সারাদেশ

পদ্মা সেতু চালুর সুফল দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে

  প্রতিনিধি ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ , ৫:২০:৩৭ প্রিন্ট সংস্করণ

বরিশাল প্রতিনিধি।।পদ্মা সেতু চালুর সুফল দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। যোগাযোগের মাইলফল হিসেবে মোংলা ও পায়রা পোর্টের মধ্যে সড়ক পথের সংযোগে উৎপাদন ও উপকরণে গতিশীলতা বেড়েছে।

পাশাপাশি পদ্মা-পায়রা ও সুন্দরবনের মধ্যে একটি অর্থনৈতিক জোন হচ্ছে কৃষি ও শিল্পকে ঘিরে। এখানকার অর্থনীতিবিদদের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের সমুদ্র কেন্দ্রীয় অর্থনীতিতে সম্পদ আহরণের সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে।সরকারি বিএম কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মো. আখতারুজ্জামান খান জানান,পদ্মা সেতু এবং বঙ্গমাতা ফজিলাতুননেছা মুজিব ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর উদ্বোধনের পর মোংলা ও পায়রা পোর্টের মধ্যে সড়ক যোগাযোগের ফলে শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।

বর্তমান বাস্তবতার কারণে কৃষি পণ্য বা কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্পগুলোর যাতায়াতে খরচ হ্রাস পাওয়ায় অতি দ্রুত বাজারে পৌঁছে দিয়ে ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় গ্রামীণ অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।এতে করে ক্ষুদ্র চাষী ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় তারা উৎপাদনমুখী হচ্ছে।অভ্যন্তরীণ স্থানান্তরের ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের শ্রমিকরা আগে ঢাকামুখী থাকলেও বর্তমানে নিজস্ব এলাকায় কর্মসংস্থান হওয়ায় তারা আর ঢাকামুখী হচ্ছেন না।

এছাড়াও পর্যটন শিল্পে কুয়াকাটা ও সুন্দরবনে পর্যটক বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানকার অর্থনীতিতে চাঙ্গা ভাব বিরাজ করছে।

বরিশাল বিসিকে গড়ে উঠেছে প্রথম পোশাক তৈরির কারখানা,বোতলজাত পানি পরিশোধনাগারসহ নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান।এছাড়াও সেখানকার বৃহত ফরচুন সুজসহ অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের পণ্য আনা-নেওয়ায় সময় সাশ্রয় হওয়ায় উৎপাদন বেড়েছে।পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মাত্র তিন মাসের মধ্যে পিরোজপুরের কঁচা নদীর ওপর বেকুটিয়া পয়েন্টে নির্মিত বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর উদ্বোধনের পর খুলনা-বরিশাল-ঢাকা সরাসরি সড়ক যোগাযোগে অপার সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে। এ সেতু উদ্বোধনে বরিশাল-পিরোজপুর-বাগেরহাট-খুলনা-মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে নির্বিঘ্ন যাতায়াত করছে এ অঞ্চলের মানুষ।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর বরিশাল সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসন,পুলিশ প্রশাসন,সড়ক ও সেতু বিভাগের বরিশালের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী,নির্বাহী প্রকৌশলীসহ অংশীজনদের নিয়ে এনেক্স ভবনে পৃথক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে দক্ষিণাঞ্চলগামী যানবাহনগুলোকে বরিশাল নগরীর অভ্যন্তরের ১২ কিলোমিটার মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াতে তীব্র যানজট নিরসনে করণীয় সম্পর্কে নানান সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বলেন,পদ্মা সেতু হওয়ার পর শহরের মধ্যবর্তী মহাসড়ককে ছয় জেলার মানুষদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে করে সড়ক প্রশস্তকরণ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে মহাসড়ক প্রশস্তকরনের উদ্যোগের তাগিদ দেন সিটি মেয়র।

জেগে উঠেছে সাগরকন্যা কুয়াকাটা

ঝিমিয়ে পড়া পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসাবাণিজ্য চাঙ্গা হয়ে উঠেছে।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ঢাকা থেকে মাত্র ৫ ঘণ্টায় সাগরকন্যায় পৌঁছাতে পেরে উচ্ছ্বাসিত পর্যটকরা।সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের বেলাভূমি পর্যটনকেন্দ্র সাগরকন্যা কুয়াকাটায় সমুদ্রসৈকতে হাজার হাজার পর্যটকের উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষিত হচ্ছে।পর্যটকরা জানিয়েছেন,ভোরে ঢাকা থেকে যাত্রা করে দুপুরের আগেই কুয়াকাটা পৌঁছে দিনভর উল্লাস শেষে বিকালে সূর্যোদয় দেখে রাতে আবার ঢাকায় ফিরতে পেরেছেন তারা।এক সময়ে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত থেকে ১২ তেকে ১৪টি ফেরি সার্ভিস ছিল।সে কারণে কুয়াকাটায় পৌঁছাতে ২৪ ঘণ্টা সময় লাগত।সর্বশেষ ভোগান্তি ছিল মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টের ফেরি।পদ্মা সেতু নির্মিত হওয়ায় দক্ষিণের দুয়ার খুলে যাওয়ায় মাত্র পাঁচ ঘণ্টায় কুয়াকাটা পৌঁছে উল্লসিত পর্যটকরা।পদ্মা সেতুর সুফলে এবার নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে চট্টগ্রাম,জামালপুর,টাঙ্গাইল,ময়মনসিংহ, গাজীপুর,মুন্সীগঞ্জ,মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার পর্যটকরা আসছেন সাগরকন্যা কুয়াকাটার সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে।

একাধিক পর্যটকরা জানান,আগে কেবল মাত্র ভোগান্তির জন্যই সাগরকন্যায় আসার আনন্দ ধুলায় মিশে যেত।সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্ত কোনোটাই দেখা সম্ভব হতো না। পর্যটকদের চাপে এবার শতভাগ হোটেল-মোটেল বুকিং হয়ে যাওয়ায় অনেকেই চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরবর্তী হোটেল কক্ষ ভাড়া নিচ্ছেন।কুয়াকাটার ব্যবসায়ীরা জানান,পদ্মা সেতু চালুর পর থেকেই পর্যটক বাড়তে থাকে তাই এবার নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রচুর পর্যটক আসবে এমনটাই প্রত্যাশা ছিল তাদের। তার প্রস্তুতি হিসেবে ফিশ ফ্রাইয়ের দোকানিরাও ভালো বিক্রির আশায় নানা ধরনের মাছ আগে-ভাগেই কিনে ফ্রিজে মজুত করে রেখেছিলেন।

বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন উল হাসান জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নজর রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের দিকে। তাই সেখানে মেগা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন।পদ্মা সেতুর সুফল সবচেয়ে বেশি ভোগ করবে কুয়াকাটাবাসী।পদ্মা সেতু পারি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক কোনো প্রকার ভোগান্তি ছাড়া যাতায়াত করায় এ অঞ্চলের মানুষের আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন,পর্যটকদের ভোগান্তি লাঘবে ইতিমধ্যে কুয়াকাটাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আরও খবর

Sponsered content