জাতীয়

দেশের ১৪৮ উপজেলায় ৫৫০টি মুজিব কেল্লা নির্মাণ ও সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে

  প্রতিনিধি ২৬ মে ২০২৩ , ১০:১৩:৪৮ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা থেকে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষকে রক্ষা করতে দেশের ১৪৮ উপজেলায় ৫৫০টি মুজিব কেল্লা নির্মাণ ও সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে উপকূল অঞ্চলের দুর্গত জনগণ ও প্রাণিসম্পদকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার কারণে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কমিয়ে আনা যাবে।এছাড়া বছরের অন্য সময় জনসাধারণের খেলার মাঠ, সামাজিক অনুষ্ঠান ও হাটবাজার হিসেবেও এসব স্থান ব্যবহার করা যাবে।

গতকাল রাজধানীর পর্যটন করপোরেশনের প্রধান কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণবিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান এসব কথা জানান।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা থেকে মানুষের জানমাল রক্ষায় মাটির উঁচু ঢিবি তৈরি করা হয়। সে সময় এগুলো মুজিব কেল্লা নামে পরিচিতি পায়।পরবর্তী সময়ে এসব মুজিব কেল্লা আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয় শেখ হাসিনা সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় দেশজুড়ে বিদ্যমান মুজিব কেল্লাগুলো সংস্কার ও নতুন কেল্লা নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়।মুজিব কেল্লা মূলত মাটির উঁচু ঢিবি।বিশাল এলাকায় মাটি ও বালু ফেলে এ কেল্লা নির্মাণ করা হয়।এরপর এর চারপাশে নদীর পাড় বাঁধানোর মতো করে সিমেন্টের ব্লক দিয়ে বাঁধাই করা হয়। কয়েক হাজার বর্গমিটার আয়তনের এসব ঢিবির ওপর তৈরি করা হচ্ছে আধুনিক আশ্রয়কেন্দ্র।যেন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় স্থানীয় মানুষ এসব কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে পারেন। পাশাপাশি থাকছে গবাদি পশু রাখার জন্য আলাদা স্থানও। এমনভাবে এসব কেল্লা নির্মাণ ও সংস্কার করা হচ্ছে যেন, অন্যান্য স্বাভাবিক সময়ে সেখানে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়।প্রয়োজনে আশ্রয়কেন্দ্রের সামনের খোলা অংশকে খেলার মাঠ বা হাটবাজার হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে।

সেমিনারে প্রতিমন্ত্রী বলেন,জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ বাংলাদেশ।জলবায়ুর ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে সরকার ১০০ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা (ডেল্টা প্ল্যান)-২১০০ প্রণয়ন করেছে। ২১০০ সাল নাগাদ স্বল্প,মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাগুলোর সমন্বয়ে যোগসূত্র সৃষ্টি করবে এ ডেল্টা প্ল্যান।এভাবে দুর্যোগে ঝুঁকি হ্রাসে জীবন ও সম্পদের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে দুর্যোগ সহনীয়,টেকসই ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকার পরিকল্পিতভাবে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন বলেন,বঙ্গবন্ধু ১৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে সিপিপির যাত্রা করেছিলেন। আগাম সতর্কসংকেত প্রচার এবং সন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষের জানমাল রক্ষায় সিপিপি ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক সংখ্যা ৭৬ হাজারে উন্নীত হয়েছে।উপকূলে পাঁচ হাজারের বেশি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে।জরুরি পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহূত হয়।দুর্যোগে প্রাণহানির তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে সচিব বলেন,১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ১০ লক্ষাধিক মানুষ প্রাণ হারান। সাম্প্রতিককালে একই মাত্রার ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহানি একক সংখ্যায় নেমে এসেছে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল।ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস প্রফেসর ড. আইনুন নিশাত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

আরও খবর

Sponsered content