জাতীয়

নিজস্ব কার্ড ‘টাকা-পে’ চালুর মধ্য দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ একধাপ এগিয়েছে-প্রধানমন্ত্রী,শেখ হাসিনা

  প্রতিনিধি ১ নভেম্বর ২০২৩ , ১:৫১:০৪ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,বাংলাদেশের নিজস্ব কার্ড ‘টাকা-পে’ চালুর মধ্য দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পাশাপাশি ক্যাশলেস সোসাইটি গড়ার পথে আরেক ধাপ অগ্রগতি হয়েছে।

তিনি বলেছেন,”এত দিন আমাদের কার্ড ভিত্তিক স্থানীয় পেমেন্টের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কোম্পানির নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে হত,সঙ্গে সঙ্গে অনেক টাকাও চলে যেত।এখন আর যাবে না,কারণ টাকা পে কার্ড স্কিমে সকল লেনদেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ন্যশনাল সুইচের মাধ্যমে হবে।”

‘টাকা-পে’ হল এক ধরনের ডেবিট কার্ড।এ কার্ডের মাধ্যম প্রচলিত ভিসা বা মাস্টার কার্ডের মতই লেনদেন করতে পারবেন গ্রাহকরা।বাংলাদেশের ভেতরে বিভিন্ন ব্যাংক এই কার্ড ইস্যু করতে পারবে,নিয়ন্ত্রণ থাকবে বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে।

তাতে আন্তর্জাতিক কার্ডের ওপর নির্ভরতা কমার পাশাপাশি বিদেশি মুদ্রা সাশ্রয় হবে বলে সরকারের তরফ থেকে জানানো হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার সকালে এক অনুষ্ঠানে এ কার্ডের উদ্বোধন করেন।গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

তিনি বলেন, “আজকে আমাদের জন্য অত্যান্ত আনন্দের একটি দিনআমরা ২০০৮ সালে ঘোষণা দিয়েছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলব।আজকে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি,এখন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা।

“আজকে আমরা যে কাজটা করতে যাচ্ছি,সেটা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলারই একটি পদক্ষেপ,সেটাই আমরা মনে করা।আমাদের নাগরিকরা স্মার্ট নাগরিক হবে,আমাদের অর্থনীতি স্মার্ট অর্থনীতি হবে।আমাদের সমাজ ব্যবস্থা, সরকার ব্যবস্থাটা স্মার্ট সরকার ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে তুলব।আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে স্মার্ট সমাজ ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে তুলব। ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে সেই উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব।”

শেখ হাসিনা বলেন, “ক্যাশলেস সোসাইটি বিনির্মাণের উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করেছি।বাংলাদেশ মোবাইল ফাইনেন্সিয়াল সার্ভিসেস নীতিমালা ২০২২ প্রণয়ন করা হয়েছে। আমরা স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশ।আমাদের অর্থনীতিও স্বাধীন সার্বভৌম একটা ব্যবস্থা আমরা গড়ে তুলতে পেরেছি।”

দেশে এখন যতগুলো কার্ড ব্যবহার হচ্ছে তার সবগুলোই বিদেশি কোম্পানির তৈরি।একটি নির্দিষ্ট ফির বিপরীতে ব্যাংকগুলো এই কার্ড সেবা দিয়ে আসছে।এতে এক ব্যাংকের ইস্যু করা কার্ড অন্য ব্যাংকের এটিএম বুথে লেনদেন করতে বাড়তি খরচ দিতে হয়।এছাড়া বছর শেষে গ্রাহককে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত কার্ড ব্যবহারের ফি দিতে হয় ব্যাংকগুলোকে। তার সঙ্গে রয়েছে ১৫ শতাংশ ভ্যাট।

গ্রাহকদের কাছ থেকে ব্যাংকের নেওয়া ফির একটি অংশ পায় কার্ড মালিক বিদেশি মালিকানা প্রতিষ্ঠানগুলো।এতে প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে বিদেশি মুদ্রা চলে যায়।

কিন্তু ‘টাকা-পে’ কার্ড পরিচালিত হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশ (এনপিএসবি) এর মাধ্যমে। ফলে এই কার্ড যে কোনো এটিএম বুথে সহজে লেনদেন করা যাবে।সেক্ষেত্রে দ্রুত ও নির্বিঘ্নে লেনদেন করা যাবে।

ডেবিট কার্ড দিয়ে শুরু করে পরবর্তীতে ক্রেডিট ও আন্তর্জাতিক কার্ড তৈরির লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ডিসেম্বরে ‘টাকা-পে’ কার্ডের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে ডুয়ল কারেন্সি বা দ্বৈত মুদ্রা ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হতে যাচ্ছে।

তখন বাংলাদেশিরা ভারতে গেলে ‘টাকা-পে’ কার্ডের মাধ্যমে ভারতীয় মুদ্রা রুপিও ব্যবহার করতে পারবেন।আলাদাভাবে বিদেশি মুদ্রা,ডলার বা রুপি বহনের প্রয়োজন পড়বে না।

এসব সুবিধার কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজকে যে ন্যাশনাল কার্ড স্কিম, টাকা পে এর যে পদক্ষেপ,এটা আমি মনে করি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

“আমাদের পরনির্ভরশীলতা একটু কমে যাবে, কারণ আমরা যে সমস্ত কার্ড ব্যবহার করে থাকি,এগুলো বিদেশি সংস্থার সাথে সম্পর্কিত থাকে,এবং আমাদের বৈদেশিক মুদ্রাও পে করতে হয়। এখন আর সেটা করা লাগবে না,আমাদের বিদেশি নির্ভরতাও হ্রাস পাবে।”

তিনি বলেন,“আমি আশা করব,এর সাথে এর সুরক্ষার ব্যবস্থাটাও যাতে সুদৃঢ় হয়,সেই ব্যবস্থাটা বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখতে হবে।যাতে করে একটা সুরক্ষা থাকে।ফায়ারওয়ালটাও যাতে তৈরা করা হয়,সেদিকে দৃষ্টি দেবেন।”

শেখ হাসিনা বলেন,”লেনদেনের ওপর যেহেতু বাংলাদেশেরই সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে,আর আজকে আমরা দেখতে পাচ্ছি বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে প্রায়ই বৈরিতা দেখা দেয়,সেই ক্ষেত্রে আর্থিক ব্যবস্থাটা যাতে সচল থাকে,সে জন্যই এই ব্যবস্থাটা। এর সাথে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে লেনদেনটা যেন আমরা নিজেদের অর্থায়নে করতে পারি।সেই পদক্ষেপটাও আমরা নিচ্ছি।”

সামাজি সুরক্ষার সরকারি ভাতার যে টাকা এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেওয়া হয়,তা ইচ্ছা করলে টাকা-পে কার্ডের মাধ্যমেও নেওয়া যাবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।তিনি বলেন,এই কার্ডের সুবিধার কথা মানুষকে জানাতে হবে।

“যারা বিদেশে কাজ করেন,তারা যে রেমিটেন্স পাঠায়, সেটা কীভাবে টাকা পে এর মাধ্যমে করা যায়,সেই সুবিধাটা কীভাবে দেওয়া যায়,সেটা দেখতে হবে।কী সুবিধা তাদের দেওয়া যায় সেটা দেখতে হবে।দেশটা যখন ক্যাশলেস সোসাইটি হবে,তখন দুর্নীতিও অনেক হ্রাস পাবে।উন্নয়নও বৃদ্ধি পাবে,রাজস্ব আদায় সহজ হবে।”

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রথম লেনদেন করা হয় রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী ব্যাংক,সিটি ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

আরও খবর

Sponsered content