প্রতিনিধি ২ এপ্রিল ২০২৩ , ৫:৩৮:৪১ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক।।প্রতিনিয়ত অর্ডার কমছে।ফলে কারখানার উৎপাদনও কমে যাচ্ছে।এতে সঙ্কটে পড়ছেন গার্মেন্ট শ্রমিকরা। এতদিন বেতনের সাথে ওভারটাইম মিলিয়ে দিন পার হয়ে যেত।এখন ওভারটাইম নেই।ফলে মূল বেতনই ভরসা।যা দিয়ে কোনোভাবে টিকে থাকাই মুশকিল।সামনে ঈদ কীভাবে পার হবে তা ভেবেও চিন্তিত তারা।
গার্মেন্টের মালিকপক্ষ সাফ জানিয়ে দিয়েছে,ঈদ যেহেতু এপ্রিলের ২১ বা ২২ তারিখে হবে ফলে এই মাসের বেতন দেয়া হবে না।তবে বোনাস দেয়া হবে।মাসের শেষ সপ্তাহ যেহেতু পড়ে যাচ্ছে তাই পুরো মাসেরই বেতন চান শ্রমিকরা। এখানেই তৈরি হতে পারে সঙ্কট।তবে এখনো পর্যন্ত খুব বেশি সঙ্কটের কথামালিক বা শ্রমিকদের কাছ থেকে আসেনি।
গত ডিসেম্বরে বকেয়া বেতনের দাবিতে রাজধানীর কমলাপুরে মূল সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিলেন ইথিক্যাল টেক্সটাইল ফ্যাশনের প্রায় তিন শতাধিক শ্রমিক।এছাড়া গত তিন মাসে বেতনের দাবিতে কোনো ফ্যাক্টরিতে আন্দোলনের কথা শোনা যায়নি।ফলে শ্রমিকের আয় কমে গেলেও খুব বেশি বেতন সঙ্কট নেই।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভা প্রধান তাসলিমা আখতার বলেন,খুব বেশি বেতন সঙ্কট নেই সত্যি।কিন্তু শ্রমিকের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।দ্রব্যমূল্য নিয়ে ভালো বেতনে চাকরি করা মানুষেরই নাভিশ্বাস উঠেছে।সেখানে ৮ হাজার টাকা বেতন পাওয়া শ্রমিক জীবন চালাবেন কীভাবে? এর মধ্যে এখন আর ওভারটাইম নেই।ফলে মূল বেতন দিয়ে মাছ-গোসত তো দূরের কথা শাক-সবজি কেনাই কঠিন হয়ে গেছে।এখন মাসের শেষ সপ্তাহে ঈদ হলে শুধু বোনাস দিয়ে শ্রমিকরা ঈদ করবেন কীভাবে?অবশ্যই তাদের বেতন দিতে হবে।আমরা আগামী সপ্তাহ থেকে এ বিষয়ে মালিকদের সাথে কথা বলব।’
তবে বেতন দেয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সিনিয়র সহ-সভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম।
তিনি বলেন,মাস শেষ না হলে তো আপনি বেতন চাইতে পারেন না।আমরা মার্চের বেতন পরিশোধ করে দেবো। বোনাসও দেবো।কিন্তু এপ্রিলের বেতন দিতে পারব না।দেখেন এখন একটা ফ্যাক্টরির যে উৎপাদন ক্ষমতা তার ৬০-৭০ ভাগ কাজ হচ্ছে।গত তিন মাস ধরে ওভারটাইম বন্ধ।ভয়াবহভাবে অর্ডার কমে যাচ্ছে।মালিকদের টিকে থাকাই মুশকিল।সেখানে অযৌক্তিক দাবি করা হলে আমাদের পক্ষে সেটা মেটানো তো সম্ভব নয়।’
এদিকে গার্মেন্টে মজুরি বোর্ডের মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের প্রস্তুতি চলছে।সরকারের তরফ থেকে মজুরি বোর্ড গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।গার্মেন্টস খাতে নিয়োজিত শ্রমিকদের মাসিক মজুরি বাড়িয়ে ন্যূনতম ২৫ হাজার টাকাকরার দাবি জানিয়েছে শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন।
বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটির প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আখতার বলেন,বর্তমানে একজন শ্রমিকের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও বাসা ভাড়া মিলিয়ে ১৪ হাজার টাকার বেশি প্রয়োজন হয়।বাজারে শুধু চালের পেছনেই প্রতিটি পরিবারের খরচ বেড়েছে ২ হাজার ১০০ টাকা।এ অবস্থায় বর্তমান মজুরি দিয়ে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। ২০১৮ সালে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মাসিক ন্যূনতম বেসিক বেতন নির্ধারণ করা হয় ৪ হাজার ১০০ টাকা,বাসা ভাড়া ২ হাজার ৫০ টাকা,খাদ্য ভাতা ৯০০ টাকা,চিকিৎসা ভাতা ৬০০ টাকা ও যাতায়াত ভাতা ৩৫০ টাকা মিলিয়ে সর্বনিম্ন মোট মজুরি ধরা হয় ৮ হাজার টাকা।বর্তমানে এ টাকা দিয়ে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।তাই আমরা দ্রুত বেতন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছি।’
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন,আমাদের উৎপাদন খরচ যে পরিমাণে বেড়েছে তাতে কারখানা টিকিয়ে রাখা কঠিন।একটা ফ্যাক্টরির আগে গ্যাস বিল দিতে হতো ৩ কোটি টাকা।এখন সেই ফ্যাক্টরির গ্যাস বিল আসছে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা।এর বাইরে বিদ্যুতের বিলও একইভাবে বেড়েছে। তাহলে ফ্যাক্টরি চলবে কীভাবে?এতকিছুর পরও আমরা শ্রমিকদের নিয়মিত বেতন ভাতা পরিশোধ করে আসছি। সামনে ঈদ ফলে বেতন ভাতাই আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সবার সহযোগিতা ছাড়া টেক্সটাইল খাত আগামী দিতে টিকে থাকবে পারবে না।’
গার্মেন্ট মালিকরা ইউরোপের বাজারে রফতানি কমে যাওয়ার কথা বললেও ইউরোপীয় পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাটের সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে ভিন্ন কথা।গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত (৯ মাসে) ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সারাবিশ্ব থেকে ৮৬ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পোশাক আমদানি করেছে।২০২১ সালের ওই সময়ের তুলনায় যা ২৪ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি।এই সময়ে বাংলাদেশ থেকে ১৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন বা এক হাজার ৯৪০ কোটি ৭০ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের পোশাক আমদানি করেছে ইইউ।যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৩ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন বা এক হাজার ৩৬৯ কোটি ৫ লাখ ১০ হাজার ডলার।ফলে দেখা গেছে,বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ পোশাক আমদানি বাড়িয়েছে ৪১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেছেন,এই তথ্য তো গত বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত।ওই সময় ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশ ভালো করছে।এই সময়ের পর ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের রফতানি কমেছে।যা তাদের পরবর্তী রিপোর্টে পাওয়া যাবে।আমরা যেটা বলছি,গত ডিসেম্বর থেকেই মূলত রফতানি কমতে শুরু করেছে।যার প্রভাব এখনো রয়েছে।