জাতীয়

পায়রা ও রামপাল থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে বিদ্যুৎখাতে যুগান্তকারী অধ্যায়

  প্রতিনিধি ২০ ডিসেম্বর ২০২২ , ৪:২৮:৩৮ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।বিজয়ের মাসে দক্ষিণাঞ্চলের পায়রা ও রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুই হাজার ৬৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হয়েছে জাতীয় গ্রিডে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্মিত টাওয়ারের সঞ্চালন লাইন দিয়ে পায়রা ও রামপাল থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে বিদ্যুৎখাতে যুগান্তকারী অধ্যায় শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ ডিসেম্বর বিকেল তিনটা ৪৬ মিনিটে চারশ’ কেভি লাইনটির প্রথম সার্কিট এবং তিনটা ৪৮ মিনিটে দ্বিতীয় সার্কিটের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে পায়রার বিদ্যুৎ বরিশাল ও গোপালগঞ্জ হয়ে পদ্মার বুকে সাতটি বৈদ্যুতিক টাওয়ারের সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে ঢাকার আমিন বাজার গ্রিড সাব-স্টেশনের থেকে জাতীয় গ্রিডে পৌঁছানোর মাধ্যমে দেশের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় সূচিত হয়েছে।

একইসাথে রামপালে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশীপ থার্মাল পাওয়ার স্টেশনের বিদ্যুৎ মোংলা ও গোপালগঞ্জ হয়ে আমিন বাজার গ্রিড সাব-স্টেশনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। রামপাল পাওয়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট এখনো পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদনে রয়েছে। খুব শীঘ্রই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ইউনিট দুটির উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে পূর্ণ লোডে যুক্ত করা হবে বলেও সূত্রটি নিশ্চিত করেছেন।

সূত্রে আরও জানা গেছে,উৎপাদন শুরুর প্রায় ৩০ মাস পর দেশের অন্যতম বৃহৎ পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র জাতীয় গ্রিডে সংযুক্তির মধ্যদিয়ে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিতরণ ও সঞ্চালন ব্যবস্থায় নতুন মাইল ফলক রচিত হয়েছে।বাংলাদেশ ও চীনের দুটি রাষ্ট্রীয় কোম্পানীর সমান মালিকানায় প্রায় ১৯ হাজার পাঁচশ’ কোটি টাকা ব্যয়ে পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মানে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে ২০১৬ সালের ২৯ মার্চ চুক্তি স্বাক্ষরের পর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়।ওই বছরের ১৫ মে প্রথম ইউনিট এবং ৮ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ইউনিট বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে।গত ২১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের অন্যতম বৃহৎ এ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধণ করেন।

সূত্রমতে,ট্রান্সমিশন লাইন নির্মিত না হওয়ায় এতোদিন বৃহৎ এ উৎপাদন কেন্দ্রের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি।ফলে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিটের কখনো একটি আবার মাঝে মধ্যে দুটি ইউনিট অর্ধেক লোডে চালিয়ে শুধু দক্ষিণ-পশ্চিম জোনের ২১ জেলার পূর্ণ চাহিদা মেটানো হয়েছে।যেকারণে গত ১০ মাস দেশব্যাপী অব্যাহত লোডশেডিং হলেও বরিশাল ও খুলনা বিভাগসহ ফরিদপুর অঞ্চলের ২১ জেলার পশ্চিম জোনে কোন লোডশেডিং ছিলোনা।পায়রা থেকে বরিশাল ও গোপালগঞ্জ হয়ে ১৬৩ কিলোমিটার দীর্ঘ চারশ’ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন সংযুক্তির ফলে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহে আর কোন বাঁধা রইলো না।

বাংলাদেশ সরকার ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানী-পিজিসিবি’র যৌথ অর্থায়নে প্রায় দুই হাজার আটশ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৬৩ কিলোমিটার দীর্ঘ পায়রা থেকে বরিশাল ও গোপালগঞ্জে চার লাখ ভোল্টেজের ডবল সার্কিট সঞ্চালন লাইনের নির্মান কাজ ২০১৭ সালে শুরু হয়ে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার কথা ছিলো।এ গ্রিড লাইনের বেশিরভাগ এবং গোপালগঞ্জে সাব-স্টেশনের নির্মান কাজ ইতোমধ্যে শেষ হলেও রামপাল হয়ে মোংলা থেকে গোপালগঞ্জ হয়ে পদ্মা নদীর ওপর রিভার ক্রসিং টাওয়ারসহ নয় কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মানের কঠিন কাজ সম্পাদনে অপেক্ষা করতে হয়েছে। অবশেষে সব অপেক্ষার পালা শেষ করে গত ১৪ ডিসেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে এবং ১৭ ডিসেম্বর বাণিজ্যিকভাবে পায়রা ও রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে।

পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (অপারেশন) ষশাহ আবুল হাসিব বলেন,রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরীক্ষামূলকভাবে চালুর পরে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা অব্যাহত রয়েছে।যেকারণে পায়রার একটি ইউনিট সচল রেখে সেখান থেকে ছয়শ’ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে।খুব শীঘ্রই রামপালে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর পর সেখান থেকে মোংলা ও গোপালগঞ্জ হয়ে আমিন বাজার পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে। একইসাথে পায়রার দুটি ইউনিট থেকেও পূর্ণ লোডে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,চীনা কারিগরি সহায়তায় বৃহত্তর বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ার ধানখালী ইউনিয়নে পায়রা নদীর তীরে কয়লা ভিত্তিক ৬৬০ মেগাওয়াটের একক সর্ববৃহৎ দুটি ইউনিট থেকে চারশ’ কেভি ডবল সার্কিট ট্রান্সমিশন লাইনের মাধ্যমে ১৬৩ কিলোমিটার উত্তরে গোপালগঞ্জে বরিশাল-ফরিদপুর-ঢাকা জাতীয় মহাসড়কের পাশে নির্মিত সাব-স্টেশনে বিদ্যুত পৌঁছানো হ”চ্ছে। সেখান থেকে মোংলা-গোপালগঞ্জ সঞ্চালন লাইনে যুক্ত হয়ে পদ্মা পাড়ি দিয়ে তা ঢাকার আমিন বাজার হয়ে জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত হয়েছে।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের এক হাজার ২৭০ কোটি টাকাসহ দুই হাজার ৫০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রামপাল-মোংলা-গোপালগঞ্জ-আমিন বাজার চারশ’ কেভি ডবল সার্কিট লাইনটি নির্মিত হয়েছে।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ সঞ্চালন-১ এর প্রধান প্রকৌশলী মোরশেদ আলম খান বলেন, পদ্মা রিভার ক্রসিংয়ে অত্যন্ত বিরল একটি কাজ। সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে প্রবাহিত বিদ্যুৎ যা হবে, তা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব রাখবে। তিনি আরও বলেন, পদ্মার তলদেশে ৩৬টি পাইলের ওপর বসেছে বিদ্যুত টাওয়ারের প্ল্যাটফর্ম।

গত জুনে সম্পন্ন হওয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে ১২৬ মিটার উচ্চতার টাওয়ার করে সঞ্চালন লাইন সম্পন্ন হয়েছে বিজয়ের মাসে।সাড়ে সাত কিলোমিটার পদ্মা নদীর ওপর দিয়ে যাওয়া এই সঞ্চালন লাইন জাতীয় গ্রিডকে বিশেষ উচ্চতায় নিয়েছে।

বরিশাল বিভাগ উন্নয়ন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মো. আতিকুর রহমান আতিক বলেন,দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে আমাদের জীবনযাত্রাকে আরও গতিশীল করে তুলবে।এজন্য তিনি (আতিক)প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

আরও খবর

Sponsered content