সারাদেশ

বনভোজনসহ নানা অনুষ্ঠানে রান্নার জন্য ডাক পড়ে ঢাবির শিক্ষার্থী সোহাগের

  প্রতিনিধি ২০ অক্টোবর ২০২২ , ৮:২৯:৩৪ প্রিন্ট সংস্করণ

শিবপুর উপজেলা প্রতিনিধি।।ইট দিয়ে তৈরি দুই চুলার ওপর বসানো দুই ডেকচি। তাতে চলছে রান্নার কাজ। এতে মসলা মাখানো ও নাড়াচাড়ার কাজটি করছেন একজন যুবক। প্রথম দেখায় মনে হবে তিনি হয়তো বাবুর্চিকে সহযোগিতা করছেন। তবে এটা ভাবলে ভুল হবে।

সহযোগিতা নয়, রান্নার মূল কাজটি করছেন তিনিই। তবে শখের বশে নয়, এটাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন ওই যুবক।

বাবুর্চির পাশাপাশি তার আরেকটি পরিচয় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী। ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করেছেন। বর্তমানে স্নাতকোত্তর চলমান।

ওই শিক্ষার্থীর নাম মোহাম্মদ সোহাগ। দেশের শীর্ষস্থানীয় বিদ্যাপীঠের ছাত্র হয়েও বাবুর্চির কাজ করছেন তিনি। বাবার বাবুর্চি পেশা ধরে রাখতে সংকোচ নেই তার। বিয়ে, গায়েহলুদ, বনভোজনসহ নানা অনুষ্ঠানে রান্নার জন্য ডাক পড়ে এই ঢাবি শিক্ষার্থীর।

মোহাম্মদ সোহাগ নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার যোশর ইউনিয়নের ভংগারটেক গ্রামের ওসমান গণির সন্তান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫-১৬ সেশনের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) শিক্ষার্থী।

গ্রামের স্কুল থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন সোহাগ। নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ২০১৫ সালে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোহাগের বাবা ওসমান গণি ২৫ বছর ধরেই শিবপুর ও আশপাশের এলাকায় বিয়েবাড়িসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাবুর্চির কাজ করে আসছেন। সপ্তম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তিনি বাবার রান্নার কাজে সহায়তা করতেন। ফলে রপ্ত করেছেন রান্নার বিভিন্ন কৌশলও।

একপর্যায়ে ২০১৪ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় নিজেই ২০-২৫ জন খাবার খাবে এমন এক অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নিয়ে প্রথম একা রান্নার কাজ নেন। সেখানে ভালো করলে একের পর এক নিজ এলাকা ছাড়াও আশপাশের এলাকার বড় বড় অনুষ্ঠানে রান্নার ডাক আসে সোহাগের।

তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে রান্না করতে শুরু করেন এই যুবক। বর্তমানে তিনি ৫০০ মানুষের রান্না একা এবং একবারেই করতে পারেন।

মোহাম্মদ সোহাগ জানান, বিরিয়ানি, ভুনা খিচুড়ি, গরুর মাংস, খাসির মাংস, রোস্ট, মাছ, মুগ ও মসুর ডালসহ প্রায় ১০ প্রকারের রান্নার আইটেম জানা আছে তার। সাধারণত গ্রামাঞ্চলে যেসব খাবার আছে সবই রান্না করতে পারেন তিনি।

ঢাবিতে পড়েও বাবুর্চির কাজ করায় তার কোনো সংকোচ নেই বলে জানালেন এই যুবক। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘লজ্জা নয়, এটা গর্বের বিষয়। তবে আমি অবশ্যই বিভিন্ন চাকরির জন্য চেষ্টা করবো।’

বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রান্না করতে সম্মানীর বিষয়ে মোহাম্মদ সোহাগ বলেন, গ্রামাঞ্চলে যারা আর্থিকভাবে সচ্ছল তাদের জন্য নির্ধারিত মাথাপিছু ২০ টাকা। তবে গ্রামাঞ্চলে অনেকের টাকার সমস্যা থাকে। সেক্ষেত্রে কারও কাছে কম বা প্রয়োজনে বিনামূল্যেও কাজটি করে থাকি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নরসিংদী জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির সম্পাদক সারোয়ার হোসাইন বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে সোহাগকে চিনি। তিনি খুব ভালো রান্না করেন। ক্যাম্পাসে তার রান্নার সুনাম আছে। তাছাড়া কোনো কাজে লজ্জা করতে নেই। সোহাগ নিজের পছন্দের কাজটা করছেন।

আরও খবর

Sponsered content