জাতীয়

ফাহিমকে অভিবাসন বিভাগের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছে

  প্রতিনিধি ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ৪:৪৮:১৩ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।মালয়েশিয়ায় খালি কনটেইনার থেকে উদ্ধার হওয়া কিশোর রাতুল ইসলাম ফাহিমকে অভিবাসন বিভাগের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।তাকে বিমানবন্দরে বিদায় জানাতে এসেছিলেন খোদ মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফ উদ্দিন নাসুশন ইসমাইল।এসময় দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ারও উপস্থিত ছিলেন।

বিমানবন্দরে এক সংবাদ সম্মেলনে,কিশোর ফাহিমের ভ্রমণের নথি সম্পন্ন করায় বাংলাদেশ দূতাবাস ও ফাহিমকে ভালোভাবে দেখভাল করার জন্য বেসরকারি সংস্থা চৌ কিট ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানান মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

এ সময় তিনি বলেন,শিশু অধিকারবিষয়ক কনভেনশনে মালয়েশিয়ার যে অবস্থান রয়েছে,তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিশু নির্যাতনের শিকার হওয়াদের সুরক্ষা দেয়া আমাদের কর্তব্য।শিশুরাই আগামীর ভবিষ্যৎ।তাই সব শিশুকে সুস্থ ও নিরাপদ পরিবেশে বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো পথশিশু ও বিত্তবানের সন্তানের মধ্যেও পার্থক্য থাকা উচিত নয়।এছাড়া,কিশোর ফাহিম কোনো মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত নয় বলেও জানান সাইফ উদ্দিন।

গত মাসের শুরুতে বাংলাদেশ সফরের সময় ফাহিমকে দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।সেই প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবেই খোদ সাইফ উদ্দিন বিমানবন্দরে উপস্থিত থেকে ফাহিমের অভিবাসন বিভাগের সব প্রক্রিয়া শেষ করে তাকে ঢাকায় পাঠান।

গত ১২ জানুয়ারি মার্শাল আইল্যান্ডের পতাকাবাহী এমভি ইন্টিগ্রা জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মালয়েশিয়ার পোর্ট ক্লাং বন্দরের ওয়েস্ট পোর্টের উদ্দেশে রওনা হয়।এর ছয় দিন পর ১৭ জানুয়ারি জাহাজটি কেলাং বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছালে সেখানকার কর্মীরা কনটেইনারের ভেতরে শব্দ শুনতে পান। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানালে ১৭ জানুয়ারি জাহাজটি জেটিতে ভেড়ানোর অনুমতি দেয়া হয়। এরপর সন্দেহজনক কনটেইনার থেকে কিশোর ফাহিমকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।সেখানে চিকিৎসা শেষে একটি এনজিও’র সেইফ হোমে রাখা হয় ফাহিমকে।সেখানে তার দেখাশোনা করতেন বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্তকর্তারা।

সেখান থেকে কিশোর ফাহিমকে মঙ্গলবার রাতে ঢাকায় ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার গোলাম সারোয়ার।তিনি মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান এবং তিনি কিশোর ফাহিমের পাশে দাঁড়িয়ে মানবতার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বলেও জানান।

হাইকমিশনার বলেন,মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে।উভয় দেশ তাই নিজেদের মধ্যে দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রগুলো ক্রমশ সম্প্রসারিত করছে। দু’দেশের মধ্যে চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিদ্যমান। মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।

এছাড়াও,কিশোর ফাহিমকে বিদায় জানাতে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিমানবন্দরে যাওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।

১৬ বছর বয়সী রাতুল ইসলাম ফাহিম দুই মাস আগে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের বাড়ি থেকে পালিয়ে চট্টগ্রাম চলে যায়।পরে বন্ধুদের সঙ্গে খেলার ছলে কনটেইনারের ভেতরে ঢুকলে,চট্টগ্রাম থেকে মালয়েশিয়ায় পৌঁছে যায় সে।ফাহিমের কনটেইনার থেকে বেরিয়ে আসার কয়েকটি ভিডিও মালয়েশিয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হলে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেয় সরকার।এরপর হাইকমিশনের শ্রম শাখা থেকে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ফাহিমের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

ফাহিম কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের সাতপুকুরিয়া গ্রামের মো. ওমর ফারুক ও রোকেয়া বেগম দম্পতির ছেলে।পেশায় দিনমজুর ফারুকের তিন ছেলের মধ্যে ফাহিম সবার বড়।

আরও খবর

Sponsered content