শিক্ষা

নিজের চিকিৎসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজস্ব তহবিল থেকে ৩ লাখ টাকা নিয়েছেন-উপাচার্য

  প্রতিনিধি ২৫ জুন ২০২৩ , ২:২১:১৩ প্রিন্ট সংস্করণ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি।।চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (চমেবি) ‍উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল খান।নিয়োগ অনুযায়ী তাঁর বেতন স্কেল তৃতীয় গ্রেডের।কিন্তু সেটির ব্যত্যয় ঘটিয়ে প্রথম গ্রেডের বেতন নিচ্ছেন তিনি।শুধু তা-ই নয়,নিজের বেতন বৃদ্ধির এই বিষয়টি সিন্ডিকেট থেকে পাস করিয়েও নিয়েছেন।এ ছাড়া নিজের চিকিৎসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজস্ব তহবিল থেকে ৩ লাখ টাকা নিয়েছেন উপাচার্য, যা সঠিক হয়নি বলে মত দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

উপাচার্যের বেতন বৃদ্ধিসহ এ রকম সাত খাতে প্রতিষ্ঠানটিতে আর্থিক অনিয়ম পেয়েছে ইউজিসির পর্যবেক্ষক দল। ইউজিসিকে এসব অনিয়মের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছে দলটি।

গত মাসের ২৩ মে একটি পরিপত্র প্রকাশ করে ইউজিসি। সেখানে ইউজিসির বাজেট পর্যালোচনা দল চমেবির আটটি খাতে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে।এর মধ্যে সাতটি খাতে আর্থিক অনিয়ম পাওয়ার কথা জানায় দলটি।

ইউজিসির অর্থ ও হিসাব বিভাগের উপপরিচালক (বাজেট) মো. হাফিজুর রহমানের সই করা ওই পর্যবেক্ষণে বলা হয়, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী উপাচার্য সর্বশেষ প্রতিষ্ঠান থেকে আহরিত বেতন-ভাতাদির সমপরিমাণ অর্থ মাসিক বেতন হিসেবে প্রাপ্য হবেন।কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট নিয়ম পরিবর্তন করে তাঁর বেতন প্রথম গ্রেডে উন্নীত করে।এই এখতিয়ার সিন্ডিকেটের নেই।

উল্লেখ্য,সরকারের সর্বশেষ পে-স্কেল অনুযায়ী প্রথম গ্রেডে সরকারি কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ মূল বেতন ৭৮ হাজার টাকা। এর সঙ্গে বাড়িভাড়া,চিকিৎসা ও অন্যান্য ভাতা মিলিয়ে মোট বেতন-ভাতা দাঁড়ায় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

কিন্তু চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে ইসমাইল খান প্রথম গ্রেডে মূল বেতন পান ৮৩ হাজার টাকা। আর ভাতাসহ তিনি পান মোট প্রায় ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা। অথচ তাঁর তৃতীয় স্কেলে মূল বেতন ছিল ৭৪ হাজার টাকা। এ অবস্থায় এলপিসি অনুযায়ী তাঁর বেতন নেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য সুপারিশ করেছে ইউজিসির পর্যবেক্ষণ দল।

ইউজিসির পর্যবেক্ষণে উঠে আসা চমেবির আর্থিক অনিয়মের আরেকটি হলো অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া ছয় কর্মচারীকে উচ্চতর স্কেলে বেতন দেওয়া।এতে প্রতি মাসে মূল বেতন ৫২ হাজার টাকাসহ প্রতিষ্ঠানটির প্রায় আড়াই লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউজিসি।

তাঁদের বিষয়ে ইউজিসির পর্যবেক্ষক দলের পর্যবেক্ষণ হলো, অ্যাডহকে নিয়োগপ্রাপ্তরা সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে চাকরি করেন।তাঁদের উচ্চতর স্কেলে বেতন দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।কারণ,তাঁদের কোনো সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার অভিজ্ঞতার কোনো কাগজ পাওয়া যায়নি।এ ধরনের কাজকর্ম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা স্পষ্ট করে।

এ ছাড়া উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়ন ও ডিপিপিসংক্রান্ত সমন্বয় সভার ব্যয় বাবদ রাজস্ব খাত থেকে ১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা পরিশোধ করে বিশ্ববিদ্যালয়।এতেও নিয়মের ব্যত্যয় এবং আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে ইউজিসির পর্যবেক্ষণ দল। তারা মতামত দেয়,উন্নয়ন প্রকল্পে কোনো প্রকার অর্থ রাজস্ব তহবিল থেকে প্রদান করা যাবে না।এরপরও রাজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করায় আর্থিক অনিয়ম হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য ইসমাইল খান আজকের পত্রিকাকে বলেন,২০১২ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের সুপারিশের ভিত্তিতে বেতন স্কেল গ্রেড-৩-তে ফার্মাকোলজি বিভাগে অধ্যাপক পদে কর্মরত ছিলাম।পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজে অধ্যক্ষ ও ডিন হিসেবে যোগদান করি।সব মিলিয়ে আমার প্রফেশনালিজম অনেক বছরের,সে জন্য প্রথম গ্রেডে বেতন নেওয়ার যোগ্যতা রাখি।’

উপাচার্য বলেন,ইউজিসি ২০২১-২২ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে চিকিৎসা বাবদ ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়।সেটি আমি খরচ করি।এই সব বিষয়ে ইউজিসিকে লিখিত আকারে জানিয়েছি।’

তবে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর আজকের পত্রিকাকে বলেন,তৃতীয় গ্রেডে নিয়োগ হয়েও প্রথম গ্রেডে বেতন নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।সিন্ডিকেটে পাস করলেও পারা যায় না।এলপিসি অনুযায়ী বেতন নিতে হবে। এই নিয়ম না মানলে অবশ্যই অনিয়ম হয়েছে।

আরও খবর

Sponsered content