অপরাধ-আইন-আদালত

নৈতিক স্খলনে জড়িয়ে চাকরি খোয়ালেন তুষার

  প্রতিনিধি ৩১ মে ২০২৪ , ৫:৩৯:৪৯ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।স্ত্রী নির্যাতন,ক্ষমতার অপব্যবহার,মাগুরায় সন্ত্রাসে মদদসহ নৈতিক স্খলনে জড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেসসচিব পদ থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন হাসান জাহিদ তুষার।তাঁর বিরুদ্ধে এর বাইরেও নিজের এলাকায় আওয়ামী লীগের পুরনো নেতাকর্মীদের নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসায় তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

একাধিক সূত্র জানায়,হাসান জাহিদ তুষারের স্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একাধিকবার অভিযোগ দেন।সেখানে তিনি তুষারের বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতন,একাধিক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন।জানা যায়,হাসান জাহিদ তুষার ছাত্রলীগের একাধিক নেত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়েছেন।প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মতো স্পর্শকাতর দপ্তরে চাকরি করে এমন নৈতিক স্খলনকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচনায় নেন প্রধানমন্ত্রী।

সূত্র জানায়,হাসান জাহিদ তুষারের বিরুদ্ধে বিদেশে সরকারবিরোধী প্রচারণায় যুক্ত একাধিক ব্যক্তির কাছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তথ্য পাচারের অভিযোগও রয়েছে। তুষারের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে বিদেশে অবস্থানরত ওই গোষ্ঠী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারবিরোধী নানা প্রচারণা চালাত।

সূত্র মতে,মাগুরা সদর উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের হাসান জাহিদ তুষার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।তিনি ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

তখন তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন।তবে মাগুরায় তুষারের আত্মীয়দের বেশির ভাগ বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

গত বছর ৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঁচ পৃষ্ঠার একটি লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেন মাগুরা সদরের হাজিপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন পর্যায়ের পাঁচজন নেতা।চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন,হাজিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাহারুল হক,হাজিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাসিম বিল্লাহ চাঁন,শ্রীরামপুর ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি চাঁদ আলী,সাধারণ সম্পাদক কেরামত আলী ও সাংগঠনিক সম্পাদক এরাদ আলী।

চিঠিতে হাসান জাহিদ তুষারের বিরুদ্ধে এলাকায় বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের নিয়ে নিজস্ব বলয় তৈরি করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তোলা হয়।

অভিযোগে আরো বলা হয়,হাসান জাহিদ তুষারের বাবা মিয়া আব্দুর রাজ্জাক ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বৃহত্তর পদ্মাকর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন।ইউনিয়নটির নির্বাচিত চেয়ারম্যান আশরাফুন্নবী আশু মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের জন্য এলাকা ছেড়ে যান।এরপর রাজাকার বাহিনীর সমর্থন নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তুষারের বাবা আব্দুর রাজ্জাক।রাজ্জাকের আপন চাচাতো ভাই বজলুর রহমান মৌলভী ছিলেন ঝিনাইদহ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল।তুষারের আপন মামা কাজী আব্দুস সালাম ওরফে খাজা কাজী ছিলেন কুখ্যাত রাজাকার। তুষারের বড় ভাই হাসান সাঈদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

হাজিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেসসচিব হওয়ার পর থেকে হাজিপুরে নিজের আধিপত্য বিস্তারে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের নিয়ে নিজের বলয় তৈরি করেন তুষার।হাজিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি আশরাফুল আলম আরজু মোল্লা,মাগুরা সদর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব কামরুজ্জামান জুয়েলের নেতৃত্বে একটি সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান পৃষ্ঠপোষক হন তুষার। তাঁদের মাধ্যমেই এলাকায় আওয়ামী লীগের পুরনো নেতাকর্মীদের কোণঠাসা করতে থাকেন।ঝিনাইদহে বসবাসকারী আপন ছোট ভাই হাসান জাকির নিহারকে অনিয়মের মধ্য দিয়ে শ্রীরামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি করার চেষ্টা চালান।এ নিয়ে আওয়ামী লীগের পুরনো নেতাদের সঙ্গে তুষারের চরম বিরোধ শুরু হয়।

হাজিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাহারুল হক জানান,গত বছর ৪ ফেব্রুয়ারি তুষারদের গ্রাম শ্রীরামপুরে ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তিবিষয়ক সম্পাদক জাহিদ জোয়ার্দারকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে আহত করা হয়।জাহিদ পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।তুষারের মদদপুষ্ট স্থানীয় তাহাজ্জত মেম্বার,আরজু গং এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত। এ ঘটনায় মামলা হলেও তুষার তাঁর পদের প্রভাব খাটিয়ে আসামিদের ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখেন।তুষারের অনুসারীদের হামলায় গত চার বছরে অন্তত সাতজন পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন।

এসব নানা অভিযোগের মধ্যেই গত বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে হাসান জাহিদ তুষারের নিয়োগ বাতিল করা হয়। আগামীকাল শনিবার থেকে নিয়োগ বাতিলের আদেশ কার্যকর করা হবে।

গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে তুষারসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দুই কর্মকর্তার নিয়োগ বাতিল প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন,শেখ হাসিনার সৎসাহস আছে।সে কারণে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর জিরো টলারেন্স।আজ প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ দুজনের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। তাঁদের নিশ্চয়ই কর্তব্যে কোনো বিচ্যুতি ঘটেছে।

হাসান জাহিদ তুষারের বক্তব্য জানতে গতকাল রাতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

আরও খবর

Sponsered content