখার প্রার্থীসহ কয়েকজন কর্মী রক্তাক্ত অবস্থায় এমন বক্তব্য প্রদান করেন।

তিনি আরো বলেন, প্রায় ‘৩০-৪০ জন ‘নৌকা সমর্থক’ অতর্কিতভাবে এই হামলা চালায়’। ‘আমাদের ঘিরে হঠাৎ কী নিয়ে তর্ক-বিতর্ক শুরু করল, ফট করে দেখি আমাকে ঘুষি দেয়া শুরু করছে। কিসের আমার উপর হামলা, আমি নিজের লোকদের তখন সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করি। আমি অভিযোগ নির্বাচন কমিশনে দিয়েছি। আমি শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে ওদের পতন ঘটিয়ে মাঠ থেকে বিদায় হব।’

‘আমার গায়ে হাত দিয়েছে, রক্তাক্ত করেছে। (তখন তিনি নিজের নাকের রক্ত দেখান)। আমি কী করেছি? আমি একজন প্রার্থী। আমি তো তাদের মুরব্বি, আলেম মানুষ। আমার উপর আঘাত করতে হবে তাদের। অথচ আমি কিচ্ছু বললাম না ‘

এ নিয়ে মামলা করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন শেষ হোক। আমি যেহেতু রক্ত ঝরিয়েছি। আওয়ামী লীগের পতন হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি রাজপথ ছাড়ব না।’

এর আগে ভোটগ্রহণ শেষে মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিমের গাড়িতে ভাঙচুর ও তার সাথে থাকা লোকজনের ওপর নৌকার কর্মীরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন। এছাড়া ৮টি কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন তিনি।

নির্বাচন নিয়ে হাতপাখার অভিযোগ, নগরীর ০১ নং ওয়ার্ড লাকুটিয়া সড়ক সৈয়দুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে হাতপাখার টারদের উপস্থিতিতে আ.লীগ কর্মীরা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট-কে জানালে তিনি তাৎক্ষণিক কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেননি।

২ নং ওয়ার্ড কাউনিয়া ব্রাঞ্চ রোড শেরে বাংলা দিবা-নৈশ মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে হাতপাখার পোলিং এজেন্ট এর কার্ড ছিনিয়ে নিয়ে বের করে দেয়া হয়েছে। আ.লীগের এ কাজে পুলিশ ও প্রিজাইডিং অফিসার নিরব। ০৬নং ওয়ার্ড আমানতগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ওজোপাডিকা-২ (ওয়াপদা অফিস) পোলিং এজেন্ট ঢুকতে দেয়নি। প্রিজাইডিং অফিসারকে জানালে সে ব্যবস্থা নেয়নি। আবার ০২ নং ওয়ার্ড কাউনিয়া প্রধান রোড এ কাদের চৌধুরী সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে হাতপাখার কর্মীদের মারধরের অভিযোগের খবর পেয়ে প্রার্থী উপস্থিত হলে তাঁর গাড়ি ও সাথে থাকা লোকজনের ওপর হামলা চালায় নৌকার কর্মীরা।

০৭ নং ওয়ার্ড কাউনিয়া সেকশন রোড আসমত মাস্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে হাতপাখার ক্যাম্প ভেঙ্গে দিয়েছে। কেন্দ্রের ভেতরে হাতপাখায় ভোট দিতে বাঁধা দেয়া হচ্ছে। দায়িত্বরত প্রিজাইডিং ও ম্যাজিস্ট্রেটকে জানানো হয়েছে। তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

২৬ নং ওয়ার্ড হরিণাফুলিয়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মহিলা ভোটারদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে নৌকায় জোড়পূর্বক ভোট দিয়ে দিচ্ছে। এ কাজ করছেন স্থানীয় কাউন্সিলের মেয়ে। প্রিজাইডিং এবং ম্যাজিস্ট্রেটকে জানানো হয়েছে।

২২নং ওয়ার্ড সিএন্ডবি রোড শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ কেন্দ্রে হাতপাখার মহিলা কর্মীদের সেন্টারের কাছাকাছি যেতে দেয়া হচ্ছেনা।

সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহকালে জানা গেছে, নগরীর বর্ধিত এলাকায় হাতপাখা প্রভাবিত এলাকায় নৌকা ও হাতপাখা সমর্থকদের মধ্যে বিভিন্ন উত্তেজনার প্রেক্ষিতে সেখানে বাড়তি পুলিশ ও র‌্যাব গেছে। নগরীরর ২৬ থেকে ২৮ নং ওয়ার্ডে এসব চিত্র পাওয়া গেছে।

বরিশালের ২৬ নং ওয়ার্ডের হরিণাফুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে কাউন্সিল প্রার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে সেখানে র‌্যাব পুলিশ যায়। স্থানীয় কাউন্সিল প্রার্থী ঘুড়ি মার্কার ফরিদ আহম্মেদ ও ঠেলাগাড়ির মার্কার সফিকুল ইসলাম হাতপাখার হয়ে কাজ করছে, তারা গালি গালাজ করলেও আমাদের কর্মীরা চুপ থাকায় সেখানে কোন মারামারি হয়নি বলে জানান ট্রাক্টর মার্কার প্রার্থী হুমায়ুন কবির।

এখানে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট দেবযানী কর জানান, তিনি এখনও সেরকম কিছু পাননি।

র‌্যাব -৮ এর কমান্ডার মাহামুদুল হাসান জানান, ২৬ নং ওয়ার্ডে উত্তেজনার প্রেক্ষিতে সেখানে একটি টিম গেছে।

রিটানিং কর্মকর্মতা জানান, ভোটার উপস্থিতি সস্তোষ জনক। ২৬ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে উত্তেজনায় সেখানে র‌্যাব পুলিশ পাঠানো হয়েছে । দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হচ্ছে।

২৭ নং ওয়ার্ডের দায়িত্বে নিয়োজিত ম্যাজিস্ট্রেট মুশফিকুর রহমান জানান, এই ওয়ার্ডে হাতপাখা ও নৌকার শো ডাউনের মতো করতে চেয়েছিল পরে উভয় গ্রুপকেই সরিয়ে দেয়া হয়েছে।

২১ নং ওয়ার্ডে ঘুড়ি মার্কা প্রার্থী সাইদ আহম্মেদ মান্নার বড়ো বোন কানিজ ফাতিমা অভিযোগ করেন, তার ভাইয়ের প্রতিন্দ্বন্দ্বি প্রার্থীরা অপপ্রচার চালাচ্ছে । এই সময় মহিলাদের মধ্যে কিছুক্ষণ বাকবিতন্ডা হট্টগোল ও হাতাহাতির সৃষ্টি হয়। সকাল সাড়ে নয়টার সময় এই ঘটনা ঘটে। এই সময়ে বিজিবি ঘটনাস্থলে গেলে পরসস্থিতি শান্ত হয়।

নগরীর ২নং ওয়ার্ডে হামলার বিষয়ে কোন অভিযোগ পাননি বলে জানান সহকারী কর্মকর্তা মো জিয়ার রহমান খলিফা।

নগরীর ২২ নং ওয়ার্ডে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সেন্টারে তাদের মহিলা প্রার্থীদের আসতে দিচ্ছে না নৌকার সমর্থকরা।

নগরীর ৯ ও ১০ নং ওয়ার্ড কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া এবং পাল্টা ধাওয়া। এবং ১০ ও ২৩ নং ওয়ার্ডে বহিরাগত লোকজনের হিড়িক।

সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা আহসান হাবীব কামালের ছেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপন জানায়, নগরীর ৫ নং ওয়ার্ডের মতিনপুর ভোট কেন্দ্রে মেয়র পদে ঘুড়ি মার্কা প্রার্থীর ৬ জন এজেন্টকে এবং জাহানারা ভোট কেন্দ্রের ৭ জন এজেন্টকে প্রিজাইডিং অফিসার বিভিন্ন অজুহাত উত্থাপন করে এজেন্টদের নামিয়ে দিয়েছে। কারণ ছিল, ভোট কেন্দ্রের পুলিং এজেন্ট এর কার্ডের উপর মেয়র প্রার্থীর স্বাক্ষর এবং মেয়র প্রার্থীর ছবি না থাকায় এমন ঘটনা ঘটেছে বলে জানান, মতিনপুর ভোট কেন্দ্রের ঘড়ি প্রতিকের নেতা জসিম উদ্দিন।

এদিকে ১২ জুন বিকেল ৪ টায় নৌকা প্রতীকের সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়।

আরও খবর

Sponsered content